প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বর্তমান কমিটি ভেঙে শিগগির নতুন কমিটি গঠন করা হবে। সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ আলোচনা প্রবল। কমিটির মেয়াদ পূর্ণ না করে দুই বছর মেয়াদি কমিটি কেন ভাঙা হবে তা নিয়ে রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে মত। নতুন কমিটির রূপরেখাও দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারি বলছেন, সংগঠনে এমন কোনো আলোচনা নেই। তারপরও দল চাইলে কমিটি ভাঙতেই পারে।
জানা যায়, গত বছরের ১৭ এপ্রিল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটির পাঁচ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে সেপ্টেম্বরে হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনে ছাত্রদলের এ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ওঠে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ।
এ নিয়ে সংগঠনের একাংশের মধ্যে তৈরি হয় অসন্তোষ।সভাপতি শ্রাবণের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় নেতাদের পদায়ন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বিরুদ্ধে শুধু বরিশালের আঞ্চলিক কর্মীদের নেতা তৈরির অভিযোগ ওঠে। অনেকে বর্তমান কমিটিকে বরিশাল সমিতি অভিহিত করেন। এ পরিস্থিতির মধ্যে চলতি বছর ৮ জানুয়ারি বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পদে রকিবুল ইসলাম বকুল দায়িত্ব পান। এরপর বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
ছাত্রদলের কারও কারও মতে, সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছয় মাস যোগাযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে বকুল সম্প্রতি লন্ডন গিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে আসেন। কয়েকদিন আগে বকুল দেশে ফেরার পর ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের গুঞ্জন আরও জোরালো হয়। এ মাসের যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে ছাত্রদলের এই কমিটি- এমন গুঞ্জন নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সম্ভাব্য নতুন কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত জায়গা পেতে পদপ্রত্যাশীরা বেশ দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্ভাব্য কমিটির শীর্ষ পদে আলোচনায় যারা
বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারী বলে নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত। গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে সব গ্রুপেই তার যোগাযোগ রয়েছে।বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রদলের প্রার্থী ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত।বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক থাকাকালীন মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের অবস্থান ছিল। তার বিরুদ্ধে আঞ্চলিক প্রীতির অভিযোগ রয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল শাখার সাবেক সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান। যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারী।
আমানও আঞ্চলিক প্রীতিতে অভিযুক্ত। সাংগঠনিক যোগাযোগেও তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাছীর উদ্দিন নাছির। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারী। আঞ্চলিক প্রীতিতে অভিযুক্ত।বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান আক্তার। বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারী। সংগঠনে সক্রিয় থাকলেও তিনি গ্রুপিংয়ের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন না বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন।
বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েলের অনুসারী। সংগঠনে সক্রিয় থাকলেও তার সাংগঠনিক আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ।
ঢাকা মহানগরের চার ইউনিটের সম্ভাব্য কমিটির আলোচনায় যারা ঢাকা মহানগর উত্তর: এ শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন। ঢাকা পলিটেকনিকের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব এবং যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীরের অনুসারী। যোগাযোগ দক্ষতায় বেশ এগিয়ে তিনি।সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদ খান।
ভালো লোক হিসেবে পরিচিত, তবে সাংগঠনিক যোগাযোগে পিছিয়ে বলে তার সহকর্মীদের ধারণা। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এমএ কাইয়ুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সাজেদ খান।বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের অনুসারী। পরিশ্রমী, তবে বলয়ের বাইরে তিনি যেতে পারেন না।বর্তমান সহ-সভাপতি মো. সালাউদ্দিন। পরিশ্রমী, কিন্তু সাংগঠনিক যোগাযোগ কম।
কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব এবং ঢাকা মহানগর যুবদল নেতা মিজানুর রহমান রাজের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর বাবু। বর্তমান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের অনুসারী। স্লোগানের ক্ষেত্রে বাবুর বিশেষত্ব রয়েছে, পরিশ্রমী, গ্রুপিংয়ে বেশ তৎপরতা রয়েছে তার।
মহানগর পশ্চিম: বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রাজ। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের অনুসারী। তার সাংগঠনিক দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।বর্তমান সহ-সভাপতি গোলাম মাওলা গোলাপ।
যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে নেতাকর্মীদের কাছে, তবে সাংগঠনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আকরাম আহমেদ, কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গুলিবদ্ধ হয়েছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতা ইমানুল হাসান হেলালের (পিচ্চি হেলাল) অনুসারী।
মহানগর পূর্ব: বর্তমান সদস্য সচিব মো. আলামিন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কর্মীবান্ধব, একরোখা তকমা রয়েছে তার নামের সঙ্গে।বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ ভূঁইয়া। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অনুসারী। পরিশ্রমী হলেও সাংগঠনিক যোগাযোগ তার কম রয়েছে বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন।বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক ইফতেখার ফয়সাল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অনুসারী। সাংগঠনিক যোগাযোগ বেশ ভালো, গ্রুপিংয়ের ক্ষেত্রেও তার বেশি নাম শোনা যায়।যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজুল ইসলাম রাসেল। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীমের অনুসারী। পরিশ্রমী হিসেবে পরিচিত হলেও সাংগঠনিক দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে।
মহানগর দক্ষিণ:বর্তমান সদস্য সচিব নিয়াজ মাহমুদ নিলয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের অনুসারী। বেশ সক্রিয় তিনি রাজনীতিতে।যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহিম ভূঁইয়া। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেনের অনুসারী। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও গ্রুপিংয়েও বেশ তৎপর।যুগ্ম আহ্বায়ক রফিক হাওলাদার। বর্তমান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের অনুসারী।
সক্রিয়, স্লোগানে বেশ দখল রয়েছে তার। পাশাপাশি গ্রুপিং তৎপরতায়ও তিনি পিছিয়ে নেই।যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহমেদ। ঢাবি শিক্ষার্থী। ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সাংগঠনিক যোগাযোগ সেভাবে নেই।যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবীর অনুসারী তিনি। পরিশ্রমী হিসেবেও নেতাকর্মীরা তাকে চেনেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক একজন সভাপতি বলেন, সরকারবিরোধী এক দফা আন্দোলনকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে বিশেষ মহলের প্রেসক্রিপশনে যদি ছাত্রদলের কমিটি ভাঙা হয় বা নতুন করে করা হয় তাহলে সেটা হবে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নিয়াজ মাহমুদ নিলয় বলেন, গত রমজান থেকেই ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে আলোচনা ছিল। সম্প্রতি সেটা প্রবল হয়েছে।ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মতিউর বলেন, আন্দোলন সামনে গতি পেতে যাচ্ছে, সেই আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ কারণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে কমিটি ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের ওপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সুতরাং, কমিটি ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের কাছে তাদের সংগঠনের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, যেহেতু আমি দায়িত্বশীল পদে রয়েছি, সেহেতু এ বিষয় নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে কমিটি ভাঙার বাস্তব যৌক্তিকতা নেই।
তবে দল মনে করলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটির বিষয়ে আমাদের সংগঠনে কোনো আলোচনা নেই। ফেসবুকে গুটিকয়েক লোক এ নিয়ে লেখালেখি করছে। ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানান আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে চান না বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।