রূপগঞ্জে তারাব পৌরসভার দুই কাউন্সিলর প্রার্থী গ্রেফতার, অতপর…

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার নির্বাচনী প্রচারণায় কাউন্সিলর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটনায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে দুই পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা করার পর পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, নোয়াপাড়া এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী রুহুল আমীন ও প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু কর্মী আহত হয়। উত্তেজিত কর্মীরা যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় আলাদা দুটি মামলা করা হয় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে। পরে দুই প্রার্থীসহ উভয় গ্রুপের ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত তারাব পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রুহুল আমীন ও প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থী আনোয়ার হোসেনকে বুধবার সকালে আদালতে পাঠায় পুলিশ। দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে শুনানী শেষে বিচারক আহমেদ হুমায়ূন কবির দুই কাউন্সিলরকে জামিন প্রদান করেন। আর হলফনামা দেয়ার পর অপর চারজনের বিষয়ে জামিনের বিষয়ে আদেশ দেয়ার কথা জানান বিচারক।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নোয়াপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও প্রার্থী আনোয়ার হোসেন (ডালিম মার্কা) এবং রুহুল আমিন ফরাজীর (উটপাখি মার্কা) সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন, রুহুল আমিন ফরাজীসহ তাদের সহযোগী রাজিব (৩৪), সোহেল (৩৪), সাইদুর (৫৫) ও হাবিবুর (২৬) আটক করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার তদন্ত কর্মকর্তা এইচএম জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন এবং রুহুল আমিন ফরাজী পাল্টাপাল্টি দুইটি মামলার করেছেন। তাদের দুইজনকে বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে চালান করে দেওয়া হয়েছে। রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে আটক করে রাতে থানায় রাখা হয়। তাদের বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে চালান করে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিকালে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তারাব পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের পূর্ব নির্ধারিত গণসংযোগ করতে তার কর্মী সমর্থকরা বের হয়।

গণসংযোগকারীরা নোয়াপাড়া ইসলামিয়া মহিলা আলীম মাদরাসা এলাকায় পৌঁছলে প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থী রুহুল আমিন মিয়ার কর্মী সমর্থকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গণসংযোগে বাঁধা প্রদান করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। খবর পেয়ে রুহুল আমিন মিয়ার চাচা শ্বশুরের মালিকানাধীন পাশ্ববর্তী আবির টেক্সটাইলে মিলের শ্রমিকরা দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আনোয়ার হোসেনের সমর্থকদের ওপর পুনরায় হামলা চালায়।

হামলাকারীরা আশপাশের এলাকায় তান্ডব চালায়। এ সময় একটি টিনসেট ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় ৪৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে টেক্সটাইল শ্রমিক মুজিবুর রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

অন্য আহতরা হলেন ইউসুফ (৩৩), তানভীর (৩৫), অমি (২৫), আলী মঞ্জুর (৪৫), হাবিব (৫০), খোরশেদ (৩৫), জোবায়ের (২৫), জাহাঙ্গীর (৫৫), মতিন, আলমগীর (৩১) হিমেল (২৪), রাসেল (১৯), সিদ্দিক (২৮) , রকিবুল ২৭), ইমরান (১৯),সাদ্দাম (৩৩), মিয়াজান (২২), আরজ আলী (৪৮), সরাফত (৩৫), রাজ (২৫), শাহেদ (৩৩), তারিক (২৪), মোবারক (৩২), জসিম (৩৭), ইলিয়াছ (৩৮), সোবহান (৪১) ও মোমেন (৪৭)সহ ৩৫ জন আহত হয়। আহতদের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ‘গ’ সার্কেল মাহিন ফরাজী, নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার ও তারাব পৌর নির্বাচন রিটার্নিং অফিসার মতিয়ুর রহমান, রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর পূর্ব নির্ধারিত গণসংযোগে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রুহুল আমিনের নিয়োজিত বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমার কর্মী সমর্থকদের উপর দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। আমার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রুহুল আমিন মিয়া বলেন, আমার নির্বাচনী গণসংযোগে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। নির্বাচনী মাঠে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় তারা এ হামলা চালিয়েছে। জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যারা এ অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা পৃথক মামলায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ৬ জনকে আদালতে পাঠানোর পর হাজতখানায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রুহুল আমিন মিয়া ও আনোয়ার হোসেন নিজেরা কোলাকুলি করে কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানকে বলেন আমরা বাহিরে অমিল থাকলেও এখানে মিলেই আছি। কোলাকুলি করছি। আমাদের জামিনের ব্যবস্থা করেন। আর কোন গোলযোগ হবে না এলাকায়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে আমাদের তারাব পৌরসভায় ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here