“অতীতকে ভুলে যাওয়া” মোহাম্মদ সাইফুল আলম

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জেলা প্রতিনিধি: মানুষ কালের চক্রে বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত হয় বা হয়ে থাকে । এটাই স্বাভাবিক । আজ যারা ধ্যানে, জ্ঞানে দরিদ্র তারা জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হাতে অগ্রসর হলে হয়তো কোন এক সময় জ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে বা সমর্থ হবে । আসলে আজ যারা শিশু তারাই একদিন বড় হবে দেশ ও জাতির কর্ণধার হবে । তারাই দেশের আইন, বিচার ও শাসন বিভাগ তথা সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারী হবে । এর মাঝে অনেকে ফুটন্ত গোলাপের মতো ঝরে যাবে না এমনটি বলছি না ।

সমাজের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে যারা অবস্থান করছেন বা করবেন, তারা কিন্তু পূর্ব থেকেই উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত ছিলেন না । তাদের জীবনেও ছিল অভাব অভিযোগ । সর্বোপরি তাদের বংশগত ঐতিহ্যের চুলছেড়া বিশ্লেষণ করলে যাবে যে, তাদের কারো না কারো অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল । তাদের কষ্টের ফলশ্রুতিতে আজ বংশের এ উজ্জ্বল প্রদ্বীপ শিখাটি ঝলমল করছে । However, আজ সমাজের উচ্চ বিত্তের মানুষগুলো নিম্নবিত্তের বা নিম্নস্তরের মানুষগুলোকে বড় বেশি ঘৃণা করে। তারা অভাবগ্রস্থ মানুষকে খুব একটা পাত্তা দেয় না ।

বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হয় । আজকের সমাজে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্ধ বিরাজ করছে । কারো দুঃখের সমভাগী হতে কেউ-ই চায় না । সবাই যার তার সুখ নিয়ে ব্যস্ত । আসলে আলো ছাড়া অন্ধকার এবং মন্দ ছাড়া ভালোর কথা যেমন ভাবা যায় না, তেমনি দুঃখ ছাড়া সুখ কল্পনা করা বা উপলব্ধি করা অসম্ভব । এযুগে এসব কথার কোন অর্থ নেই । আমরা সবাই দুঃখকে ঘৃণা করি এবং সুখ নামক সোনার হরিণকে সর্বান্তকরণে কাছে পেতে চাই এটাই আমাদের কামনা-বাসনা । যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যাবে ।

কারণ বাস্তব পৃথিবীতে সুখ-দুঃখ উভয়েরই প্রয়োজন । সুখ-দুঃখ উভয়ই বিধাতা সৃষ্টি করেছেন । অতএব, সুখে আনন্দিত আর দুঃখে অধিকতর বিমর্ষ হওয়ার কোন কারণ নেই । এ পৃথিবীতে যারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, যারা সঠিক পথের দিশারী, যারা জীবনকে সম্যক উপলব্ধির আলোকে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছে তাদের নিকট সুখের চেয়ে দুঃখ অধিকতর কাম্য । আর এটাই স্বাভাবিক । তবে বাঙালী কিন্তু কারো সুখ সহ্য করতে পারে না অর্থাৎ কারো সুখ দেখলে তার অতীত খুঁজে ফিরবে। তখন অতীতের সমালোচনা থেকে তার সুখ স্বাচ্ছন্দ্য কিছুটা হলেও হ্রাস করতে চেষ্টা করবে । আমি এখন কোথায় বসে আছি জানেন কী ? হয়তো বা না ।

আমি রাজ গৌরীপুরের সেই ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশনের অনুসন্ধান অফিসের দুতলার সিঁড়ি বেয়ে রেলিং এর পাশে । তবে বসেছি খুব আরামে কারণ, আমার বসার স্থানটি ইটের তৈরি । তার সাথে আবার ট্রেনের খবরাখবর জানানোর ঘন্টাটিতে হেলান দিয়ে । অনেকেই হয়তো ভাবছেন, আমি এখন (সময়টা ২০০০ সালের আগস্ট মাস ) এধরনের লিখা কেন লিখছি ? কেন , লিখছি জানি না । এ লেখা কোনদিন প্রকাশিত হবে কিনা , তাও জানি না । তবুও লিখে যাচ্ছি অবিরত খাতার পাতা । তবে আমার এ লেখায় কেউ না কেউ উপকৃত হবে- এটা আমার বিশ্বাস । একটু আগে হোটেলে স্বল্প খরচে ভুরি ভোজন করেছি । যার জন্যে শরীরে শক্তি পাচ্ছি, মনের জোর পাচ্ছি ।

