প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ দুবাইয়ে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ জিসান আহমেদ মন্টিকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে দেশটির আদালত। গত বৃহস্পতিবার দেশটির স্থানীয় আদালত তাকে স্থায়ী জামিন দেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের প্রভাবশালী এক সদস্য তার জামিনদার ছিলেন। জামিনে মুক্ত হলেও আদালতের আদেশ অনুযায়ী আপাতত দুবাই ত্যাগ করতে পারবেন না জিসান। গত ১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়ার ১০ দিনের মাথায় মুক্তি মিলল তার।
এদিকে এ জামিনপ্রাপ্তিতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ আপাতত ভেস্তে গেছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুবাইয়ের আদালতে ইন্টারপোলের দাগি আসামি জিসানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। অন্যদিকে এই আসামি জিসান দুবাই শহরে প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তাই তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
সাম্প্রতিক অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো কারবারের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে জিসান সম্পর্কে একদিকে যখন একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে থাকে, অন্যদিকে তখন এ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে দুবাইয়ে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়। জিসানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন তখন বলেছিলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে আনঅফিসিয়ালি তিনি জিসানের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে পেরেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের জানান, জিসানকে ফিরিয়ে আনতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। তাকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে এ বিষয়টি। তবে বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করতে চায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখা এবং পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা এ ব্যাপারে কাগজপত্র তৈরির কাজ শুরু করেছে। আগামী ১৫ অক্টোবর চিলিতে ইন্টারপোলের সম্মেলন হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের এক অতিরিক্ত আইজির নেতৃতে একটি প্রতিনিধি দল ওই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। সম্মেলনের ফাঁকে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার কর্মকর্তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের এনসিবি শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। পাসপোর্টসূত্রে ভারতের নাগরিক হলেও ওই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের জুন মাসে। এখন জিসান উত্তর আমেরিকার একটি দ্বীপরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে দুবাইয়ে আছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বড় অংকের বিনিয়োগকারীরা সহজেই দ্বীপদেশটির নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ জিসান হিসেবে যাকে দাবি করেছিলেন, দুবাইয়ের আদালতের চোখে তিনি সেই ব্যক্তি নন। জিসানের আইনজীবীর দাখিলকৃত নথিপত্র অনুযায়ী, তিনি দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ১৪ বছর ধরে সে দেশে ব্যবসা করছেন। তিনি নিয়মিত সরকারকে কর দিচ্ছেন এবং দুবাইয়ে কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
এসব বিষয় আমলে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালত। তাই ইন্টারপোলের মাধ্যমে জিসান গ্রেপ্তার হলেও সহজেই জামিন মিলেছে তার। জিসান ইন্টারপোলের দাগি আসামি। বাংলাদেশে পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাকে গ্রেফতারের কয়েক বছর আগে ইন্টাপোলের সহযোগিতা চেয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ।