রংপুরের নদ-নদীতে পানি হঠাৎ বৃদ্ধি,৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মুষলধারে বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, উলিপুর, রৌমারী, চিলমারীসহ রংপুর অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত, দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। পানির কারণে প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে পারছে না মানুষজন। জন-জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

এতে বড় সমস্যায় পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা। চারদিকে পানির কারণে গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামারি ও চাষিরা। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের অভিযোগ, এখনও মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তা। তবে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের আশ্বাস, দুর্গত এলাকার তালিকা তৈরি করে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জানা যায়, গত কয়েকদিনে মূষলধারে বৃষ্টি আর উজানের পানিতে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, করতোয়া নদীতে পানি বেড়ে যায়। লালমনিরহাটের দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পাশাপাশি এতে করে রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর ছোট নদ-নদীতেও পানি বাড়তে শুরু করেছে। কিছু কিছু স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী গ্রামের মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালুর বস্তা দিয়ে চেষ্টা চলছে ভাঙন ঠেকানোর। নতুন করে ভাঙন আতঙ্কে অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ, চর ইচলী, বাগেরহাট, জয়রামওঝা, ইসবকুল, আলমবিদিতর ইউনিয়নের সাউথপাড়া, পাইকান, ব্যাংকপাড়া, হাজীপাড়া, আলমবিদিতরসহ কোলকোন্দ, গজঘন্টা, নোহালী, মর্ণেয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে পাটসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

কাউনিয়া উপজেলা টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় তিস্তা নদীতে পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় ইউপির বিশ্বনাথ, চরগনাই, হয়বৎখা, বুড়িরহাটসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গাজীরহাট, নিজপাড়া, গদাধর, ঢুষমারা, হরিশ্বরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. উলফৎ আরা বেগম বলেন বন্যায় পানিবন্দি মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সার্বক্ষনিক খোঁজ রাখছি। বন্যার ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের প্রস্তুুতি নেয়া আছে। জরুরি অবস্থায় সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুস পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সানিয়াজান, সিঙ্গিমারী, পাটিকাপাড়া, সির্ন্দুনা, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর, সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ, গোকুন্ডা ইউনিয়ন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এবং কালীগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষজন বন্যার আশঙ্কায় সতর্কাবস্থায় রয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চর শংকরদহ গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে ঘরের চৌকিতে আশ্রয় নিয়েছি। তিস্তা নদীর সাথে পানি বেড়ে গেলে বাড়িতে থাকা যাবে না।

একই উপজেলার ইচলী গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন পানি বাড়ির আঙ্গিনায় ঢুকে গেছে। ঘরের বাহিরে বের হওয়া যাচ্ছে না। পানির জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। কাজ না করলে খাবো কি। এখন পর্যন্ত কোন মেম্বার-চেয়ারম্যান আমাদের সাহায্য করতে আসে নাই। লহ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হাদী বলেন, তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আমার ইউনিয়নের চর এলাকার ১০ হাজার মানুষ পান্দিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদেরকে ত্রাণ সহায়তা দিতে উপজেলায় যোগাযোগে চেষ্টা চালাচ্ছি। তিস্তার পানি যেভাবে তেড়ে আসছে, তাতে পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিতে পারে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর হক জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানির প্রবল স্রোতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যারেজ এলাকার ভাটির চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, ৪৮ ঘন্টায় রংপুরসহ আশপাশ এলাকায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন অলিগলি প্লাবিত হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here