প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ চলমান করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। অতি সংক্রমক এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে ভারতে বিধিনিষেধসহ কোনো কোনো রাজ্যে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রন। নতুন ধরনসহ দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় ১১টি বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে সারাদেশে এ বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ হাজার ১১১ জনে। এছাড়া ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯১৬ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাতে মোট শনাক্ত হলেন ১৬ লাখ ১ হাজার ৩০৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ২৪ হাজার ৯৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে দেশে সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আর করতে দেওয়া হবে না। মাস্ক পরা ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হলে মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) মাধ্যমে তাকে জেল-জরিমানা করা হবে। তিনি বলেছেন, করোনা শনাক্ত আজ প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি। যা আজ থেকে ১০-১৫ দিন আগেও ছিল দুইশ, আড়াইশ, তিনশ।
গতকাল ছিল আড়াই হাজার আর আজ প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি। এই লোকগুলো একটা পার্সেন্ট হারে কিন্তু হাসপাতালে আসবে। তখন আমাদের ধারণ ক্ষমতা পার হয়ে যাবে। আবার আগের মতো ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। এই হারে বাড়তে থাকলে আমরা ধারণা করছি, আগামী কয়েকদিনে হাসপাতালে রোগী বাড়বে। এভাবে বাড়তে থাকলে দেশ বেকায়দায় পড়ে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশে গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েছে ১৬৯ শতাংশ।তবে আক্রান্তদের মধ্যে গত এক সপ্তাহে মৃত্যুহার কিছুটা কমে আসছে। গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে ২০ শতাংশ কমেছে এই হার।
বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা ২০ শতাংশ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দেড় লাখের উপরে পরীক্ষা করা হয়েছে। গত সাত দিনের করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪৭৪ জনের দেহে। ‘এই এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬৯ শতাংশ। এ পরিমাণ দেখে আন্দাজ করা যায়, আমাদের দেশে কত দ্রুত করোনা শনাক্ত ও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন সার্বিকভাবে গত দুই মাসে সংক্রমণের হার ২ শতাংশ বা তার নিচে ছিল। তবে গত এক সপ্তাহে তা দ্বিগুণ বেড়ে শনাক্তের হার ৯ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এরই মধ্যে পুরো দেশের করোনা শনাক্ত বিবেচনায় নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেছে অধিদপ্তর।
‘ঢাকা ও রাঙ্গামাটি জেলাকে করোনা সংক্রমণের রেড জোন বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীতে করোনা সংক্রমণের হার ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ। রাঙ্গামাটিতে এই হার ১০ শতাংশ। এদিকে করোনার বিধিনিষেধের মধ্যে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চললেও বাড়বে না বাস ভাড়া। আগামী শনিবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সড়কে বাস চলাচল করবে। তবে এ ক্ষেত্রে নতুন করে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করবেন বাস মালিকরা।
তবে বিধিনিষেধের মধ্যেও সব সিটে যাত্রী বহনের দাবি জানান বাস মালিকরা। বাস মালিকদের পক্ষে সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙা বলেন, ‘বিমান যেভাবে সব সিটে যাত্রী নেয়, সেভাবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সিটে যাত্রী বহনের দাবি জানিয়েছি। চালক-শ্রমিকদের ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি করছি। আমরা কোনোভাবেই ভাড়া বৃদ্ধি করতে চাই না।
সব সিটে যাত্রী বহনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চললে সংকট হবে। হঠাৎ করে বাসের সংখ্যাও বাড়ানো সম্ভব হবে না।
করোনার ১১টি বিধিনিষেধে যা আছে:
১. দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেঁস্তোরাসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।
৩. রেঁস্তোরায় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
৪. ১২ বছরের ঊর্ধ্বের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টসমূহে ক্রু-দের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সাথে শুধুমাত্র ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।
৭. বিদেশ থেকে আগত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও Rapid Antigen Test করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামগণ সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।
১০. কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।