মতলব উত্তরে ড্রাগন ফল চাষে নাসির ভান্ডারীর সাফল্য ॥ এখন পথ দেখাচ্ছেন অন্যদের

0
মতলব উত্তরে ড্রাগন ফল চাষে নাসির ভান্ডারীর সাফল্য ॥ এখন পথ দেখাচ্ছেন অন্যদের

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাড়ির আঙিনায় চারদিকে সবুজের সমারোহ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফল গাছ। সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে গোলাপি,লাল আর সবুজ ফল। ড্রাগন ফল মানেই ভিন্ন আমেজের রঙ্গিন রসালু ফল। স্বপ্নীল পরিপাটি এ বাগানটি গড়ে তুলেছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুরের নাসির ভান্ডারী। নিজ আঙিনায় বিদেশি ফলের চাষ করে সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী,ইউটিউব ও সংবাদ মাধ্যম দেখে শখের বশে চাষ করছেন ড্রাগন ফলের চাষ।

এখানেই শেষ নয়, নাসির ভান্ডারীর ড্রাগন পথ দেখাচ্ছে অন্যদের। তার দেখাদেখি ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন উপজেলার অনেকে। আশপাশের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই নতুন জাতের ড্রাগন। ড্রাগনের পাশাপাশি তিনি চাষ করেছেন উন্নত সৌদি আরবের খেজুর গাছের বাগান বিদেশী নারিকেল গাছও। উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখছেন আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন ভান্ডারী। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামের ড্রাগন ফল চাষি নাসির ভান্ডারী।

ড্রাগন ফলের গুনাগুন ও অর্থনৈতিক সফলতার কথা চিন্তা করে সাড়ে ৫ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন। ১০০০ পিলার-এ ৫০০০ ড্রাগনের চারা লাগিয়ে তার যাত্রা শুরু। চারা রোপনের এক বছর পর গত বছর ফল বিক্রি হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে এবার তার এ বছর ১ একর জমিতে ড্রাগন ফল ২৫ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করলেও আগামী বছরেই তার টার্গেট কোটি টাকা। তার ৭ টি ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে।

এছাড়াও তার কয়েকটি পুকুরের পাড়েও ড্রাগনের গাছ লাগানো আছে এবং এর জমির পরিমান ৬৫ শতকের মতো। তার ৭টি বাগানের মধ্যে ৫টি বাগান স্থানীয় পদ্ধতিতে লাগানো আর ২টি চাইনিজ পদ্ধতিতে। স্থানীয় লাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদন লোকজন আসে ড্রাগন ফলের বাগান দেখতে। ড্রাগন ফলের গাছ মূলত কাণ্ড থেকে হয়। এই ফল চাষ করার জন্য অতিরিক্ত কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের কোন প্রয়োজন হয় না। শুধু মাত্র জৈব সারই যথেষ্ট।

গাছ লাগানোর ১ বছরের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে এবং ফলের বয়স ২৮-৩০ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়।দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফল প্রেমি ও সৌখিন ড্রাগন চাষিদের জন্য তিনি ফল ও চারা সরবরাহ করছেন। তার এই ড্রাগন চাষে হতদরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক কোর যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।সম্প্রতি সরেজমিনে মোহাম্মদ নাসির ভান্ডারীর ড্রাগন ফলের বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ড্রাগন গাছের অবলম্বন হিসেবে একটি কংক্রিটের ছয় ফুট পিলার পুঁতে দেওয়া হয়েছে।

পিলারের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে মোটরসাইকেলের পুরনো টায়ার। চেইন ক্যাকটাসের মতো দেখতে ড্রাগন গাছগুলো পিলার বেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মাথায় মাথায় ফুল ও ফল ধরেছে। গাছে ঝুলছে তিন থেকে চারটি কাঁচা-আধা পাকা ড্রাগন ফল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ড্রাগনের চাষপদ্ধতি জেনে নিচ্ছেন। প্রতি পিলারের পাশে দুই থেকে তিনটি চারা বা কাটিং লাগানো হলে প্রতি কাটিং থেকে ১২ থেকে ১৪টি ফল পাওয়া যায়।

আকারভেদে ফলের ওজন ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাগানে কথা হয় মোঃ নাসির ভান্ডারীরর সঙ্গে। কথা বলে জানা যায় তিনি দীর্ঘ দিন যাবত সামাজিক ও শিক্ষামূলক সমাজ সেবা কাজে সম্পৃক্ত। তিনি সাদুল্লাপুর মঈনিয়া আদর্শ স্কুল এবং সুফি সদরবার শরীফ প্রতিষ্ঠাত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও সামাজিকসহ আনুসাঙ্গিক খরচ এখন আমি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বহন করছি। আমি চলে গেলে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলে যাবে আমার সন্তানদের হাতে।

