শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের বেহালদশা জনদুর্ভোগ চরমে।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ৩৫ কিঃমিঃ এর মধ্যে নারায়নপুর থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের সম্পুর্ন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাজুড়ে বড় বড় গর্ত হয়ে মরন ফাদে পরিনত হয়েছে। সড়কের বেহালদশার কারনে পণ্যবাহী যানবাহন চালকরা পড়েছে চরম দুভোর্গে। রাস্তার এমন অবস্থা দাড়িয়েছে জনসাধারন পায়ে হেটে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনেই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঠিকাদারের গাফলতির কারনে রাস্তার উন্নয়ন কাজ স্থাবির হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে সঠিক ভাবে বলতে পারছে না সওজ কর্মকর্তারাও।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় প্রায় ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে নারায়নপুর থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দকের কারনে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। এ আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন খুলনা, চট্রগ্রাম, সাতক্ষিরা, বেনাপোল, যশোহর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলের ২১টি জেলায় শত শত ভারী যানবাহন ও যাত্রিবাহী বাস চলাচল করে। ফলে রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

বড় বড় গর্তের কারনে রাস্তা দিয়ে যানবাহন দুরের কথা জনসাধারন চলাচল করতে পারছেনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই বড় বড় গর্তে পানি জমে ডোবায় পরিনত হয়। আর এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গেলে ময়লা ও কাদা ছিটে আশ পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেয়ে যায়।  শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কের ৩৫ কিঃমিঃ এর মধ্যে ২৭ কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজ করতে তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহবান করা হয়। কাজ পায় তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মনোহর বাজার হতে নারায়নপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সংস্কারে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ব্যয় নির্ধারন করা হয় ২৫ কোটি টাকা। শহীদ ব্রাদার্স, এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা জেভি ও র‌্যাব আরসি সরদার এন্টার প্রাইজ জেভি নামের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ।

এর মধ্যে র‌্যাব আরসি, সরদার এন্টার প্রাইজ জেভি নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ পাওয়ার পর জামানত ফেলে পালিয়ে যায়।আর একই সময়ে ওই সড়কের নারায়নপুর হতে নরসিংহপুর পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটারের জন্য পরবর্তীতে ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০১৭ সালে আগস্টে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ওই সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করার জন্য ১৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারন করা হয়। ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স জানুয়ারী পর্যন্ত সড়কের ১৫ শতাংশ কাজ শেষ করে। এরপর মেয়াদের ৬ মাস পেরিয়ে গেছে কিন্তু আর কোন কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সাড়ে ১২কিলোমিটার সড়ক এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই নারায়নপুর থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত বেহাল সড়কে চলতে গিয়ে বিকল হচ্ছে গাড়ি।

সড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দে আটকে থাকছে দিনের পর দিন। সাড়িবদ্ধ ভাবে অপেক্ষায় থাকছে শত শত যানবাহন।যানবাহন চলাচল উপযোগী করে তোলার জন্য প্রতিনিয়তই সড়ক ও জনপথ বিভাগে নিজেদের উদ্যোগে ইটের সলিং করে যাচ্ছে। তারা কোন কুল কিনার পাচ্ছেনা। প্রতিদিনই রাস্তায় বড় বড় গর্তে পড়ে মাল বোঝাই যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তার পরেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করছেনা। এ সব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কোন ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন যাবত শরীয়তপুর সড়ক বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী পদটি শূন্য থাকায় রাস্তাটির অবস্থা আরো বেশী খারাপ অবস্থায় পরিনত হয়েছে। এ অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে রাস্তাটি পূর্ন নির্মানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

