বিএনপির সমাবেশে ড্রোন দিয়ে মনিটরিং সরকারের তীব্র সমালোচনায় : মির্জা ফখরুল

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ পীর আবদুল মান্নান: দলীয় কর্মসূচিতে ড্রোন দিয়ে মনিটর দেখে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছে তাদের মনিটর করতে সরকার ইরান থেকে ড্রোন আমদানি করেছে। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়াবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলা জেলায় পুলিশের গুলিতে নুরে আলম ও আব্দুর রহিম নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ নয়া পল্টন আসেপাশেও ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে, গতকাল রাত থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও পথে পথে বাধারও অভিযোগও করেন মহাসচিব। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও নেতা কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেয়।

এদিকে সমাবেশেকে আশেপাশে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ও জলকামান, রায়ট কারও দেখা গেছে। সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, যখন ড্রোনের দিকে আপনারা তাকাচ্ছিলেন তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম ড্রোনের সাথে জড়িতদের, যে এটা তো বেআইনী। তারা আমাকে জানালো, ৫ পাউন্ডের নিচে ড্রোন চালাতে অনুমতি লাগে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কয়েকদিন আগে কয়েকটা খবর আমার চোখে পড়েছে। সরকার ইরান থেকে ২১ টা ড্রোন আমদানি করেছে এবং তারা বলেছে ড্রোন ভাষানচরে পরীক্ষা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন ড্রোন চালানো দেখেছেন ড্রোন কিভাবে চলে এবং বলেছেন সেটা তারা ভাসান চরের রোহিঙ্গাদের মনিটরিং করবে। আসলে ড্রোন নিয়ে এসেছে মানুষকে মনিটর করার জন্য। যারা গণতন্ত্র চায় তাদের মনিটর করার জন্য। ড্রোনের নাম শুনলে আমরা খুব ভয় পাই। কেন ভয় পাই, আমরা দেখি ড্রোন দিয়ে কিভাবে অন্য দেশে গিয়ে বিভিন্ন নেতাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।

আমরা দেখি গণতন্ত্র জন্য যারা লড়াই করছে তাদের হত্যা করা হচ্ছে।আওয়ামী অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি তাদের সাথে একমত যারা আওয়ামী লীগকে ফোর টোয়েন্টি পার্টি। আমি শুধু তাদের সাথে এতোটুকু যোগ করতে চাই আওয়ামী লীগ প্রতারকের দল, এই সরকার প্রতারক’।বিএনপি মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা বলেছে ১০ টাকা কেজি চাল দিব, বিনামূল্যে সার দিব, ঘরে ঘরে চাকরি দিব, এখন সব মিথ্যা।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে, বাক স্বাধীনতার কেড়ে নিয়েছে, আজ সাংবাদিকরা লেখতে পারছেন না, দেখাতে পারছেন না, বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে, সংবিধান কে ধ্বংস করে দিয়েছে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বাতিল করে দিয়েছে, পুলিশ আজ আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।জ্বালানি সংকট নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ানোর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গরীব মানুষ, তাদের ব্যয় বেড়ে গেছে, আওয়ামী লীগ সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন না করে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজের লোক দিয়ে টাকা লুটপাট করেছে।

এ সরকারকে হঠাতে ছাত্র, নবীন,তরুণ, যুবকদের আজ জেগে উঠার আহবান তিনি জানিয়ে বলেন, এদেশকে স্বাধীন করতে হবে, এ লড়াইয়ে আমাদের ঝাপিয়ে পড়তে হবে, রাজপথ দখল করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।এছাড়াও আগামী ২২ তারিখ থেকে মহানগর-উপজেলা-গ্রাম পযার্য়ে সমাবেশের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, পৃথিবীর কোথায় একলাফে এতো জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধির নজির নেই, ৮ বছরের বিপিসি এ পর্যন্ত আয় করেছে ৫০ হাজার কোটি টাকা, আর লোকসান করেছে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে ভর্তুকি দিয়ে দেশের রিজার্ভ খেয়ে ফেলছে, দেশের অবস্থা আরো বেহাল হতে বাধ্য।তিনি বলেন, পাচারের টাকা সরকারের দেশে আনতে চায় না, সুইজারল্যান্ডেরের সুইস ব্যাংকের কাছে টাকা পাচারের তথ্য চায় না, কারণ এ সরকার জানে পাচারকারীরা সব আওয়ামী লীগের লোক।তিনি আরো বলেন, নাম বলে দাম বাড়াতে চাই না, একজন বলেছেন বিএনপির বিদায়ের সময় হয়েছে।

আপনাদের অনেক সোর্স আছে। প্রকৃত তথ্য নিয়ে দেখেন আজকে ঢাকা শহরে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে। এটা জনগণের ভাষা। বিএনপি নয় বর্তমান অবৈধ স্বৈরাচারী সরকারের বিদায় হবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশটাকে আওয়ামী দেউলিয়া করে দিয়েছে, দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, দেশের টাকা পাচার করে ফেলেছে।সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশের গণভবন ও বঙ্গভবন দখল করে নিতে হবে, এই দুইটি ভবন দখল করে নিলেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র পূন:দ্ধার হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, এজেড এম জাহিদ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আফরোজা রিতা, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালের প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রণকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here