এদিকে আজ কলমটিও ফারুক মামার দোকান থেকে বাকীতে খরিদ করেছি । আসলে সবই আল্লাহর ইচ্ছা। স্টেশনে এসেছি পূর্ণ দু’দন্ড হলো । এই মাত্র হাত ঘড়িটি জানিয়ে দিলো ৬ টা বাঁজার সময় সংকেত । আপনারা হয়তো ভাবছেন হয়তো কেন লিখছি । আসলে আমি যে এখানে অবস্থান করছি তার পিছনেও অতীত কাজ করছে । কারণ, আজ গৌরীপুর উপজেলা ডাকঘরে গিয়ে দরখাস্তগুলো জমা দিতে পারলাম না । তাই এখন এই গোধুলী লগ্নে ময়মনসিংহ যেতে হচ্ছে । এইমাত্র একটি ছাগল ছানা আমার পাশে লাফ দিয়ে বসে ছিল, তবে আমি তাকে নির্দয়ভাবে তাড়িয়ে দিয়েছি ।

কিছুক্ষণ আগে ভৈরবের দিকে একটি ট্রেন ছেড়ে গেল । আর হ্যাঁ আমার উদ্দেশ্যমূলক ঝারিয়া (ময়মনসিংহগামী) ট্রেনটিও প্লাটফরমে প্রবেশ করেছে । কিন্তু স্টেশন মাস্টার সাহেব আজ ঘন্টা বাঁজায়নি । আমি বসে লিখছি বলেই হয়তো ডিস্টার্ব করেনি । ভালোই হলো ময়মনসিংহ যেতে পারব । ট্রেনে উঠেও অতীতের ভুল ধরা পড়লো । কারণ বাঙালী কাকা গৌরীপুরের রানার ট্রেন ছাড়ার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে বলে উঠলেন, অতীতের স্মৃতির কথা মনে করলে কেবল দুঃখই বাড়বে, লাভ কিছুই হবে না । হাটে-ঘাটে, মাঠে, বন্দরে, অফিস কিংবা আদালতে যেখানেই যাবেন দেখবেন মানুষ অতীতকে ভুলে যাচ্ছে । অতীতের কথা বললে কেবল মানুষে মানুষে হানা-হানি, খুনো-খুনি বাড়বে ।

বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে । আজ এমন এক সময় একথাগুলো লিখছি যখন সমাজের অস্থিমজ্জায় ঘুনে ধরেছে , যা বাহির থেকে অস্পষ্ট । সরকারী দল কিংবা বিরোধী দলের বর্তমান অবস্থা সৃষ্টিতেও তাই মনে হচ্ছে । সরকারী দল হরতালের রাজনীতি চায় না আবার বিরোধী দল একটু আধটু করে হরতাল ডাকছে । কিন্তু দেশের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলও বিরোধীদলে থাকাকালীন সময়ে একদিন, দুদিন, তিন দিন করে একাধারে সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরেও হরতাল পালিত হয়েছে এদেশে । কিন্তু এমনটি এখন বলা যাবে না ।

‘‘গাঙ পাড় হলেই মাঝি শালা’’- এ উক্তিটি বাঙালীর জীবানাদর্শনে একেবারেই সত্য। বাঙালীরা খুব অল্প সময়ে অতীতকে ভুলে যায় । বাঙালী তার অতীত দুঃখের কথা, অন্যায়-অবিচারের কথা কিছুতেই মনে করতে পারে না । এভাবে কী আর কোন স্বাধীন জাতি কিংবা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চলতে পারে ? আসলে কী জানেন ? দেশটা আপনা আপনি চলছে । অহেতুক আমার মতো নিছক স্বল্প জ্ঞানের লেখালেখি প্রিয় মানুষের পক্ষে এমন উপলব্ধি করা ঠিক হচ্ছে না । ভাবছি এদেশের সাধারণ মানুষের কী হবে ? তারা কী করে তাদের ন্যূনতম ব্যয় নির্বাহ করবে ? নিম্ন বিত্তের মানুষ কী করে মৌলিক অধিকারের কথা ভাববে ? পুঁজিবাদী শোষনের স্বীকার যে ব্যাপক জনগোষ্ঠী তাদের কী হবে ? পুঁজিবা দী মালিক শ্রেণি এদেশের অধিক জনসংখ্যাকে যে চোখে দেখছে তাতে করে অধিককাল চলতে থাকলে দেশের উচ্চ শিক্ষিত(কারিগরি জ্ঞান হীন) বেকার শ্রমিক শ্রেণি তাদের জীবনের ইতি এখানেই টানতে হবে ।

