ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শেষ ধাপেও স্বতন্ত্রদের চমক

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের বুধবারের ভোটেও নিজ দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪২টি ইউপির ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ১৯টিতে জয়ী হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ১২টিতে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন পাঁচটিতে।

নির্বাচন বর্জনকারী স্থানীয় বিএনপি নেতারা জিতেছেন চারটি ইউপিতে। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দল জাতীয় পার্টি (জেপি) ও চরমোনাইর পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জিতেছে একটি করে ইউপির চেয়ারম্যান পদে। এর আগে সাত ধাপে অনুষ্ঠিত চার হাজারেরও বেশি ইউপির ভোটে চেয়ারম্যান পদে প্রায় ২ হাজার স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন।

বুধবার একই সঙ্গে পাঁচটি পৌরসভার মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ, দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তবে গোপালগঞ্জ সদর পৌরসভায় কোনো প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। এই পৌরসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ রকিব হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। এখানে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটের আগেই শেখ রকিবকে সমর্থন জানিয়ে একে একে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ফারুক খান এমপি ও আব্দুর রহমানের নির্বাচনী এলাকায়ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌরসভায় ৬ হাজার ১৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম শিমুল। এ পৌরসভায় পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের আতিকুর রহমান মিয়া মাত্র ৬০৪ ভোট পেয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। পৌরসভাটি ফারুক খান এমপির নির্বাচনী এলাকা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও সাবেক এমপি আব্দুর রহমানের নির্বাচনী এলাকা মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউপিতেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাবিবুল বাশার পরাজিত হয়েছেন। সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএস ফারুকুল হকের চামচ প্রতীকের কাছে পরাজিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। এই পৌরসভায়ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র আব্দুস শাকুর তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।

বুধবারের ভোটে একমাত্র উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। খাগড়াছড়ির গুইমারার এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন নৌকার মে মং মারমা। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পাশাপাশি বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩২টি ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ ও ৪৪টিতে উপনির্বাচন, পাঁচটি পৌরসভা ও একটি উপজেলা পরিষদে সাধারণ এবং তিনটি উপজেলা পরিষদে উপনির্বাচন হয়। এর আগে দিনভর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, জাল ভোট, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভোট কেনাবেচার অভিযোগ ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ধীরগতিসহ নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয় স্থানীয় সরকারের শতাধিক নির্বাচন।

এসব নির্বাচনের বেশিরভাগেই ইভিএম মেশিনের পাশাপাশি কিছু স্থানে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হয়। যদিও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইভিএম নিয়ে এখন চরম মতবিরোধ রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পরে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় নির্বাচন। একই দিনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনেরও নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনেও ইভিএম নিয়ে নানা বিড়ম্বনার খবর পাওয়া যায়।

এই ইউপি ভোটের বেশিরভাগ বিদায়ী কমিশন কে এম নূরুল হুদার মেয়াদে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ব্যাপক প্রাণহানির কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১ হাজার ৭৮১টিতে জয়লাভ করেন। নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা প্রায় ৭০০ ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পান। ওই ভোটে প্রাণহানির পাশাপাশি ও একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এবার ৩৬৯ জন চেয়ারম্যান ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হন।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হলেও বিকেলে সিনাবহ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই সাধারণ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ দুই প্রার্থীর সমর্থকদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে। এ সময় সমর্থক, ভোটারসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here