না’গঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে ভয়াবহ বোমা হামলার ২০ বছর পূর্তি আজ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে ভয়াবহ বোমা হামলার ২০ বছর পূর্তি আজ। ২০০১ সালের ১৬ জুন নগরের চাষাড়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে নৃশংস বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মী ও নারীসহ ২০ জন নিহত হন।

বোমার আঘাতে সেদিন প্রাণ হারান-শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, দুই সহোদর সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের জিএস আকতার হোসেন ও সঙ্গীত শিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু, সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, আবু হানিফ, এনায়েতউল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাত এক মহিলা। নিহত মহিলার পরিচয় পেতে তেমন কোনও চেষ্টা করেনি প্রশাসন। হামলায় শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। তার ব্যক্তিগত সচিব চন্দন শীল, যুবলীগকর্মী রতন দাস দুই পা হারিয়ে চিরতরে বরণ করেছেন পঙ্গুত্ব।

ঘটনার ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ওই হামলার বিচার হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দিন কাটাচ্ছে অর্থ সংকটে। ২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে শক্তিশালী বোমা হামলায় আহত অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে। বোমা হামলার ঘটনার পরদিনই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা করেন।

চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। ওই সময় বোমা হামলায় নিহত ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতা হালিমা বেগমের ছেলে কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান ও তার দুই ভাইসহ অনেককে আসামি করে মামলা করেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালে বিস্ফোরক মামলায় ২৭ জনকে ও ২০১৪ সালে হত্যা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ২২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দখিল করে। এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন।

আসামিদের মধ্যে ব্রিটিশ হাই কমিশনারের ওপর বোমা হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। কারাগারে রয়েছে আদালতে একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল ও আব্দুস সালাম পিন্টু। ভারতে গ্রেফতার রয়েছে হরকাতুল জিহাদ জঙ্গি দুই ভাই আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। ১০২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ছাড়া কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি। এতে সংশয় ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বিচার নিয়ে।

দীর্ঘ সময়ে ২০ হত্যা মামলার বিচার না পাওয়ায় শংকিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ নিহতের স্বজনরা। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নানা আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি করেন তারা। বোমা হামলার ঘটনার দায়ের করা দু’টি মামলা এখন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

দীর্ঘ একযুগ পর মামলার চার্জশিট
মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্তাকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর নারায়ণগঞ্জ অফিসের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এহসান উদ্দীন চৌধুরী জানান, ঘটনার দীর্ঘ ১২ বছর পর দু’টি মামলায় ২০১৩ সালের ২ মে ৬ জনকে অভিযুক্ত ও ৩১ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে দু’টি মামলার প্রত্যেকটির ৯৪৭ পাতার চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে অভিযুক্ত ৬ জন হলেন নারায়ণগঞ্জে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত যুবদল ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডের ছোট ভাই শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, ওবায়দুল্লাহ রহমান, ভারতের দিল্লি কারাগারে আটক আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু; যিনি একই সঙ্গে নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। অভিযুক্তদের মধ্যে জামিনে থাকা কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু ও ওবায়দুল্লাহ রহমান ছাড়া অন্যরা কারাবন্দি।

তিনি আরও জানান, ৮জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল মামলায়। তার মধ্যে মমিনউল্লাহ ডেডিভ ও কাজল নামের দুজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। এ কারণে ৬জনকেই মূল অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নান ও জুয়েল কারাবন্দি। ওবায়দুল্লাহ ও শওকত হাশেম জামিনে। আর মোরসালিন ও মুত্তাকিম ভারতের জেলে।

ভালো নেই নিহত-আহতদের পরিবারের সদস্যরা
২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন চন্দন শীল। ঘাতকের বোমা তার দুটি পা চিরকালের জন্য কেড়ে নিলেও নেভাতে পারেনি জীবন প্রদীপ।

চন্দন শীল বলেন,২০০১ সালের বোমা হামলার ঘটনার পর অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। টাকার অভাবে জার্মানিতে পুরোপুরি চিকিৎসা করাতে পারিনি। যতটুকু হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন এমপি শামীম ওসমানের বদৌলতে। জার্মানি থেকে ফিরে ভারতে চিকিৎসারত অবস্থায় আর্থিক সংকটে পড়েছি। এমনও দিন গেছে তিন বেলার জায়গায় দুই বেলা খেয়েছি।

নারায়ণগঞ্জে বোমা হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন রতন কুমার দাস। কিন্তু পা দুটোকে সারাজীবনের জন্য হারাতে হয়েছে। হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করেনওই ঘটনায় নিহত দেলোয়ার হোসেন ভাসানীর ছেলে ইতমিয়াজ হোসেন আরান জানান, বাবার রেখে গেছেন ৫ লাখ টাকা। একজন ব্যবসায়ীর কাছে ওই বিনিয়োগ করেছি। সেখান থেকে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা পাই। আর নানাবাড়ি থেকে সহযোগিতা নিয়েই সংসার চালাই। লেখাপড়াও চলছে।

নিহত নজরুল ইসলাম বাচ্চুর স্ত্রী হামিদা বেগম জানান, দুই মেয়ের লেখাপড়ায় অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। টিউশনি করে, সরকারি তোলারাম কলেজে গানের শিক্ষক ও নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে গানের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেই সংসার চালাই। এভাবে দুই মেয়েকে বড় করেছি। ১৬ জুন বোমা হামলায় ওই সময়ে ফতুল্লা থানা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পলি বেগম নিহত হন। তিন সন্তানদের মধ্যে এক ছেলে আর এক মেয়ে এলাকাতে একটি দর্জি দোকান দিয়ে সংসারের হাল টানছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here