ক্যাসিনো ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন ৪ যুবলীগ নেতা ।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ রাজধানীতে ক্যাসিনো-বাণিজ্যসহ টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে এরইমদ্যে চার যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ইয়ংমেনস ক্লাবের মালিক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, টেন্ডার কিং খ্যাত যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান ভূঁইয়া।গ্রেফতার এই চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে র‌্যাব।

এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের গ্রেফতার নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও সম্রাটের গ্রেফতার নিয়ে গণমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ খবর প্রকাশ হয়েছে। আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবের সভাপতি আওয়ামী লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক কে এম মমিনুল হক ওরফে ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ এই সম্রাটকে গুরু মানতেন বলে জানা যায়। যদিও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সাঈদ।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা খালেদ গুলশান থানার মাদক ও অস্ত্র মামলায় র‌্যাবের হেফাজতে ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় গতকাল রবিবার খালেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ও রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গুলশান থানায় দায়ের করা মাদক ও অস্ত্র মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে থাকায় তাকে আদালতে উপস্থিত করা যায়নি। এ কারণে আদালত খালেদের অনুপস্থিতিতে পুলিশের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করেননি। আদালত জানিয়েছেন, যেদিনই খালেদকে আদালতে হাজির করা হবে ওইদিনই শুনানি হবে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওইদিন বিকেলেই তার মালিকানাধীন ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবে নিষিদ্ধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও নগদ ২৫ লাখ টাকা সহ নানা সরঞ্জাম জব্দ করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গ্রেফতারের পর গত ২০ সেপ্টেম্বর খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মাদক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় পুলিশ ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে গ্রেফতার ও রিমান্ডের আবেদনটি উপস্থাপন করে। আদালত ২৯ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে হাজতি পরোয়ানা ইস্যু করলে ওই দিন খালেদের উপস্থিতিতে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন এবং রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

৭ দিনের রিমান্ড শেষে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খালেদকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে র‌্যাব। রিমান্ডে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন বলে আদালতকে জানানো হয়। মামলার অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আরও ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-৩ এর এএসপি বেলায়েত হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দিদারুল আলম অস্ত্র মামলায় ৫ দিন ও মাদক মামলায় আরও ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠায় খালেদকে।

এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় দায়ের করা অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় ৪ দিন এবং মাদক মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ক্যাসিনো-বাণিজ্যে এইসব ‍যুবলীগ নেতারা কত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সেটির একটি তালিকা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন র‌্যাব।

এদিকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও তার ৭ অস্ত্রধারী দেহরক্ষীকে আটক করে র‌্যাব। অভিযানে ১ কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) পাওয়া যায়, যার মধ্যে তার জি কে শামীমের মায়ের নামে ১৪০ কোটি ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে। পাওয়া যায় মার্কিন ডলার। জি কে শামীম ও তাঁর দেহরক্ষীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র। আর পাঁচ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় জি কে শামীমের নামে তিনটি মামলা হয়। এই তিনটি মামলার মধ্যে অস্ত্র আইনে ও মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলায় তার ৭ দেহরক্ষীকে আসামি করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় জি কে শামীমকে ১০ দিন ও তার ৭ দেহরক্ষীকে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গতকাল রবিবার শামীমের ৭ দেহরক্ষীর জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালত।

এদিকে গত ২০ সেপ্টেম্বর জি কে শামীমকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পরই ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পর দিন ২১ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নুরউদ্দিন এবং মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশিকুর রহমান আসামি ফিরোজকে ১০ দিন করে ২০ দিন হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার দুই মামলায় ৫ দিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন। কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি ফিরোজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, তেজগাঁও থানা হেফাজতে রেখে লোকমান ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে ফুটপাতের দোকানকার থেকে গত কয়েক বছরে কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ খ্যাত যুবলীগ নেতা কে এম মমিনুল হক ওরফে ক্যাসিনো সাঈদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। চোরাই তেলের ব্যবসা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টনে কয়েকটি ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন তিনি। আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে (ক্যাসিনো সম্রাট) গুরু মানতেন বলেও লোকমুখে শোনা যায়।

২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী গ্রেফতার হওয়ার পরই ওই দুটি ভবনের দিকে নজর পড়ে যুবলীগ যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদের। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হওয়ার পর লাগোয়া দুই ভবনের একটিতে অফিস খোলেন সাঈদ। ২০১৬ সালে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর ভবন দুটি থেকে মীর কাসেমের স্টাফদের বের করে দিয়ে রাতারাতি দখল করে নেন সাঈদ।

র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেফতার যুবলীগ নেতাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে অনেক বিষয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here