ভোমরা বন্দর থেকে পেঁয়াজ নিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছেন সাব্বির হোসেন বলেন, কাঁঠালবাড়ি বা দৌলদিয়া ঘুরে গেলে ২ থেকে ৩শ কিলোমিটার পথ বেশি পাড়ি দিতে হয়। ওই পথে যানজট আর চাঁদাবাজি বেশি। তাই এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করি। কিন্তু নারায়নপুর থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত এখন আর গাড়ি নিয়ে যেতে সাহস পাই না। একবার ফেঁসে গেলে দুই তিন দিন বসে থাকতে হয়। গাড়ি উঠাতে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা লাগে।
কামাল মিয়া বলেন, অনেক ভোগান্তি হচ্ছে, রাস্তার অবস্থা পুকুরের মত হয়ে গেছে। অনেক ভয় লাগে। কখন যে গাড়ি উল্টে যায় বলা যায় না। নরসিংহপুর ফেরিঘাটের বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের পাঁচটি ফেরি রয়েছে। গাড়ি পারাপারে কোন সমস্যা নেই। গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অনেক সময় ঘাটে কোন গাড়িও পাই না। আগের তুলনা এখন রাজস্ব কমে গেছে ।

সাতক্ষিরা থেকে চট্রগ্রামগামী ট্রাকচালক আলী হায়দার বলেন, গত ২ বছর যাবত সড়কটি এতই খারাপ যে গাড়ি চালানো খুবই কষ্ট কর। একটু জোরে গাড়ি চালানো যাচ্ছেনা। তাহলে উল্টে পড়ে যায়। অনেক কষ্টে যাতায়ত করি। মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। মেরামতের মালামাল ও ভাল দেয়না। কয়েকদিন গেলে আবারো রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। বেনাপোল থেকে আসা বাসের চালক আক্কাস আলী খান বলেন, জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে যাত্রি নিয়ে চলাচল করি। এ রাস্তায় অনেক সময় জীবন ও মাল বিনষ্ট হতে পারে। যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা এ জন্য আতংকে থাকি। রাস্তাটি ঠিক করার কেউ নেই।

খুলনা থেকে চট্রগ্রাম গামী কাচামাল বোঝাই ট্রাক চালক বলেন, এ রাস্তা দিয়ে যাতায়ত যেমন ঝুকিঁ। তেমন মালামাল ক্ষতি ও হচ্ছে। জ্বালানী তেল বেশী খরচ হচ্ছে এবং সময় ও বেশী লাগছে। রাস্তায় বসে থাকার কারনে মাল পচে যাচ্ছে। খুলনা থেকে ছেড়ে আশা শতাব্দি বাসের যাত্রি রোকেয়া বেগম বলেন, এ রাস্তাটি এতই ঝুকিপূর্ন যে জীবন বাজি রেখে চলতে হচ্ছে। আতংকে আছি কখন যেন গাড়ি উল্টে পড়ে। রাস্তাটি জরুরী ঠিক করা দরকার। তা নাহলে মানুষের চরম দুর্ভোগ হবে।  আংগারিয়া বাজারের ব্যবসায়ী স্বপন সাহা বলেন, এ সড়কটি ২ বছর যাবত খুবই খারাপ অবস্থা। রাস্তা দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা। এ কারনে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। মালামাল পরিবহন করা কষ্টকর। জরুরী ভিত্তিতে রাস্তাটির মেরামত কাজের গতি বাড়ানো দরকার।

আলুরবাজার ফেরীঘাটে কর্মরত বিআই ডব্লিউটিসির সহ ম্যানেজার মোঃ আবদুল মোমেন বলেন, রাস্তাটি এতই খারাপ যে অনেক যানবাহন এ রাস্তায় আসেনা। কেননা রাস্তায় গর্ত থাকার কারনে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ঘটছে। এ কারনে এ ঘাটে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।মানুষের ও দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। রাস্তাটি জরুরী সংস্কার করা দরকার।
ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারদেরকে বার বার ফোন করে ও পাওয়া যায় যায়নি।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, রাস্তার বেইজ খারাপ থাকার কারনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজের জামানত ফেলে পালিয়েছে। পরবর্তীতে নুতন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারাও সামান্য কিছু কাজ করে আর কোন কাজ করছেনা। রাস্তাটির অবস্থা খারপ থাকায় যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী করে তুলতে আমরা নিজস্ব উদ্যোগে ইটের সলিং কাজ অব্যাহত রেখেছি। রাস্তাটি নুতন ডিজাইনে নির্মান কাজ করা হলে রাস্তাটি টিকসই হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here