প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মুঃ আঃ মোতালিব তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি॥ বরগুনার তালতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (ভারপ্রাপ্ত) দীপায়ন দাস শুভ’র বিরুদ্ধে গাফেলতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার আট মাসের কাজ এক রাতেই সেরে ফেলেছেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ১৫৪ টি নামজারি মিউটেশন আবেদনের মধ্যে ৭৪টি করেছেন খারিজ এবং ৬৩টি আবেদন তদন্তাধীণ রেখেছেন। ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকের কাছে এসিল্যান্ডে’র এমন কাজের গাফেলতির অভিযোগ দায়ের করেন।
তালতলী ভূমি অফিস কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, দীপায়ন দাস শুভ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর তালতলীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদটি শুন্য থাকায় ওই সময় থেকেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাস শুভ এ শুন্য পদে’র ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের একাধিক কর্মচারীরা জানান, তিনি ভূমি অফিসে তেমন যেতেন না। ফলে ভুমি অফিসের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। গত ৮ মাসে ভুমি অফিসে ১৫৪টি মিউটিশনের (নামজারি) আবেদন জমা হয়।
ওই আবেদনগুলোর মধ্যে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি গত ৮ মাসে মাত্র সতেরটি মিউটিশন নিষ্পত্তি করেছেন। অবশিষ্ট ১৩৭ টি আবেদন ফাইল বন্দি অবস্থায় পরে থাকে। এতে ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোঞে সৃষ্টি হয়। গত মাসের ২৯ আগষ্ট বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ তালতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অফিস পরিদর্শনে আসেন। জেলা প্রশাসক তালতলী ভূমি অফিস পরিদর্শনে আসার খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার দীপায়ন দাস শুভ’র তার কাজের গতিশীলতা দেখানোর জন্য অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মিউটিশন নিষ্পত্তির মৌখিক আদেশ দেন। অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা এক রাতেই বিভিন্ন তারিখ দেখিয়ে ৭৪টি মিউটিশন আবেদন খারিজ করে দেন।
অবশিষ্ট ৬৩ টি আবেদন তদন্তাধীন রাখেন। এদিকে জেলা প্রশাসক ভুমি অফিস পরিদর্শনে আসার খবর পেয়ে ভুক্তভোগীরা তার সাথে দেখা করতে আসেন এবং তার কাছে সহকারী কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) দীপায়ন দাশ শুভ’র কার্যক্রমের গাফেলাতির অভিযোগ করেন। বুধবার ভুক্তভোগীরা ভুমি অফিসে গিয়ে দেখেন তাদের নামজারি আবেদন আগেই খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। ভুক্তভোগী বাচ্চু হাওলাদার, তাসলিমা ও মংচোলেন বলেন, গত ৭ মাস পূর্বে মিউটেশন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে ভূমি অফিসে আবেদন করেছি। কিন্তু সহকারী কমিশনার কোন মিউটিশন নিষ্পত্তি করছেন না। মাসের পর মাস ফেলে রেখেছেন। অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, মিউটিশনের প্রতিবেদন করে জমা দেয়া হয়েছে কিন্তু সহকারী কমিশনার স্যার ফাইলে স্বাক্ষর করছেন না।
তবে বুধবার অফিসে গিয়ে দেখি আমাদের আবেদন ২/৩ মাস পূর্বে খারিজ করে দিয়েছেন। তারা আরো বলেন, বরগুনা জেলা প্রশাসক আসার খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) তার কাজের গাফেলতির অভিযোগ যেন প্রমানিত না হয় সেই জন্য আমাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্টু তদন্ত দাবী করছি। ওই অফিসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাস শুভ সহকারি কমিশনারের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার কার্যক্রমে গাফেলাতি রয়েছে। যার কারনে মিউটিশনের জন্য অনেক আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছি। মাত্র ১৫৪ নাম জারি আবেদনে প্রাথমিক স্বাক্ষর করেছেন তিনি। আমরা ওইগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে সহকারি কমিশনারের চুড়ান্ত স্বাক্ষরের জন্য তাকে অবহিত করেছি। কিন্তু তিনি নিজে ইচ্ছা করে এ মিউটেশন আবেদন স্বাক্ষর করেনি।
তার এ খামখেয়ালীর কারনে আবেদনগুলো ফাইলবন্দি অবস্থায় পরে থাকে। তারা আরো বলেন, জেলা প্রশাসক ভূমি অফিস পরিদর্শনের আসার খবর পেয়ে স্যার (দীপায়ন দাশ শুভ) আমাদের মৌখিকভাবে মিউটিশন নিস্পত্তির জন্য আদেশ দিয়েছেন। যার কারনে আবেদনগুলোর সাথে থাকা হাল দাখিলা ও তদন্ত প্রতিবেদন ফেলে দিয়ে ৭৪টি আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৬৩টি আবেদন তদন্তাধীন রাখা হয়।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার ভূমি দীপায়ন দাশ শুভ এক রাতে মিউটিশনের ৭৪টি আবেদন খারিজ করে দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, যথানিয়মে মিউটিশনের কাজ করেছি। চাহিদামত কাগজপত্র না থাকায় ৭৪টি আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, লিখিত অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।