চলতি সপ্তাহে দ্বাদশ নির্বাচনের তফশিল

0
চলতি সপ্তাহে দ্বাদশ নির্বাচনের তফশিল

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নির্বাচন নিয়ে এখনো ঐক্যমত্য পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। আওয়ামী লীগ চাইছে সরকারের অধীনে নির্বাচন আর বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী চাইছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবি আদায়ে বিরোধীদলগুলোর চলছে হরতাল অবরোধের মত কঠিন কর্মসূচি। ফলে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।সংবিধানের বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন।

প্রথা অনুযায়ী গত ৯ নভেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও অগ্রগতি অবহিত করেছে ইসি।এখন শুধু তফসিল ঘোষণার বাকি। ইসির একাধিক কমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। যার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে কমিশন সভার বৈঠকে। তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে নভেম্বরের ১২ বা ১৩ তারিখ হতে যাচ্ছে তফসিল। আর ভোট গ্রহণ করা হবে জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন মতবিরোধে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ যে তৈরি হয়নি, সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এসময় তিনি একাধিকবার বলেন, পরিবেশ অনুকূল না হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কোনো বিকল্প নেই নির্বাচন কমিশনের। তফসিল ঘোষণার আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপে বসেছিল ইসি।

তাতেও যোগ দেয়নি বিএনপিসহ ১৩ টি রাজনৈতিক দল। সংলাপে যোগ দেওয়া বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।নির্বাচন আয়োজনে এরই মধ্য সব কার্যক্রম শেষ করে আনছে কমিশন। ইসি থেকে নির্বাচনের ব্যয়, সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ, প্রস্তুতি, বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে তাদের প্রস্তুতি ও শেষ পর্যায়ে। সাংবিধানিক পথে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন পুনর্বিন্যাস, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সারাদেশের তিনশ সংসদীয় আসনে ৪২ হাজার ৩৫০টি পোলিং সেন্টারের খসড়া তালিকাও সম্পন্ন করেছে ইসি।নির্বাচন আয়োজনে কমিশন ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র। দ্বাদশ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। তাদের মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ। নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার রয়েছে ৮৫২ জন। নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ধরা হয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং কর্মকর্তাদের দুই দিনের সম্মানী ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে তাদের এক দিনের ভাতা দেওয়া হতো। পাশাপাশি জ্বালানি খরচও এবার আরও বাড়বে। নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হলে খরচ আরও বাড়বে বলে জানান ইসি। সশস্ত্র বাহিনী সাধারণত মোতায়েন করা হয় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।নির্বাচন আয়োজনে প্রায় সব ধরনের সরঞ্জাম মাঠ পর্যায়ে পাঠানো শেষ পর্যায়ে। যেমন স্বচ্ছ ব্যালট বক্স, সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালি, অফিসিয়াল সিলসহ ৯২ ধরনের সরঞ্জামের ক্রয়পত্রও তৈরি করছে। যার মধ্য বেশিরভাগের সরঞ্জাম কমিশনের হাতে এসে পৌঁছেছে। এরই মধ্য নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপারসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে পাঠানো হয়েছে।

আঞ্চলিক অফিস থেকে নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোতে পাঠানো হবে এইসব সরঞ্জাম। এরই মধ্য নির্বাচনী সরঞ্জাম ও মাঠ পর্যায়ের অফিসের নিরাপত্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচন আগে পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকও করেছে। বৈঠকে নির্বাচন আয়োজনে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বিএনপি’র ডাকা হরতাল আগামী তিনদিনের অবরোধের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বের সাথে তদারকি করছে।

এই বিষয়ে তারা সতর্ক থাকবেন বলে কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন।নির্বাচন আয়োজনে গতকাল ডিসি এসপিদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বলেন, নির্বাচন নিয়ে পুরো দেশ মাতোয়ারা হয়ে আছে। নির্বাচন কমিশনের একটা কাজ হচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে যতদূর সম্ভব দৃশ্যমান করে তোলা, স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা। স্বচ্ছতা সৃষ্টি করলে সম্ভাব্য অপপ্রচার ঢাকা পড়ে যাবে। স্বচ্ছতা মানে সত্যের স্বচ্ছতা, মিথ্যের স্বচ্ছতা। যদি অনাচার হয় তুলে ধরতে হবে। ভোটের মূল কাজটা ডিসি ও পুলিশ সুপার বের করতে হবে। সমন্বয় করে নির্বাচনটা তুলে আনতে হবে। ক্ষমতা শক্তি নয়, দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজটা করতে হবে।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি ক্ষমতা প্রয়োগের প্রয়োজন হয় তাহলে তা করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির চলমান হরতাল অবরোধ পালন করছে। এমন সময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। এই বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম বলেন নির্বাচন আয়োজন করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনের কতটা উপযোগী পরিবেশ রয়েছে সেটা আমাদের ভাবতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here