প্রিজনভ্যানের সকল জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার টার্গেট ছিলো: আইমানের

0
প্রিজনভ্যানের সকল জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার টাগেট ছিলো আইমান

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ এ বছর চমকে দেওয়ার মত একটি জিনিস পরিলক্ষিত হয়েছে। আসামি ছিনতাই। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষ রবিবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এলাকায় পুলিশের চোখে পেপার স্প্রে ছিটিয়ে ছিনতাই করা হয় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে। যদিও এর আগে ২০১৪ সালে এভাবে জঙ্গি ছিনতাইয়ের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়েছিল।

কিন্তু, এবারের অপারেশন সফল। আর এর পেছনে রয়েছে একটি চাঞ্চল্যকর কারণ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হকের পরিকল্পনায় এই অপারেশনের নীলনকশা আঁকা হয় প্রায় ৯০ দিন ধরে। তাও আবার কারান্তরীণ এবং পলাতক একাধিক দন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতাদের সমন্বয়ে। আর এই ঘটনা বাস্তবায়ন করেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলাম এর সামরিক শাখার প্রধান মশিউর রহমান ওরফে আইমান।

আদালতপাড়া থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।যেটির তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। মামলাটির এজাহার থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।২০১৪ সালে মেজর জিয়ারই পরিকল্পনায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রথম জঙ্গি ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। সেটি অসফল হওয়ায় এবার ছক কাটা হয় আরও নিপুণভাবে। এবার আসামী ছিনতাইয়ে কাজ করেছিল  কয়েকটি টিম। যাতে একটি ব্যর্থ হলে অন্য টিম সফল হয়।

এককথায় ব্যাকআপ প্ল্যান (বিকল্প রাস্তা বা পরিকল্পনা)। সাধারণত, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান বা যুদ্ধকালীন সময়ে এই ধরণের পরিকল্পনা সাজিয়ে রাখা হয়ে থাকে। তবে, ২০ নভেম্বরের ঘটনায় সেই ব্যাকআপ প্ল্যান কাজে লাগাতে হয়নি আইমানকে। পেপার স্প্রে ছিটিয়ে ঘটনার আকষ্মিকতাকে কাজে লাগিয়েই যা দরকার ছিল তা তিনি ও তার দলের সদস্যরা হাসিল করেছেন।

আইমানের পরিচয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আসকারি (সামরিক) শাখার বর্তমান প্রধান এই আয়মান। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে। তিনি ২০১৬ সালে সরকারি কর্ম কমিশনের রংপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায়ই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এর কিছুদিন পরে এই কারণে ঘরও ছাড়েন।যেভাবে মিলল এই তথ্য মূলত, ছিনতাই পরিচালকদের টার্গেট ছিল ওইদিন প্রিজনভ্যানে যে কয়েক জন জঙ্গি ছিল তাদের সবাইকে ছিনিয়ে নেওয়া।রবিবার (২০ নভেম্বর) সিএমএম আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল দুটি মোটরসাইকেল। ফটকের কাছে পৌঁছাতেই হাতকড়া পরা চার জঙ্গি পুলিশ সদস্যদের মারধর শুরু করে। এ সময় ব্যবহার করা হয় পিপার স্প্রে। একপর্যায়ে দুই জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

তারা হলেন জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব। তবে, পালাতে ব্যর্থ হয় দুই জঙ্গি হল মো. আরাফাত ও মো. সবুর।এই আরাফাত আর সবুরই জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য দিয়েছে বলে ব্রেকিং নিউজকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর এক কর্মকর্তা।এ বছরের যত আসামি ছিনতাইঃবিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যমতে, গেল ১৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট পুলিশ ফাড়িতে চালিয়ে দুই আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এসময় এ সময় পুলিশের গুলিতে নাজমা আক্তার (৩০) নামে এক নারী নিহত হন আর তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হন।২২ অক্টোবর কক্সবাজারের উখিয়া হতে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের প্রিজনভ্যান থেকে পালিয়েছে মুজিবুল আলম নামের এক রোহিঙ্গা আসামি। ১৬ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা কোর্ট চত্বর থেকে হাতকড়া ভেঙে ডাকাতি মামলার এক আসামি পালিয়েছে। ৩ অক্টোবর ফরিদপুরের নগরকান্দা থানা হাজত থেকে ফরিদপুর কোর্টে নেওয়ার সময় পুলিশের গাড়ি থেকে হাতকড়াসহ পালিয়েছে তোরাপ শেখ নামের এক আসামি

।২৯ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন প্রকাশ বয়াতি নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তারের পর হ্যান্ডকাফসহ তিনি পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যায়। একই দিন রায় শুনে মৌলভীবাজার যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের কাঠগড়া থেকে পালিয়ে গেছেন বাবলু মিয়া নামের এক সাজাপ্রাপ্ত আসামি।৯ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুই পুলিশকে গুলিবিদ্ধ করে আসামি ছিনিয়ে নেয় মাদক কারবারিরা। ২৮ জুন বরগুনা সদর উপজেলায় হাতকড়া লাগানো অবস্থায় ডিবি পুলিশের হাত থেকে শাহিন নামের এক মাদক কারবারি পালিয়ে গেছে।

১৫ মে রাজশাহীর চারঘাট থানা থেকে গ্রেপ্তার নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি হেলাল আহম্মেদ রাজশাহী আদালতে নেওয়ার পথে পুলিশের গাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ১ মে ফরিদপুরের সালথায় পুলিশের ওপর হামলা মামলায় গ্রেফতার আসামি তারা মিয়াকে দুই পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ২৯ এপ্রিল পুরান ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে কলেজছাত্র মুনসের আলী মুন্না হত্যা মামলার ফাঁসির আসামি বাদশা মিয়া এক পুলিশ কনস্টেবলের হাত থেকে ছুটে পালিয়ে যায়।

২৩ মার্চ হবিগঞ্জের মাধবপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও দুই সিপাহিকে পিটিয়ে হ্যান্ডকাফসহ আটক আসামিকে ছিনিয়ে নেয় মাদক কারবারিরা।২১ মার্চ বাগেরহাটের কচুয়া থানার এসআইকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় জুয়েল নামের হত্যা মামলার এক আসামি। ১৩ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সেনবাগে পুলিশের কাছ থেকে হ্যান্ডকাফসহ মনির হোসেন নামের ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, একজন আসামি বহনের ক্ষেত্রে কতজন রক্ষী দায়িত্ব পালন করবে, অ্যাটাক হলে আগাম প্রস্তুতি কেমন হবে ও আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোনো কিছুই দেখা যায়নি সেদিনের ঘটনায় (আদালত এলাকা থেকে জঙ্গি ছিনতাই)। এটা খুবই চিন্তার বিষয়। কেননা দেশে আবারও জঙ্গিবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠানোর পায়তারা চলছে। এমতাবস্থায়, কোনো অপরাধ ঘটার পর অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বহুদূর এগিয়ে গেলেও অপরাধ দমনের আগাম প্রস্তুতিতে তেমন সক্ষমতা অর্জন হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here