তাদের আর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো মতো কোন পথই থাকবে না । তারা কোনভাবেই তাদের জীবনের সঠিক দিক নির্দেশনা খোঁজে পাবে না, তাদের অতীত ঐতিহ্যের অভাবে । অতীত ঐতিহ্য না থাকলে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি তথা ব্যাক্তি জীবন কোনটাই সফলতা চরম শিখরে আরোহন করতে ব্যর্থ। সরকারি, আধা সরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত যে কোন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ২০/-(বিশ) টাকা থেকে ৩০০/-(তিন শত) টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ড্রাপট/পে-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রেজারী চালান দিতে হয় দরকাস্তের সঙ্গে ।

তাছাড়া কোন কোন প্রতিষ্ঠান আবার সাক্ষাৎকারের দিন সাক্ষাৎকার ফি বাবদ ২০/-(কুড়ি) বা ৫০/-(পঞ্চাশ) টাকা নিয়ে যেতে উল্লেখ করে দেয় ইন্টারভিউ কার্ডে । এভাবে আর কতদিন পুঁজিবাদী শোষণ চলবে- জানি না , জানি না পুঁজিবাদী শোষণের লাগামহীন দৌঁড় কত দূর গিয়ে ঠেকবে বা কত কাল চলবে । আসলে পুঁজিপতিদের অতীত ঐতিহ্য কেমন ছিল অনেকেই জানেন না বা কোন দিন জানার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয় না । বর্তমান সমাজে অধিকাংশ পুঁজিপতির প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে তাদের আজ বুলেট প্রুফ গাড়িতে করে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছে পুঁজিবাদী শোষণের হাতিয়ার হাতে । আসলে এসকল পুঁজিপতির অনেকের পূর্ব ইতিহাস খোঁজ করলে তাদের বংশগত ঐতিহ্য বলতে কিছুই পাওয়া যাবে না। আজ যারা বড়লোক তাদেরও আগামীদিনে কোন এক শুভক্ষণে সুখের প্রদ্বীপ নিভে যেতে পারে ।

এটি বিধাতার এক সুক্ষ্ম খেলা । যে খেলায় জয় পরাজয়, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন সবই আছে । বলছিলাম কী মানুষ অতীত ভুলে যায় । এটা তার স্বভাব । প্রকৃতিই তাকে এসব দান করেছে অকৃত্রিম ভালবাসায় । বংশ পরম্পরায় তা চলে আসছে তা আগামীতেও আসবে । অনেকের ধারণা অতীত নিয়ে ভেবে কী লাভ ? জ্ঞানী গুনী মনীষীরাও বলে গেছেন, ‘গতস্য শোচনায়ু নাস্তি’ অর্থাৎ অতীত আলোচনা নিস্প্রয়োজন । আবার কেউ কেউ মুখের উপর বলে দিচ্ছেন অতীতকে ভেবো না অতীত তোমাকে শান্তি দিতে পারবে না বরং অতীতকে ভুলে থাকার চেষ্টা কর । যুগে যুগে অনেকেই অতীতকে ভুলে গিয়ে সফলতার শীর্ষে আরোহন করেছে ।

বর্তমান সমাজের উচ্চ বিত্তের মানুষগুলোর পরশ্রীকাতরতার সামনে যদি তাদের অতীতের ভিডিও ক্যাসেটটি তুলে ধরা হয় তাহলেও তারা বেমালুম অস্বীকার করে বলবে, না এ হতে পারে না- এসব আমার জীবনে ঘটেনি বা ঘটতে পারে না । সুখ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে অনেকেই এ মত প্রকাশ করেন যে, সুখ মানুষকে হিংস্র করে তোলে, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার বাড়িয়ে হিংসা-বিদ্বেষের জন্ম দেয়, মানুষ স্রষ্টার আনুগত্য প্রকাশেও কার্পণ্য করে অধিকতর কৃপণ হয়ে পড়ে । সুখ হচ্ছে আপেক্ষিক বিষয় । এটা কেউ পায় আবার কেউ পায় না । তাই আমি (লেখক নিজে) মনে করি, সোনা-রূপাকে আগুনে পোড়ালে যেমন তার উজ্জ্বলতা বেড়ে যায় তেমনি দুঃখ মানুষের আত্মার মলিনতা দূর করে একজন সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পথ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here