গৌরীপুরে ঈদে ভিজিএফ চাল নিলো মৃতরা !

0
গৌরীপুরে ঈদে ভিজিএফ চাল নিলো মৃতরা !

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মো:মাহফুজুর রহমান, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : একই নাম-একাধিকবার ও মৃতদের নাম তালিকাভূক্ত করে পবিত্র ঈদুল ফিতরে হতদরিদ্রদের জন্য দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুস্থদের খাদ্য সহায়তা (ভিজিএফ) কর্মসূচীর চাল লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নে। মারা যাওয়ার পরেও পবিত্র ঈদুল ফিতরে চাল বিতরণ তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, তাদের নামে চাল বিতরণ করা হয়েছে!

তবে মৃতদের স্বজনরাও এ চাল নেয়নি, এ চাল গেলো কোথায়? এ প্রশ্ন সবার মুখেমুখে! ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ২হাজার ৪৭১জনের তালিকা অনুযায়ী গত ৮ এপ্রিল সোমবার ২৪ মেট্টিক টন ৭১০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়। এ তালিকা অনুমোদন করেন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. তাবারোক হোসেন সরকার। তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ কার্যক্রম তদারকি করেন উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার কমল কুমার রায়। তবে বিতরণকালীন সময়ে কোনো তালিকা খোঁজে পাওয়া যায়নি।

ভিজিএফ তালিকা প্রণয়নে নীতিমালা চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে সেই তালিকায় মৃত ব্যক্তিদেরও নাম রয়েছে। কয়েক বছর আগে মারা গেলেও প্রতিবার ঈদে তাদের নামে উত্তোলন করা হচ্ছে ভিজিএফ চাল। এ খবরে এবার ক্ষুব্দ মৃতদের পরিবারও। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন ১১৭নং ক্রমিকের গৌরী রানী, ২২১নং ক্রমিকের মুলূয়া রবিদাস, ৩০৫নং ক্রমিকের জালাল উদ্দিন, ৬০নং ক্রমিকে পুলিশের নেছা, ৪৭৮নং ক্রমিকে মদিনা আক্তার, ৪৮৬নং ক্রমিকে ফাতেমা আক্তার, ৫০৯নং ক্রমিকে আবুল কাসেম, ৬০০ ক্রমিকে জমিলা খাতুন, ৬০২নং ক্রমিকে রক্ষী রানী পণ্ডিত, ৬৮৭নং ক্রমিকে নাজিম উদ্দিন, ৭৬৫নং ক্রমিকে আব্দুল হেকিম, ৮০০ক্রমিকে রেখা আক্তার, ৮২১ ক্রমিকে মো. রশিদ, ৯৫৬ ক্রমিকে তোতা মিয়া, ১৭৭১নং ক্রমিকে সৈয়দ আলী (মৃত হওয়ার পরেও ১৮৮৩নং ও ১৭৭১নং ক্রমিকে ডবল নাম), ২০৪৩ আব্দুস সাত্তার, ২১০৯ দবির উদ্দিন, ২১৩৪ মহি উদ্দিন, ২১৭২ হীরা লাল, ২৩৪২নং ক্রমিকের আব্দুল কাদির, ২৩৭২নং ক্রমিকের রোকেয়া খাতুন, ২৪৫৯নং ক্রমিকের নারকিছ, ২৪৬৩নং ক্রমিকে ময়জ উদ্দিন, ২৪৬৪নং ক্রমিকে আব্দুল জব্বারসহ অর্ধ শতাধিক মৃত মানুষের নামের সন্ধান মিলেছে।

