ছাত্রদল নিয়ে উভয় সংকটে বিএনপি, থেমে আছে নতুন কমিটি গঠনের কাজ।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ পীর আবদুল মান্নান: সংকটে দেশের বড় দুই দলের ছাত্র সংগঠন। কোন্দল নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে হাইকমান্ডও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আস্থার সংকট প্রকট। কমিটি ঘোষণার পর এ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে একটি গ্রুপ টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলেও তৈরি হয়েছে সংকট। বয়সসীমা নির্ধারণ করে কমিটি ভেঙে দেয়ার পর থেকে বিক্ষুব্ধরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। হাইকমান্ড সংকট সমাধানে এখনও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। দু’দলের ছাত্র সংগঠনের এমন সংকটে ছাত্র রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে

ছাত্রদল নিয়ে উভয় সংকটে বিএনপি। বয়সসীমার পরিবর্তে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের আন্দোলনে সুরাহা করতে পারছে না দলটি। এ অবস্থায় নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও থেমে আছে। সংকট নিরসনে নেতারা গুলশান কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বর্তমান পরিস্থিতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করা হয়েছে। তার কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন সিনিয়র নেতারা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদেরকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা ‘রাজনীতি’ শুরু করেছেন। নতুন কমিটি গঠনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে সার্চ কমিটি করা হয়েছে। এর একটি অংশ আন্দোলনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিভ্রান্ত করছে। তাকে বোঝানো হচ্ছে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়। সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দল বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না। তারা নিজেদের রাজনৈতিক ত্যাগের মূল্যায়নের দাবিতে মাঠে নেমেছেন। বিষয়টি সমাধানের পরিবর্তে সময়ক্ষেপণ করছে সার্চ কমিটি। যাতে আন্দোলনকারীরা সহিংসতার পথ বেছে নেন। কিন্তু নেতারা তাদের ফাঁদে পা দেননি। যা হাইকমান্ডকে উপলব্ধি করার জন্য তারা অনুরোধ জানান।

এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবারও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতারা। বেলা ১১ থেকে দুই ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস না পেলে শনিবার (আজ) তাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। সেখান থেকে বড় কোনো কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতারা।

ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, প্রথমে সার্চ কমিটি ও পরে সিনিয়র নেতাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাদের সম্মানার্থে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি পূরণে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই শনিবার (আজ) বড় ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ছাত্রদলের আন্দোলন নিয়ে আমরা উভয় সংকটে। ছাত্ররা দীর্ঘদিন জেল খাটল, মামলা এবং পুলিশের হয়রানির শিকার হল। এর বিনিময়ে ওরা কী পাবে? ওদের কী মূল্যায়ন হবে? দোষটা কার? দোষ কারও না। কারণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল তার কাজটি সঠিকভাবে করতে পারে না। তিনি বলেন, বড় বড় রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনে প্রতিযোগিতাগুলো অনেক সময় প্রতিহিংসারও রূপ নেয়। সুতরাং এটাকে বড় করে বা নেতিবাচক করে দেখার কিছুই নেই। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, সেটা হল- ওদেরকে বোঝানো। তাদের মূল্যায়ন কীভাবে করা যায় তা আমরা দেখব। ওদের সঙ্গে আলাপ করে শিগগির বিষয়টির সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি চায় ছাত্ররাই ছাত্রদল করুক। তবে যারা সদ্য সাবেক নেতা তাদের দাবিরও যৌক্তিক কারণ আছে। তারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, মামলায় জর্জরিত, নির্যাতন ভোগ করেছেন। দল তাদেরও সম্মান দিতে চায়। ছাত্র রাজনীতি থেকেও তাদের বড় কোনো জায়গায় নেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। আমরা চাই, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই বিষয়টি শেষ হোক।

বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আন্দোলনকারী নেতাদের বিষয়টি সমাধান হলেই নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমরা জানিয়েছি। আশা করি, সমাধান হয়ে যাবে। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে গ্রুপিং বা সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই। আমরা সবাই চাই সমাধান।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্চ কমিটির এক নেতা বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য বিএনপির বিভিন্ন উপ-কমিটি ও দুই অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে ছাত্রদলের সদ্য সাবেক নেতাদের পদ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা ঠিক হলেই আন্দোলনকারীদের জানানো হবে। আশা করছি, তারা তা মেনে নেবেন।

গত ৩ জুন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি। এর প্রতিবাদে ১১ জুন থেকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে নামেন ছাত্রদলের সাবেক কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। তবে বিভিন্ন সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং সার্চ কমিটির নেতাদের আশ্বাসে আন্দোলনে বিরতি দিয়ে আসছেন বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু দাবি মেনে না নেয়ায় বুধবার থেকে আবারও আন্দোলনে নামেন সাবেক ছাত্রনেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও এখন পর্যন্ত সার্চ কমিটি আন্দোলনকারীদের সুস্পষ্ট কিছুই জানায়নি। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনে তারা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসতার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য বিএনপি হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানান ওই নেতা।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ছাত্রদলের চলমান সংকটের কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত হয়নি। আশা করি, আগামী ১-২ দিনের মধ্যেই একটা সমাধান হবে। পার্টির হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।

গত ৩ জুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে জানানো হয়, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে। নতুন কমিটি গঠনে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রার্থী করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। কিন্তু ১৮ দিন পার হলেও নতুন কমিটি গঠনে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি এ সংক্রান্ত কমিটি। তবে ছাত্রদলের ১১৭ ইউনিটের ভোটার তালিকা প্রস্তুত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here