শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে চলেছে বিদ্যা কানন গণগ্রন্থাগার

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জিয়াউর রহমান জিয়া (মহেশপুর) ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কয়েক বন্ধুর নিয়মিত আড্ডা ছিল মলচত্তরে। একদিন বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত হয় এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করতে হবে। প্রথম দিকে এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ডিকশনারী দেওয়া শুরু হয়।

কিছুদিন পরে তারা চিন্তা করলো ডিকশনারী দিলে একজন মাত্র শিক্ষার্থী পড়তে পারে। কিন্তু এমন কিছু করতে হবে যাতে এলাকার সকল শিক্ষার্থী উপকৃত হতে পারে। পরে একটি লাইব্রেরী করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৭ সালের কথা শুরু হয় স্বপ্নের বাস্তবায়নে কাজ। লাইব্রেরীর নামকরণ করা হয় বিদ্যা কানন গণগ্রন্থাগার। বর্তমানে বিদ্যা কানন গণগ্রন্থাগার নামে পাকা দুই কক্ষ বিশিষ্ট লাইব্রেরীটি ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী একসাথে বসে পড়তে পারে। প্রতিদিন এলাকার শত শত শিক্ষার্থী পাঠ্য বইসহ সহায়ক নানা ধরনের বই পড়তে এখানে ছুটে আসে।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাঠকের পদচারণায় মুখরিত থাকে লাইব্রেরী চত্তর। বলছিলাম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম বাথানগাছি গ্রামে স্থাপিত লাইব্রেরীর গল্প । শুধু বই নয় এখানের দুর্বল শিক্ষার্থীদের রুটিন করে গণিত ও ইংরেজী পড়ানো হয়। এছাড়া এই লাইব্রেরী থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল ও অনলাইন ভিত্তিক যে কোন কাজে সহযোগীতা করা হয় এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য।  কথা হয় লাইব্রেরী সাধারন সম্পাদক জিএম রাকিবুল ইসলামের সাথে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে অধ্যায়ন শেষ করে বর্তমানে নোয়াখালীবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছেন।

জিএম রাকিবুল ইসলাম জানান, আমি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে যখন পড়তাম, তখন থেকে ভাবতাম গ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। আর গ্রামের মানুষকে এগিয়ে নিতে হলে জ্ঞার্ণাজনের বিকল্প নেই। তখন বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিই লাইব্রেরী করার। প্রথম দিকে গ্রামের মোড়ে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরে বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা বই নিয়ে লাইব্রেরীর যাত্রা শুরু করা হয়। সেখান থেকে এখন লাইব্রেরীর নিজস্ব জমিতে পাকা ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালে দুইটি রুমের কাজ শেষ করে সেখানে লাইব্রেরীর কাজ চলছে। বর্তমানে আমাদের স্বপ্নের লাইব্রেরীতে পায় দুই হাজার বই রয়েছে।

তিনি আরো জানান, আরো কিছু জমি ও দানশীলদের আর্থিক সহযোগীতা পেলে শিক্ষার্থীদের জন্য বই সংখ্যা বাড়ানোসহ একটি ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা হবে। যেখান থেকে এলাকার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হবে। লাইব্রেরীরর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ্যাড. মোঃ আমিন উদ্দীন মিন্টু জানান, প্রথমে আমরা বন্ধু এবং এলাকার শিক্ষানুরাগীদের দেওয়া অল্প কিছু বই দিয়ে লাইব্রেরীর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে লাইব্রেরীতে প্রায় দুই হাজার বই রয়েছে। প্রতিদিন এলাকার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের শিক্ষানুরাগীরা এখানে বই পড়তে আসে। এখানে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পালা করে গণিত ও ইংরেজী পড়ানো হয়।

তিনি আরো বলেন, বেকার নারী পুরুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। বেকারদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে নিয়মিত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনাও রয়েছে। লাইব্রেরীতে আসা এসএসসি পরীক্ষার্থী হাবিবুর রহমান জিহাদ জানায়, এখানে ক্লাসের পাঠ্য বইসহ উপন্যাস, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক বই,ধর্মীয় বই এবং দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যায়। যা পড়তে প্রতিদিনই বিকালে লাইব্রেরীতে আসি। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিদ বিশ^াস জানায়, আমরা বিকালে বা সন্ধ্যায় লাইব্রেরীতে পড়তে আসি।

কঠিন বিষয়গুলো বড় ভাইরা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়। আমার সাথে আরো অনেকেই পড়তে আসে।  একই এলাকার বেলেমাঠ এলাকার জহুরুল ইসলাম জানান, বিদ্যা কানন গণগ্রন্থাগারটি এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে দারুন ভূমিকা রাখছে। আমি নিজেও সময় পেলে পত্রিকা ও বই পড়তে যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাশ^তী শীল জানান, লাইব্রেরীটি শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখছে জেনেছি কিন্তু এখনো যাওয়া হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে লাইব্রেরীটি পরিদর্শন করবো বলে যোগ করেন এই উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here