গৌরীপুরের শহিদুল্লাহ বিষমুক্ত রঙিন ফুলকপি-বাঁধাকপি ও ফুলচাষে মডেল কৃষক

0
গৌরীপুরের শহিদুল্লাহ বিষমুক্ত রঙিন ফুলকপি-বাঁধাকপি ও ফুলচাষে মডেল কৃষক

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মো: মাহফুজুর রহমান, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : বিষমুক্ত রঙিন ফুলকপি-বাঁধাকপি আর ব্যতিক্রমী ফুল উৎপাদন করেছেন মডেল কৃষক মো. শহিদুল্লাহ (৪৮)। ধানের চেয়ে সবজি উৎপাদনে লাভ ১০গুণ। উৎপাদন খরচ এক হলেও রঙিন সবজিতে লাভ হয় দ্বিগুণ। স্বল্প সময়ে অধিন ফলন ও পরিত্যক্ত জমির শতভাগ ব্যবহার, একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি। তার ফসলি জমিতে দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে আগ্রহী কৃষকরাও ছুটে আসছেন।

তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের আবুল হাসিমের পুত্র। গবেষণায় বলছে, রঙিন সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। ফলে রঙিন ফসলের রয়েছে বাজারে ব্যাপক চাহিদা। মূল্যও দ্বিগুণ। কৃষক মো. শহিদুল্লাহ জানান, এ বছর ২৫শতাংশ জমিতে সাদা রঙের ফুলকপি, ২০শতাংশ জমিতে রঙিন ফুলকপি ও ১৫ শতাংশ জমিতে রঙিন বাঁধাকপি চাষ করেছেন। সাদা রঙের ফুলকপি ও রঙিন ফুলকপি’র উৎপাদন খরচ একই। কিন্তু সাদা রঙের ফুলকপি ৩০-৪০টাকা দরে বিক্রি করছেন আর রঙিন ফুলকপি বিক্রি হচ্ছেন ৬০টাকা থেকে ৮০টাকা ধরে।

রঙিন ফসলে দ্বিগুণ লাভ। এ জমিতে ধান উৎপাদন করলে যে লাভ হতো শাকসবজি তার চেয়ে ১০গুণ বেশি লাভ। তিনি আরও জানান, কোনো ফসলেই ব্যবহার করেন না বিষাক্ত বিষ। সার ব্যবহারেও তিনি সাশ্রয়ী। রয়েছে জৈব সার আর কুচো সার উৎপাদনের নিজস্ব কারখানাও। এ উপজেলায় এবার লালিমা বা লাল বাঁধাকপি চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। গত ২বছর যাবত তিনি রঙিন বাঁধাকপি চাষ করছেন। সম খরচে অধিক লাভের কারণে প্রতিবেশী কৃষকদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

কৃষক শহিদুল্লাহ নিয়মিতভাবে আলু, শশা, ডাটা, লাউ, ঢেড়শ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ফুলকপি, বেগুন, মরিচ, টমেটো, শিম, ক্যাপসিকাম, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপিসহ মৌসুমী শাকসবজি নিয়মিত চাষ করেন। জমির অধিক ব্যবহারের জন্য আমন ধান কেটে ফাঁকা সময়ে চাষ করেছেন সরিষাও। এবার সরিষা উত্তোলন করে সেই জমিতে বোরো ধানের চারা রোপনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফাঁকা সময়ে করেছেন ফুলকপি-বাঁধাকপি। বাড়ির চারপাশের এক সময় বাইঞ্জা (বন্ধা জমি) খ্যাত জমিতে ফুল আর ফল চাষেও দ্বিগুণ লাভ করছেন।

১০শতাংশ জমিতে ফুল চাষ করে প্রায় ৭০হাজার টাকা লাভ পেয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর বিষ কখনও ব্যবহার করি না। জৈব বালাইনাশক ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার করলে নিরাপদ খাদ্য উৎপদান করে এতে জীবনও নিরাপদ থাকে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, মো. শহিদুল্লাহ হলেন নুতন ব্যারাইটিজ কৃষক। নতুন কোনো ফসলের খবর পেলেই তিনি সেটা চাষ করে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলায় প্রথম লাল বাঁধা কপি, রঙিন ফুলকপি ও ফুল চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, রঙিন ধরণের ধান-শাকসবজির প্রতি কৃষক শহিদুল্লাহ’র আগ্রহ অনেক বেশি। সে জন্য তিনিও প্রথমদিকে করলে অধিক লাভবান হন। আমরা চাই সব কৃষকের মাঝে তথ্য-প্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি আরো জানান, ভিটামিন সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটেনেয়ড সমৃদ্ধ হচ্ছে রঙিন সবজি। এই সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে রক্তচাপ কমে, হজমশক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায়, বাঁধাকপির জুস স্তন ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধি কমায়। বয়োঃসন্ধির সময় নিয়মিত বাঁধাকপির রস খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭২ শতাংশ কমে যায়।

এটি প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধেও বেশ কার্যকরী। জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট জার্নালের এক গবেষণা অনুসারে, বাঁধাকপিতে থাকা আইসোথিয়োকানেটস ও ক্যারোটিনয়েডস উপাদান ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রঙিন প্রত্যেকটি শাক-সবজিতে কম-বেশি হলেও এ ধরণের খাদ্যগুণ রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here