অপরদিকে প্রবাসে থেকেও ২৩২৩নং ক্রমিকের মোছা. পারভীন বেগম প্রতিবার ঈদে চাল উত্তোলন করছেন। তিনি বড় কালিহর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। এছাড়াও প্রবাসে থাকা, অন্যত্র চলে যাওয়া ও খোঁজে না পাওয়ার তালিকায় রয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। এদিকে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে লামাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের স্ত্রী মোছা. সাহেরা খাতুনের নাম রয়েছে ১৪৭৮ ও ১৫৮১নং ক্রমিকে, জাহেরা খাতুনের নাম রয়েছে ১৪৭৯ ও ১৫৮২নং ক্রমিকে, মো. আতাউর রহমানের নাম রয়েছে ১৪৮০ ও ১৫৮৩নং ক্রমিকে, জহুরা খাতুন ১৪৮১ ও ১৫৮৪, মোছা. খায়রুন নাহার ১৪৮২ ও ১৫৮৫, মোছা. আয়েশা খাতুন ১৪৮৩ ও ১৫৮৬, জরিনা খাতুন ১৪৮৪ ও ১৫৮৭, আমেনা খাতুন ১৪৮৭ ও ১৫৮৮, মো. দুলাল মিয়া ১৫০৭ ও ১৫৯৪, লিপি আক্তার ১৫২৪ ও ১৫৯৯, বাচ্চু মিয়া ১৫২৬ ও ১৬০০, আব্দুর রাজ্জাক ১৫২৮ ও ১৬০১, মো. দুলাল মিয়া ১৫৩০ ও ১৬০২, মো. আবুল কাসেম ১৫৩২ ও ১৬০৩, মো. লাল মিয়া ১৫৩৩ ও ১৬০৪, মো. জুয়েল মিয়া ১৩৩৫ ও ১৬০৫, বেলুনা আক্তার ১৫৩৬ ও ১৬০৬, মো. ইদ্রিছ মিয়া ১৫৩৭ ও ১৬০৭, গিয়াস উদ্দিন ১৫৩৯ ও ১৬০৮, মো. হারুন অর রশিদ ১৫৪১ ও ১৬০৯, মোছা. মিনা খাতুন ১৫৪৩ ও ১৬১০, জামাল মিয়া ১৫৪৪ ও ১৬১১, মোছা. কুলসুমা ১৫৪৬ ও ১৬১২, মো. নুর ইসলাম ১৫৪৭ ও ১৬১৩, মোছা. রাশিদা বেগম ১৫৪৮ ও ১৬১৪, মোছা. রেহেনা খাতুন ১৫৪৯ ও ১৬১৫, মো. আকবর আলী ১৫৫০ ও ১৬১৬, মোছা. রিতা বেগম ১৭৪৭ ও ১৮৬১, সালেমা বেগম ১৪৪৮ ও ১৮৬২, নেকবর আলী ১৪৪৯ ও ১৮৬৩, মোছা. হোসনে আরা ১৭৫০ ও ১৮৬৪, সুফিয়া খাতুন ১৭৫১ ও ১৮৬৫, আল আমিন ১৭৫২ ও ১৮৬৬, নুরুন নাহার বেগম ১৭৫৩ ও ১৮৬৭, সাহেরা খাতুন ১৭৫৪ ও ১৮৬৮, রাজিয়া খাতুন ১৭৫৫ ও ১৯৬৯, মনোয়ারা বেগম ১৭৫৬ ও ১৮৭০, বজেন্দ্র সরকার ১৭৫৭ ও ১৮৭১, ফজলু ১৭৫৮ ও ১৮৭২, গোবিন্দ সরকার ১৭৬১ ও ১৮৭৩, নুরুন্নাহার বেগম ১৭৬২ ও ১৮৭৪, সাহেরা খাতুন ১৭৬৩ ও ১৮৭৫, ইউসুফ আলী ১৭৬৪ ও ১৮৭৬, আব্দুল মালেক ১৭৬৫ ও ১৮৭৭, মোছা. নুরুন্নাহার ১৭৬৬ ও ১৮৭৮, ফখর উদ্দিন ১৭৬৭ ও ১৮৭৯, মোছা. শিল্পী ১৭৬৮ ও ১৮৮০, অজিহা বেগম ১৭৬৯ ও ১৮৮১, আছমা আক্তার ১৭৭০ ও ১৮৮২, তাছলিমা আক্তার ১৭৭২ ও ১৮৮৪, কল্পনা আক্তার ১৭৭৩ ও ১৮৮৫, বেদেনা আক্তার ১৭৭৪ ও ১৮৭৬, মো. রব্বানী ১৭৭৫ ও ১৮৮৭, সুফিয়া খাতুন ১৭৭৬ ও ১৮৮৮, আব্দুর রাশিদ ১৭৭৭ ও ১৮৮৯, ফারুক ১৭৭৮ ও ১৮৯০, মো. হারেস মিয়া ১৭৭৯ ও ১৮৯১, মঞ্জুরা বেগম ১৭৮০ ও ১৮৯২, সুলতান মিয়া ১৭৮৪ ও ১৯৯৪, মো. আব্দুল মজিদ ১৭৮৫ ও ১৮৯৫, রফিকুল ইসলাম ১৭৮৬ ও ১৮৯৬, আকবর আলী ১৭৮৭ ও ১৮৯৭, মো. মাসুম মিয়া ১৭৮৮ ও ১৮৯৮, মোছা. বিউটি বেগম ১৭৮৯ ও ১৮৯৯, মোছা. মমতা আক্তার ১৭৯০ ও ১৯০০, মো. এমদাদুল ১৭৯১ ও ১৯০১, জুলেহা খাতুন ১৭৯২ ও ১৯০২, জোহরা বেগমের নামও ১৭৯৩ ও ১৯০৩ ক্রমিকে রয়েছে।

