সোনারগাঁও ভূমি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য,বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া ফাইল সই করেন না এসিল্যান্ড!

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সোনারগাঁও সংবাদদাতা: নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও উপজেলা ভূমি অফিসের দুর্নীতির দৌরারাত্ম্য নতুন নয়। তবে, বর্তমান সময়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে সোনারগাঁও ভূমি অফিস। ঘুষ বাণিজ্য ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে এ অফিসে। নামজারি ও জমাভাগ করতে, বিভিন্ন ধরনের ফরম নিতে, মিস কেইস ফাইল করতে ও আদেশ নিতে, ডিসিআর নিতে এবং প্রতিবেদন পাঠাতে ভূমি অফিসে দিতে হয় মোটা অংকের ঘুষ ।

ভূমি কর্মকর্তা এবং ওমেদারদের সমন্বয়ে অফিসগুলোতে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। কোনো কাজই হয় না ঘুষ ছাড়া। প্রতিদিন সেখানে চলছে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য। যার নেতৃত্বে স্বয়ং এসি ল্যান্ড নাজমুল হুসাইন জড়িত বলে একাধিক ভূক্তভোগীর অভিযোগ। তাদের ভাষ্য, বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া তিনি কোনো ফাইলই সই করেন না এসিল্যান্ড।

সরেজমিনে সোনারগাঁও ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, এসিল্যান্ড নিজস্ব লোক ছাড়া কোনো ফাইলই সই করেন না। প্রতিটি ফাইল স্বাক্ষরের আগে নাজমুল হুসাই অনুগতরা বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে দেন। আর তা দেখেই লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হয়ে ফাইল সই করেন নাজমুল হুসাইন। সোনারগাঁও ভূমি অফিসের প্রধান কর্মকর্তার এমন কান্ডে জিম্মি ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এসি ল্যান্ডের অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারি ও দালালদের সমন্বয়ে গড়া শক্তিশালী সিন্ডিকেট মিষ্টি খাওয়ার নামে প্রতিদিন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিলেও যেন দেখার কেউ নেই।

ডিসিআরের জন্য ১৭ শত ও এ্যাবেস্টেক এলাট ফান্ডের নাম করে ২২ শত টাকা নেয়া হচ্ছে। সরকার নামজারি ও জমাবাগেন জন্য ১১৭০ টাকা নিধ্যারন করলেও মানা হচ্ছেনা নিতিমালা। নামজারি করতে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। হোসেনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিয়ন সেলিম মিয়া ‘সে’ সংকেত ব্যবহার করেন, রুপা নিজের নামই সংকেত হিসাবে ব্যবহার করেন, আমিনপুর ভূমি অফিসের আব্দুর রব ‘আর’ সংকেত ব্যবহার করেন, কাউছার তার নিজ নামই সংকেত হিসাবে ব্যবহার করেন। মোগরাপাড়া ভূমি অফিসের ওমেদার আনিছ সংকেত ব্যবহার করেন তার নাম, অনেক নায়েব তার ঘুষের রেজিষ্ট্রারের নাম্বার দিয়ে দেন।

স্থানীয় একজন বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে নামজারির জন্য সরাসরি টাকা দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। এবার নতুন করে লোক ধরেছি, সে ফাইলের পেছনে একটি চিহ্ন দিয়ে দিল । আজ আমার কাজ হয়ে গেছে।
ওই ভূমি কর্মকর্তা নামজারি, নামপত্তন ও খাজনার রশিদ দেয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফি এর চেয়ে শতগুণ বেশি টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, মিস কেস ও খাজনা দাখিলের ক্ষেত্রে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। আর এ দুর্নীতির প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছেন এসিল্যান্ড। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বৈধ কাজে গিয়েও প্রকৃত মালিকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। অসাধু সিন্ডিকেটকে ম্যানেজ করে খারিজ পার করতে হয়। জমি মালিকরা টাকা দিয়েও জমি খারিজ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তবে টাকা দিলে তদন্ত প্রতিবেদন, সার্ভে রিপোর্ট আর নামজারি খতিয়ানের অবৈধ কাগজ বের করা কোনো ব্যাপারই না।

টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না উপজেলার ভূমি সহকারী কর্মকর্তার ও ইউনিয়ন ভুমি অফিসে । না ঘুষ না দিলে ফাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ফেলে দিয়ে নামজাবি ও জমাবাগের প্রস্তাব না মুঞ্জুর পাঠানো হয়। বিকাশের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে ঘুষ লেনদেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি নাজমুল হুসেইন বলেন, এব্যাপারে আমার জানা নেই। কেই এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here