প্রভাবশালী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের প্রচন্ড চাপে থমকে আছে যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি !

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ কমিটি গঠনে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ত্রিমুখী চাপে আছেন। দলের হাইকমান্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের চাপ দিচ্ছেন, নেতাকর্মীরা ত্যাগী ও সুযোগ্য বনেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি করছেন। অন্যদিকে সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতারা নিজের বলয় সৃষ্টি করার মতো কমিটি গঠনের জন্য চাপ দিচ্ছেন। সবাইকে খুশি করার মতো কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হিমশিম খাচ্ছেন। সঙ্গত কারণে বেঁধে দেয়ার সময়ের মাস-বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনসিহ অঙ্গ দলগুলোর কমিটি গঠনের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে যাদেরই এ পর্যন্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের কেউ নির্দিষ্ট সময়ে কমিটি করতে সক্ষম হননি। মূলত অনৈতিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি, সিনিয়র নেতাদের অন্যায় আবদার, প্রভাব খাটিয়ে গুটি কয়েকদের সুবিধা দেয়া, বিশেষ কে নো নেতাকে চাপে রাখা, নিজের বলয় সৃষ্টি করাসহ নানা কারণেই কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। সঙ্গত কারণে স্বাধীনভাবে কমিটি গঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে হাইকমান্ডের কাছে দাবি জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেন। এ কাজে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেন। এসব নেতারা প্রথমে কিছুটা নিরপেক্ষ থেকে কাজ করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক টিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে। দলের হাইকমান্ডও বিভিন্ন

মাধ্যমে পাওয়া এসব অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক টিম গঠন করেন। তারা মাঠে কাজ করছেন। এরই মধ্যে কোনো কোনো টিম তাদের প্রতিবেদন জমাও দিয়েছেন।

জানা যায়, অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীনকে প্রথমে সতর্ক করা হয়। একই সঙ্গে পিরোজপুর জেলা বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থেকে তাকেসহ তার টিমকে প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরো বরিশাল বিভাগে শিরীনকে দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইভাবে ময়মনসিংহ বিভাগেও কমিটি গঠন নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর কমিটি জমা দেওয়ার পরও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। সেখানেও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি সূত্র মতে, বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১৯টিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ জেলাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এসব আংশিক কমিটিকে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে কয়েক দফা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও কমিটি করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্ল্যাহ হাসান বলেন, কমিটি পূর্র্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের চাপ থাকবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে ঢাকা মহানর বিএনপির কমিটি গঠন করা খুবই কঠিন কাজ। দীর্ঘ ২৫ বছরে কমিটি হয়নি এমন থানা ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করতে বর্তমান আংশিক কমিটি সক্ষম হয়েছে। সব ধরনের চাপকে জয় করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও করা সম্ভব হবে।

ঢাকা মহানগর কমিটির বাইরে আন্দোলন সফলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনেও রয়েছে প্রচন্ড চাপ। আংশিক কমিটি নিয়েই গত ২৭ অক্টোবর তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে স্বেচ্ছসেবক দলের কমিটির। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এখন ‘অবৈধ’। আর ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি আর সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের যুবদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক মাসের সময়সীমা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় অনুমোদনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিকুল পরিস্থিতির পাশাপাশি শীর্ষ নেতৃত্বে মতপার্থক্যে এবং নানামুখী চাপে ২ বছর ১০ মাসেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বেচ্ছসেবক দলের কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা বলেন, এক মাসের বেঁধে দেয়া সময়ে হয়তো কমিটি গঠন সম্ভব ছিল। কিন্তু এই দায়িত্ব যেন হাত বেঁধে সাঁতার কাটতে দেওয়ার মতো। নেতাকর্মীরা চায় যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে কমিটিতে আনতে। অন্যদিকে সিনিয়র নেতারা তাদের পছন্দমত নেতা নির্বাচন না করলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। অনেক সময় হাইকমান্ডের কাছে পর্যন্ত তদ্বির যায়। না করলে নিজের পদ রাখাটা হুমকির মুখে পরার উপক্রম হয়। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্যিকারের যোগ্য নেতাকে পদ দেওয়া যায় না। দিতে হয় অযোগ্যদের। ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যুবদল সূত্র জানায়, গত ২ বছর ১০ মাস ধরে সিনিয়র নেতাদের প্রচন্ড চাপের পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রায় সম্পন্ন করে ফেলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ২৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি তালিকাও প্রস্তুত হয়। কিন্তু দলের প্রভাবশালী এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের তদ্বিরে একটি পদ নিয়ে নতুন সমস্যা দেখা দেয়। প্রভাবশালী ঐ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রাজাকার কমান্ডার পলাতক ফাঁসির আসামি জাহিদ হোসেন খোকনের বড় ছেলে খায়রুজ্জামান লিংকনকে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু সুপার ফাইভের সব নেতারা রাজাকার পুত্রের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি মেনে নেননি। ফলে কমিটি ঘোষণার বিষয়টি থমকে যায়।

এ নিয়ে যুবদলের সুপার ফাইভের এক নেতা বলেন, এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদের নেতার চাপে কমিটি গঠন আটকে গেলে স্থায়ী কমিটির নেতার চাপে কি হতে পারে কারো বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু কথা বলার সময় সবার এক কথা দয়িত্বপ্রাপ্তরা কোনো কাজ করে না। এরপরেও চলতি মাসের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেন এই যুবনেতা।

যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল ছাড়াও ৩ মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য চার সংগঠনকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অঙ্গ সংগঠনগুলো হলো- কৃষক দল, তাঁতী দল, ওলামা দল ও মৎস্যজীবী দল। এ চারটি সংগঠনের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণে এখন আবার ‘পর্যবেক্ষণ কমিটি’ করেছে বিএনপি। সেই পর্যবেক্ষণ কমিটির কোনো কোনো নেতাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

বিএনপির পুনর্গঠনের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। কোথাও কোনো অভিযোগ থাকলে তা দেখতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে একাধিক টিম কাজ করছে। সবাইকে বুঝতে হবে, মামলা-হামলাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বিএনপিকে যেতে হচ্ছে। এ কারণে সব কমিটি সময় মতো হচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here