এভাবে ৯টি ওয়ার্ডে ২হাজার ৪৭১জনের মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম ডবল তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. তাবারোক হোসেন সরকার জানান, তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এ ধরণের ভুলত্রুটি হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইউপি সদস্যদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী সদস্য সচিব তালিকা প্রস্তুত করেছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতে হতদরিদ্ররা চাল পায়, সে জন্য তাৎক্ষনিকভাবে তালিকা অনুমোদন করা হয়েছে। প্রত্যেক মেম্বারকে সমহারে কার্ড (চালের স্লিপ) বিতরণ করা হয়। মৃতদের নাম ও ডাবলিং হয়ে থাকলে পরবর্তীতে সংশোধন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার কমল কুমার রায় জানান, বিতরণের সময় তালিকা লাগে না। তালিকা উপজেলায় জমা আছে। চালের স্লিপ (কার্ড) দিয়ে চাল বিতরণ করা হয়েছে। আমার সামনেই ২৪ মেট্টিকটন চাল গুদামজাত ছিলো। বিতরণ শেষে ১১ বস্তা চাল ছিলো। অপরদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়ম ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ যায়। বিতরণকালে এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে সুবিধাভোগীদের দেয়া চালের মধ্যে ২৯জনের চাল ওজন করা হয়।

এরমধ্যে ১৪জনের চাল ছিলো ৭ কেজি থেকে ৭ কেজি ৮শ গ্রাম, ৮জনের চাল ছিলো ৮ কেজি থেকে ৯ কেজি আর ৭জনের চাল ছিলো ৯ কেজি থেকে ৯ কেজি ৪শ গ্রাম। এ দিকে চাল ওজনে কম দেয়ায় সুবিধাভোগীরা একাধিকবার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে। তাদের প্রতিবাদের মুখে কম দেয়া সুবিধাভোগীদের মাঝে চাল দিতে বাধ্য হন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তদারকিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কমল কুমার রায়।

এ ইউনিয়নের পূর্বকাউরাট গ্রামের আব্দুল কদ্দুসের পুত্র মো. অন্তর মিয়া জানান, স্লিপ হতদরিদ্র মানুষকে না দিয়ে কালো বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন পরিষদের তালিকায় মৃত মানুষের নামও আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here