উত্তর অঞ্চলে যমুনার পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ উত্তরের পাহাড়ি ঢলে ও বৃষ্টিপাতে বগুড়া সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। বিপদসীমার কাছে পানি থাকায় নদী এলাকার কাছের পাট ও ধইঞ্চার ক্ষেত ক্ষতির মুখে পড়েছে। পানিতে আক্রান্ত  ফসলগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছে স্থানীয় কৃষকরা।

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া জানিয়েছেন, রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনা নদীতে সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৯৭ সেন্টিমিটার, এবং দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেড়ে দাড়িয়েছে ১৭ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে রবিবার সকাল ৬টা অবদি বাঙালি নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৫. ৭৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ১৫.৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত কয়েক দিনে নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার দক্ষিণ শংকরপুর, পূর্ব ধারাবর্ষা, পশ্চিম ধারাবর্ষা, কেষ্টিয়ারচর, কোমরপুর, চানবাড়ী, মাঝবাড়ী, কালাইহাটা, পৌতিবাড়ী, চর মাঝিরা, হাতিয়া বাড়ী, কালিয়ান, আগ বোহাইল, নিজ বোহাইল, আওলাকান্দি, ভাংগারছেও উত্তর বেণীপুর, দক্ষিণ বেণীপুর, মিঠনেরপাড়া, কাজলা, বাওইটোনা, কুড়িপাড়া, পাকেরদহ, উত্তর টেংরাকুড়া, দক্ষিণ টেংরাকুড়া, পাকুড়িয়া, ময়ুরেরচর, ট্যাকামাগুড়া, চর ঘাগুয়া, জামথল, বেড়াপাঁচবাড়ীয়া ফাজিলপুর, বহুলাডাঙ্গা, চালুয়াবাড়ী, আওচারপাড়া, সুজালিরপাড়া, শিমুলতাইড়, তেলিগাড়ী, কাকালীহাতা, হরিরামপুর, ভাংগরগাছা, ধারাবরির্ষা, বিরামের পাঁচগাছি, হাটবাড়ী, দলিকা, মানিকদাইড়, কর্ণিবাড়ী, শনপচা, মুলবাড়ী, নান্দিনাচর, ডাকাতমারা, তালতলা, মিলনপুর, শালুখা, চর বাটিয়া, গজারিয়া, দারুনা, হাটশেরপুর, ধনারপাড়া, শিমুলবাড়ী, চকরতিনাথ, করমজাপাড়া, নয়াপাড়া, কর্ণিবাড়ী, ধরবন্ধ, দিঘাপাড়া ও ক্ষেপির পাড়াসহ ১১২টি চরের নিম্নাঞ্চল যমুনা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এসব চরগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকার পশুচারণভূমি পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে গেছে সবুজ ঘাস। ফলে ঘাসের অভাবে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ সবধরনের গৃহপালিত পশুগুলো খাদ্য সংকটের দিকে এগুচ্ছে। পানি বৃদ্ধিতে বন্যার আশঙ্কায় পাট কেটে জাগ দিয়ে রাখা পাটগুলো বিভিন্ন চরাঞ্চলগুলো থেকে ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাটের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উপজেলার ৫০০ হেক্টর পাট, ১৫০ হেক্টর আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

এছাড়া ধৈঞ্চা, কাউন, তিলসহ অন্যান্য ফসল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।আগাম বন্যায় তারা অপরিপক্ব পাট কর্তন করছেন। এর ফলে তারা শতকরা ৭৫ ভাগ আঁশ কম পাবেন। ফলে এ অঞ্চলে পাটের উৎপাদন কয়েকগুণ কম হবে। এছাড়া তাদের ফলানো চার ভাগের একভাগ পাট পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন।সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, বিভিন্ন এলাকা হতে কৃষকের পাট এবং ধইঞ্চাসহ কয়েকটি ফসল নিমজ্জিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। খবর পাওয়ার পর ওই সব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় ২৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। চারদিকে পানি ওঠায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে ছাত্র-ছাত্রীরা নানাবিধ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।উপজেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত উপজেলার ২০০ বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, আগামী আরো ২/৩ দিন ২০-২৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়তে পারে। আগামী ৭ দিন পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার উপরেই থাকবে। এবার নদীর পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এতে করে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলগুলোই প্লাবিত হবে। পানি বাড়লেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনের কোনো আশঙ্কা নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here