কে হচ্ছেন আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ?

0
কে হচ্ছেন আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ?

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী গত ৩ মে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর থেকে কে হচ্ছেন ফোরামের নতুন সভাপতি- এ নিয়ে চলছে আলোচনা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন করে বিশেষ কাউন্সিল হয়ে ভোটের মাধ্যমে নাকি কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হবেন তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

তবে, একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপির নেতারাই। সেই সঙ্গে আংশিক কমিটিকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। আলোচনায় যারাসাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে নতুন করে কাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় এসেছে।

এর মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ্ উদ্দীন চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. গিয়াস উদ্দিন এবং সাবেক বিচারক ও অ্যাডভোকেট ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী।তাদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে প্রকাশ্যে কথাবার্তা না হলেও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বিষয়টি আইনজীবীদের মধ্যে প্রাধান্য পাচ্ছে।

কে কী বললেন :জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি কে হচ্ছেন এ বিষয়ে মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দানে অপারগতা প্রকাশ করেন। সেই সাথে যোগ করেন, তারা ফোরামের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি মরহুম এ জে মোহাম্মদ আলীর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবে তিনি আশা করেন যথাযথ সময়ে দল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সদস্য, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এ বিষয়ে  কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, ফোরামের নেতা হওয়ার বিষয়ে আমার আগ্রহ কম।

ফোরামের নেতৃত্বে কে আছেন, কে থাকবেন, সেটা ঠিক করবেন বিএনপি নেতারা।উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, আমি ফোরামের সাথে নেই। ফোরামের নেতৃত্বে কে আছেন, কে থাকবেন, আমি জানি না। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন  বলেন, এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। নতুন সভাপতির বিষয়টি কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে।

সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি কে হবেন এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপির নেতারা।জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আইনজীবী ফোরামের গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এ জে মোহাম্মদ আলী সারাদেশের ৬৪টি জেলা বার থেকে পাঁচজন, অর্থাৎ প্রতিটি জেলা বারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের গোপন ভোটের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত সর্বপ্রথম সভাপতি ছিলেন।

তার আকস্মিক মৃত্যুতে দেশের আইনজীবী ফোরামের নেতারাসহ আইনজীবী সমাজ শোকাহত। মাত্র তিনি মারা গেছেন। তাই নতুন সভাপতি কে হবেন এ ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। আমার মনে হয়, বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে যথাসময়েই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

যার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সৃষ্টি: বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করতে ৯০ দশকের গোড়ার দিকে বিচারপতি টি এইচ খানের নেতৃত্বে বিএনপি সমর্থক সংগঠন হিসেবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যাত্রা শুরু হয়। মরহুম বিচারপতি টি এইচ খান প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর পেশাজীবী এ সংগঠনে বিভিন্ন সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মরহুম খন্দকার মাহবুব উদ্দীন আহমদ, মরহুম ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হকসহ অন্যরা।

এরপর ২০১০ সালে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে সভাপতি, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দীন খোকনকে মহাসচিব ও মরহুম অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে প্রথম যুগ্ম মহাসচিব করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন সদস্যবিশিষ্ট সেই কমিটি দীর্ঘ ৮ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। পরে ২০১৯ সালে মরহুম অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে সদস্য সচিব করে ১৭৯ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ওই কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল সদ্য প্রয়াত এ জে মোহাম্মদ আলী। সেই আহ্বায়ক কমিটি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামকে সারাদেশে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করায় এবং দেশের ৬১টি জেলা বারে (পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদে) সাংগঠনিক কমিটি গঠন করে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক নির্দেশনায় সারাদেশে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের অন্তর্গত প্রতিটি জেলা বারে শুরু হয় ‘সদস্য সংগ্রহ’ অভিযান।

সদস্য সংগ্রহ অভিযানে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে আইনজীবীদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় সব যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে ১০টি বিভাগে ‘বিভাগীয় উপকমিটি’ গঠনের মাধ্যমে নেতারা ৬১টি জেলায় গিয়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালান। পরে সাধারণ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের মাধ্যমে সফলভাবে ৬১টি জেলা বারে ফোরামের নির্বাচিত কমিটি গঠিত হয়।

বেশ কিছু বারে কমিটি ছিল অকার্যকর: বিচারপতি টি এইচ খানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা লগ্নে বিভিন্ন বারে যে কমিটি গঠন করেছিল তার অধিকাংশেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অনেক জেলা বারে কোনো কমিটির অস্তিত্ব পর্যন্ত ছিল না। ২০০৩ সালে দেশের সর্ববৃহৎ ঢাকা বারে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। ১৭ বছর পরে ২০২০ সালে খন্দকার মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটি ঢাকা বারে একটি কমিটি গঠন করেন। এমন পরিস্থিতি দেশের অনেক জেলা বারেই বিরাজ করছিল। খন্দকার মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি ছিল প্রবীণ আইনজীবী এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতি করে আসা নবীন আইনজীবীদের সমন্বয়ে।

প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর প্রথম গোপন ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন: শুধু কেন্দ্রীয় কমিটিই নয়, অধিকাংশ জেলা বারে ছাত্রদলের রাজনীতি করে আসা আইনজীবীদের সমন্বয়ে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে আইনজীবী ফোরামের কমিটি নির্বাচিত হয়। সারাদেশে বিভিন্ন বার সমিতি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে আইনজীবী ফোরামের জয়লাভের মূল কারণই হচ্ছে খন্দকার মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটির সারাদেশের জেলা বারগুলোতে ব্যাপক সদস্য সংগ্রহ অভিযানের পর নতুন কমিটি গঠন।

এমনকি করোনা মহামারির মধ্যেও ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশের বারগুলো চষে বেড়িয়েছেন এবং ফোরামকে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে।

দেশের ৬১টি জেলার সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই পাঁচজন প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সব নেতা কাউন্সিলর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ওই কাউন্সিল সার্বিকভাবে পরিচালনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তারেক রহমান স্কাইপিতে এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে মরহুম এ জে মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মহাসচিব নির্বাচিত হন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ফোরামের আংশিক কমিটি গঠিত হয়।ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে আইনজীবীরা নিরলসভাবে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ সর্বোপরি দেশে আইনের শাসন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি জেলা বারে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন।

পাশাপাশি বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে মামলায় জর্জরিত দেশের বিভিন্ন স্থানের নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে গত ৩ মে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন ফোরামের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here