আমি মরা গেলে যাতে স্কুল ও এলাকার গরীব মেহনতি মানুষের আর্থিক সাহায্য গ্রাম থেকে স্থায়ীভাবে একটা খাত তৈরি করার চিন্তা করি। এই চিন্তার আলোকে আমার পতিত জমিতে প্রথমে সবজি ও কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ করি। এতে সা আসে তা দিয়ে স্থায়ী সমাধানের যতেষ্ঠ নয়। আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষে উপযোগীতাই ইউটুব ও সংবাদ মাধ্যমে দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হই। ২০১৯ সালে পরীক্ষামূলক ১০০০ পিলার-এ ৫০০০ ড্রাগনের চারা লাগিয়ে তার যাত্রা শুরু। চারা রোপনের এক বছর পর গত বছর ফল বিক্রি হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। ক্রমান্বয়ে লাভের মুখ দেখায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করি।

আমি সাফল্য পেয়ে এ বছর ১২ একর পতিত জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছি। আশা করছি এ বছর ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করতে পারবো ইনশাল্লাহ। আমার ড্রাগন চাষের বিক্রিত অর্থ ব্যয় হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন ও এলাকার সামাজিক কর্মকান্ডে। পাশাপাশি এলাকার হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফুটবে এটাই আমার পরম পাওয়া। “পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারে।

সফল এ ড্রাগন চাষি নিজের আত্মতৃপ্তি সর্ম্পকে আলহাজ্ব নাসির ভান্ডারী বলেন- আমি এখনও সম্পন্ন আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারিনি,যেদিন একটি বাড়ি একটি খামার এর মাধ্যমে বিনামূল্যে আমার এই ড্রাগন চারা বিতরণ করতে পারবো এবং সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবো সেদিন আমি সন্তুষ্ঠ হবো। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে নিদের্শনা বাস্তবায়নে যে সকল কৃষকদের উচু পতিত জমি রয়েছে ওই পতিত জমিতে ড্রাগন চাষ করার আহবান জানান। উদ্যােক্তা সুফি সাধক নাসির উদ্দিন সরকার জানায়, আমার এই ড্রাগনের বাগানে প্রশিক্ষিত ১৫ পুরুষ ও ১৫ নারী শ্রমিক রয়েছে। যারা এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

তবে এই ড্রাগন চাষে নিজে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিজের উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখতে চান বলে নাসির সরকার জানান ।সাদুল্যাপুর মঈনিয়া আদর্শ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ড্রাগন চাষ বাগানের তত্ত্বাবধায় এএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,অঅমি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি এই ড্রাগন চাষ বাগানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব নপালন করছি। গত তিন বছর যাবত এই ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়েছে। গত বছর আমরা বাগান থেকে ১০ লক্ষ টাকার ড্রাগন ফল বিত্রি করতে পেরেছি। চলতি বছর এখ নপর্যন্ত ৮ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে।

আশা করছি এ বছর আমরা ২৫ লক্ষ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করতে পারবো। তিনি জনসাধারনের উদ্দেশ্যে বলেন,যাদের এ রকম পতিত জমি রয়েছে আমাদের দেখে তারা যেন এভাবে তাদের জমিগুলোর ইঞ্চি ইঞ্চি পরিমান ব্যবহার করেন এবং এভাবে ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী হন। মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, “অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। নাসির উদ্দিন ভান্ডারীর বাগানে ১৪ মাসে ফল আসে।

তিনি এখানে প্রথম এই ড্রাগন চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন।”পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারে। উপজেলায় সফল এ ড্রাগন চাষি আলহাজ্ব নাসির ভান্ডারীর মতো নিজ উদ্যোগে এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন,” বলেন এই কৃষি কর্মকর্তা। আমাদের উপজেলার সাদুল্যাপুরের নাসির ভান্ডারীসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক কৃষক এই বছর ড্রাগন চাষ করেছে।

আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যারা এই চাষে আগ্রহী তাদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকি। ড্রাগন চাষ এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। আমরা শিগগিরই ড্রাগন ফল চাষের কলাকৌশল কৃষককে জানিয়ে চারা বিতরণ করব।’ আশা করছি, অচিরেই ড্রাগন ফলটি এ জেলার অর্থকরী ফল হিসেবে বিবেচিত হবে।তিনি আরও বলেন, সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন চাষ হয়। তবে উঁচু জমিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তিন মিটার পরপর গর্ত করে চারা রোপণ করতে হয়।

বছরের যেকোনো সময় চারা রোপণ করা যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলে ভালো। সিমেন্ট অথবা বাঁশের খুঁটিতে গাছ বেঁধে দিতে হয়। গাছে ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। প্রতিটি ফলের ওজন হয় ২০০-৬০০ গ্রাম। ১২-১৮ মাস বয়সী একটি গাছে ৫-২০টি ফল ধরে। পরিপক্ক একটি গাছে সর্বোচ্চ ৮০টি ফল পাওয়া যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here