মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া শাখা নদীতে ব্রীজ না থাকায় হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ আনিসুর রহমান রলিন জেলা প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের নতুন বসুরচর-বড় বসুরচর এর মাঝখানে মেঘনা নদীর শাখার উপর একটি ব্রীজের অভাবে দূর্ভোগে রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলা ইমামপুর ইউনিয়নের চর কালীপুরা ও ষোলআনী দিয়ে মেঘনা নদী হতে এই শাখা নদীটি পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে বড় কালীপুরা, চৌদ্দ কাহনিয়া, চর চৌদ্দ কাহনিয়া, কদমতলী হয়ে নতুন বসুরচর ও বড় বসুর চর এর মাঝখান দিয়ে গোমতী নদীর সাথে মিশেছে।

এই নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রামসহ চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কালীবাজার সংলগ্ন গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ। মেঘনার শাখা এই নদীর উপর একটি সেতুর দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। নদীর দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে বসুরচর পাঁচগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে উত্তরের গ্রাম নতুন বসুরচর, চরচাষী, নতুন চরচাষীর ছাত্র/ছাত্রী পড়াশোনা করতে যায়। আর দক্ষিণ পাড়ের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চ শিক্ষা, চিকিৎসা সেবার জন্য আসতে হয় এপাড়ে।

উত্তর পাড়ে বাউশিয়া পাখি পয়েন্ট থেকে নতুন বসুরচর লঞ্চ টার্মিনাল পর্যন্ত রয়েছে পাকা রাস্তা আর দক্ষিণ পাড়ে বড় বসুরচর থেকে ভাষারচর পর্যন্ত পাকা রাস্তা। সেতু না থাকায় দুই পাড়ের মানুষের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন বসুরচর ফকির কোম্পানী সংলগ্ন লঞ্চঘাট টার্মিনালে (যদিও এখন আর কোন লঞ্চ যাতায়াত করে না) অনেকগুলো ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বাঁধা রয়েছে। এই ট্রলারই ওপারের গ্রামগুলোতে যাতায়াতের একমাত্র বাহন।

রাস্তা থেকে টার্মিনালে যেতে আবার উঁচু কাঠের সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়। সিঁড়ি বেয়ে নামছিলেন দত্তের চর গ্রামের বৃদ্ধা আইমুন নেসা। তিনি জানান, এই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা অনেক কষ্টের। একবার পা পিছলে পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে তিন মাস হাসপাতালে ছিলাম। বড় বসুরচর গ্রামের দিন মুজুর আলী হোসেন জানান, দিনে নৌকা থাকলেও রাতের আঁধারে সাঁতার কেটে নদী পার হওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ নাই। কাজ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের পর আসলে পড়তে হয় বিপদে। ভাষারচর গ্রামের আলাউদ্দিন জানান, স্বাধীনতার পর থেকে বাপ-দাদারা এই সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছেন।

প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নেতারা প্রতিশ্রুতিও দেন। নির্বাচনের পর তারা সে প্রতিশ্রুতি ভুলে যান। কদমতলী গ্রামের বৃদ্ধ খালেক মিয়া (৮০) বলেন, বছর দুই আগে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে পড়ে যাই, আজ পঙ্গু হয়ে বসে আছি। নতুন চরচাষী গ্রামের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা জানান, বর্ষাকালে নদী পারাপারের সময় অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। অনেক সময় ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে বৃষ্টিতে বই খাতা ভিজে যায়।

এ বিষয়ে গুয়াগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, মহামারী করোনার কারণে অনেক কিছু পিছিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে এই ব্রীজ নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট সম্পূর্ণ হয়েছে। আশা করি, অচিরেই এই ব্রীজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, গজারিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফুলদি নদী ও গুয়াগাছিয়ার মেঘনা নদীর এই শাখার উপর সেতু নির্মাণ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি।

এই সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচনের জন্য যাচাই-বাছাই এর কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি, দ্রুত এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। স্থানীয় সাংসদ এড. মৃণাল কান্তি দাস বলেন, এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ কর্তৃপক্ষকে ডিও লেটার দিয়েছি। এখানে শিগগির একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। উপজেলা প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন,গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার একটি পর্যবেক্ষণ টিম সরেজমিনে এসে এই সেতুর জন্য জরিপ করে গেছেন। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here