ঈদুল আজহা উপলক্ষে সীমান্তের গরু ঢাকার হাট-বাজারে ঢুলে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়বে

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মাসখানেক পরই আসছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। একদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসছে, অন্যদিকে দেশে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এর মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর হাটগুলোতে বেশির ভাগ পশু আসে সীমান্ত অঞ্চল থেকে। এরই মধ্যে ওই সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। ফলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বাড়তি সতর্কতা না থাকলে পশুর হাটগুলো থেকে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ বছর রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ২০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ১৩টি এবং ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) সাতটি হাট রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে দুটি স্থায়ী পশুর হাট—একটি উত্তরের গাবতলীতে এবং অন্যটি দক্ষিণের সারুলিয়ায়। এরই মধ্যে অস্থায়ী হাটগুলোর স্থান নির্ধারণ করে সেগুলোর ইজারার জন্য প্রথম দফার দরপত্র আহ্বানের কাজও শেষ করেছে দুই সিটি করপোরেশন।

তবে হাট বসানোর ক্ষেত্রে এখনো সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির পরিকল্পনার বাইরে বিশেষ কোনো বিধি-নিষেধের উদ্যোগ নেয়নি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠান দুটি বলছে, তারা এখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পশুর হাটের জন্য আলাদা কোনো লিখিত নির্দেশনা পায়নি। ফলে তারা সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দেবে। করোনার সংক্রমণ যদি আরো বেড়ে যায়, তখন পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

আগের বছরগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজধানীর হাটগুলোর বেশির ভাগ পশুই আসে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে। ওই জেলাগুলোতেই রয়েছে দেশের বেশির ভাগ পশুর খামার। এ ছাড়া ওই জেলাগুলোর সঙ্গে রয়েছে দেশের সীমান্ত সম্পর্কও। করোনার কারণে এসব সীমান্ত সরকারি ঘোষণায় বন্ধ থাকলেও এরই মধ্যে এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। গত কয়েক দিনের সংক্রমণের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোনো কোনো জেলায় দৈনিক ৬০ শতাংশেরও বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার এই ঊর্ধ্বগতি আরো ১৪ থেকে ২৮ দিন থাকতে পারে। তা ছাড়া গত বছর ঢাকা থেকে গ্রামে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল বেশি, তবে এ বছর চিত্র আলাদা। এবার সীমান্ত জেলাগুলো থেকে ঢাকার দিকে আসছে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। ফলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এখনই রাজধানীর পশুর হাটের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তা না হলে পশুর হাটই করোনা ছড়ানোর ভয়ংকর উৎস হয়ে উঠতে পারে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ বলেন, গত বছর যেসব গরু ব্যবসায়ী গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন তাঁরা রাজধানীর জন্য করোনার তেমন কোনো ঝুঁকি বয়ে আনেননি। তবে এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলা এবং তার পাশের জেলাগুলোতে এখন করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বেশি। ফলে এসব এলাকার ব্যাপারীরা যখন বিভিন্ন হাটে গরু নিয়ে আসবেন তখন তাঁরা সত্যিকার ঝুঁকি নিয়ে আসবেন। এ বছর ঝুঁকির ধরনটাও ভিন্ন। এবারে তাঁরা এমন একটা ভেরিয়েন্ট নিয়ে আসবেন, যেটার নাম ডেল্টা ভেরিয়েন্ট এবং এটা আগের ভেরিয়েন্টগুলোর তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কিভাবে নিশ্চিত করা হবে, জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন ইজারার জন্য আমরা ১০টি হাট চূড়ান্ত করেছিলাম। এই ১০টি হাটের ইজারার দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছিল। তবে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা তিনটি হাটকে এই তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি। আমরা রাজস্বের চেয়ে জনস্বাস্থ্যের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এতে যদি আমাদের কিছু রাজস্ব কমও আসে, তাহলে আমরা সেটা মেনে নেব এবং প্রয়োজনে হাটের সংখ্যা আরো কমিয়ে দেব। তা ছাড়া আমাদের তরফ থেকে হাটগুলোতে মাস্ক, জীবাণুনাশক টানেল, স্যানিটাইজারসহ সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন আমরা অবশ্যই সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাট বসাব। সীমান্ত থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীদের কারণে করোনার একটা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। তবে কোরবানির পশুর হাট শুরু হওয়ার সাত দিন আগে সরকারি যে সিদ্ধান্ত থাকবে সেটা পর্যালোচনা করে যদি হাটের বিষয়ে অতিরিক্ত কোনো প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার হয় তাহলে সেটা আমরা নেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here