দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটি।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটি। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগেরও কমিটি আটকে রয়েছে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে। ইতোমধ্যে জেলা যুবলীগ মাথা ছাড়া হয়ে পড়েছেন। শীর্ষ পদে থাকা নেতারা যৌবন থেকে বার্ধক্যে পরিণত হয়ে ঠাঁই নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগে। মহানগরের নেতারা বার্ধক্যে পরিণত না হলেও বার্ধক্যের কাছাকাছি চলে গেছেন।

আর এই দীর্ঘ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি আটকে থাকার পিছনে রয়েছে বহু টাকার ডিমান্ড। কয়েক দফায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি কেন্দ্রে জমা দিলেও কেন্দ্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের চাহিদামতো টাকা না দেয়ার কারণেই দীর্ঘ বছর ধরে আটকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ও মহানগর যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

জেলা ও মহানগর যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটির নবায়নের জন্য কয়েক দফায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের কাছে তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল। রাজধানী ঢাকার অভিজাত হোটেলে কয়েক দফায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতাদের সাথে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু কোন বেলায়ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন মিলেনি। আর এর পিছনে মূল কারণ হচ্ছে টাকা। কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটির জন্য প্রায় কোটি টাকা ডিমান্ড করেছিলেন। একই ভাবে মহানগর যুবলীগের কমিটির জন্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা দাবী করেছিলেন।

যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যুক্তি ছিল, তোমাদের এই টাকা লোকসান হবে না। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি দেয়ার সময় সেই টাকা উসুল করে নিতে পারবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা সেই টাকা দিতে রাজী হননি। ফলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটিও আর নবায়ন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। সেই দীর্ঘ বছরের পুরানো আর মাথা ছাড়া কমিটি দিয়েই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের কার্যক্রম। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটি আসার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনে আবদুল কাদির সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বৈরি সময়ে ওই সম্মেলনে ছিল আওয়ামীলীগের দুই পক্ষের অবস্থান। এছাড়াও সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা জাকিরুল আলম হেলালকে করা হয় সিনিয়র সহ-সভাপতি, আসিফ হোসেন মানুকে সহ-সভাপতি ও শাহ নিজামকে করা হয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এরপর আর নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি জেলা যুবলীগের।

তৎকালীন সময়ে জেলা যুবলীগের কমিটিতে পদে নেতারা অনেকেই মূল দলে ভিড়িয়েছেন। এদের মধ্যে শাহ নিজাম মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জাকিরুল আলম হেলালকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। একইভাবে অন্যদিকে আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুল কাদির জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পদে স্থান পেয়েছেন। অথচ এই জেলা যুবলীগের বিএনপির জোট সরকার আমল থেকে শুরু করে ১/১১ এর কঠিন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে বেশ ভূমিকা রেখেছিল। আর ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় সেই যুবলীগ এখন প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।

ফলে জেলা যুবলীগের নেতৃত্ব দেয়ার মতো চলমান কমিটিতে অবশিষ্ট কেউই নেই। আলোচনায় থাকা প্রত্যেককেই মূল দলে জায়গা করে দেয়া হয়েছে। আর তাই এবার নতুনদের সমন্বয়ে করা হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটি। নতুনদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: মোহসীন মিয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন। এদের মধ্যে থেকেই জেলা যুবলীগের শীর্ষ পদে আসার সম্ভাবনা বেশি।

সেই সাথে জেলা যুবলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা থানা কমিটিগুলোতেও যুবলীগের করুণ অবস্থা চলছে। সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন, গাজী মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাহআলম রুপম। কিন্তু জেলা যুবলীগ ওই কমিটি গঠনের দায়িত্বে থাকলেও রহস্যজনক কারণে কেন্দ্রীয় যুবলীগ বিতর্কিত রফিকুল ইসলাম নান্নুকে আহ্বায়ক করে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়। ওই কমিটি গঠনের বিষয়ে গাজী মজিবুর রহমান আদালতে একটি ঘোষণামূলক মামলাও দায়ের করেছেন। বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হাবিব আল মুজাহিদ পলু। এছাড়াও আর কাউকে যুবলীগ নেতা হিসেবে কোন কর্মসূচিতে দেখাও যায়না। পলু ছিলেন সবশেষ জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারী।

ফতুল্লা থানা যুবলীগ সভাপতি মীর সোহেল আলী ও সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম একটু সক্রিয় থাকলেও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগ বলতে আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতিকেই চিনে। ইতোমধ্যে মীর সোহেল আলী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ যুবলীগের নেই তেমন কোন আলোচনা। ফলে জেলা কমিটি হওয়ার পরপরই থানা কমিটি গুলোর নবায়ন করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here