পুলিশ হত্যা মামলা থেকে কালাপাহাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দিল পিবিআই

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে কনস্টেবল রুবেল হত্যা মামলা থেকে প্রধান আসামী কালাপাহাড়িয়া ইউপি’র আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান স্বপনকে অব্যাহতি দিয়েছেন পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চার আসামি তাঁদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও চেয়ারম্যান নিজে গুলি করে হত্যার কথা উল্লেখ করেছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কনস্টেবল রুবেল আহমেদ হত্যার ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল তাঁর পরিবার। তবে ঘটনার তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

নিহত রুবেলের পরিবার বলছে, স্থানীয় এমপির ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ওরফে স্বপনকে অব্যাহতি দিয়েছে পিবিআই। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রভাবিত হয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁদের।

কালাপাহাড়িয়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান সাইফুল আড়াইহাজারের এম নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত। তবে এমপি বাবু বলেছেন, চেয়ারম্যান ভালো, ভদ্র ছেলে। তাঁকে ষড়যন্ত্র করে মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। পরে মামলার বাদী নিজেই চেয়ারম্যানের সঙ্গে আপস করেছেন। এখানে কেউ প্রভাববিস্তার করেনি। অর্থের লেনদেনও হয়নি।

ঈদের ছুটিতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে যান রুবেল আহমেদ। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপ স্বপন চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা রূপ মিয়া গ্রুপের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। চেয়ারম্যান কনস্টেবল রুবেল আহমদকে গুলি করে হত্যা করে।

প্রথমে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারীর রুমে আশ্রুয় ও পরে ভারতে পালিয়ে যায়। ওই দিনই তাঁর বড় ভাই কামাল আহমেদ কালাপাহাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলায় আরও ৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। দুই বছরের বেশি সময় অনুসন্ধান শেষে পিবিআই গত ৯ জানুয়ারি ৩৫ জনকে দায়ী করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয় চেয়ারম্যান সাইফুল।

সাইফুল ইসলাম কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। কিন্তু দলীয় মনোনয়নেই তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছেন। আর নিহত কনস্টেবল রুবেল আহমদের বাবা রূপ মিয়া কালাপাহাড়িয়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তিনি ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন।

আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে পিবিআই বলেছে, কালাপাহাড়িয়া গ্রামের লোকজন চারটি দলে বিভক্ত। রূপ মিয়া একটি দলের নেতৃত্ব দিতেন। বাকিদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। ২০১৭ সালে কোরবানির ঈদের আগে স্থানীয় গরুর হাটের হাসিলের টাকা গোনাকে কেন্দ্র করে এই চারটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাধে। এর জের ধরে ঘটনার দিন তিন পক্ষের লোকজন এক হয়ে রামদা, চায়নিজ কুড়াল, চাপাতি, টেঁটাসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে কনস্টেবল রুবেল আহমদের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় নিহত হন রুবেল।

কনস্টেবল রুবেল হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. পাভেল, মো. শাহিন, মো. ইয়াসিন ও সিরাজ মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই চারজনই ঘটনার সঙ্গে চেয়ারম্যান সাইফুলের সম্পৃক্ততার কথা বলেন। সিরাজ মিয়া তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, চেয়ারম্যান সাইফুল বিরোধ মীমাংসার জন্য রূপ মিয়ার কাছে দুবার লোক পাঠান। কিন্তু রূপ মিয়া তাতে রাজি না হওয়ায় সাইফুল ক্ষিপ্ত হন। ঘটনার আগের দিন তাঁর ডাকে ২০০/৩০০ লোক একত্র হয়। সেখানে সাইফুল পরদিন রূপ মিয়ার বাড়িতে হামলার নির্দেশ দেন।

রূপ মিয়ার অভিযোগ, ঘটনার পর ছয় মাস তাঁরা সাইফুল ও এমপি নজরুল ইসলামের কারণে বাড়ি থাকতে পারেননি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুরো তদন্তটা করেছেন তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান তদন্ত কর্মকর্তাকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিগুলো একটি আরেকটিকে সমর্থন করে না। নিজস্ব তদন্তে তাঁরা চেয়ারম্যানের ঘটনাস্থলে না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।

এ ক্ষেত্রে কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়া বা আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। তদন্তে যা এসেছে সেই ভিত্তিতেই তাঁরা অভিযোগপত্র দিয়েছেন এবং আদালত সেটি গ্রহণ করেছেন। অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ এবং এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here