খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার আন্দোলনে ঘর থেকে রাস্তায় নামতে: মির্জা ফখরুলের ডাক

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আন্দোলনে ‘সকলকে ঘর থেকে রাস্তায় নামার’ ডাক দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে তিনি এক সমাবেশ থেকে তিনি এই ডাক দেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ হয়।

দলের চেয়ারপারসনের বিদেশে পাঠানোর দাবিতে গতকাল বিএনপি যে ৮ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে এটি তার প্রথমটি। যুবদলের নেতা-কর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে বসে বেগম খালেদা জিয়া ছবি সম্বলিত প্রতিকৃতি হাতে এই সমাবেশে অংশ নেয়। মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে শুধু নয়, তাঁকে জীবন থেকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছে সরকার। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে তাঁর জীবন নিয়ে লড়াই করছেন।

আমরা কি আর ঘরে বসে থাকবো? আমরা ঘরে বসে থাকবো না। আমরা প্রাণপণ সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাদেরকে তাঁর জীবন রক্ষার জন্য অবশ্যই কাজ করব। যুবদলকে আজকের কর্মসূচির জন্য ধন্যবাদ। সামনের দিনগুলোতে আরো শক্তি নিয়ে সকলকে নেমে আসতে হবে। সকলতে বলতে চাই, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে এক মহূর্ত কাল বিলম্ব না করে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে।

বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠালে এর পরিণতি শুভ হবে না উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অন্যথায় এই জনগণ আপনাদের বিচার করবে, তাদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তখন আর কাউকে খুঁজে পাবেন না। পেছনের দরজাটাও আপনারা খুঁজে পাবেন না। সকলকে বলব, আসুন আমরা সবাই আরো ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আন্দোলনকে আরো বেগবান করে এই সরকারকে বাধ্য করি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে।

বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা শুনেছেন, পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এতো অসুস্থ যে, ডাক্তাররা বলেছেন, আমাদের সব বিদ্যা, আমাদের জ্ঞান প্রায় শেষ। আমরা এখানে আর এর বাইরে আর বেশি কিছু করতে পারবো না। পরিষ্কার করে তারা বলেছেন যে, অবিলম্বে তাঁকে বিদেশে পাঠানো দরকার তাঁর চিকিৎসার জন্য। কিন্তু শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) শুনতে চান না। তার মন্ত্রীরাও বলেন যে, হ্যাঁ উচিত, আওয়ামী লীগের এমপিরাও বলেন যে, এটা মানবিক কারণে দেয়া উচিত। সারাদেশের মানুষ তো বলছেই.. ডাক্তাররা বলছেন, উকিলরা বলছেন, বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, অধ্যাপকরা বলছেন কিন্তু তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এটা শুনতে চান না। আমরা জানি আন্তর্জাতিকভাবেও তার ওপরে চাপ আসছে চিকিৎসার জন্য দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠানোর- কোনটাই তিনি শুনছেন না।

কারগারে স্লো পয়েজিং করা হয়েছিলো বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে এই নেত্রীকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল। আপনারা জানেন, পুরনো ঢাকার সেই কেন্দ্রীয় কারাগারে একেবারে পরিত্যক্ত ভবনে যেখানে ইঁদুর, বিড়াল ঘুরে বেড়াতো। আপনারা চিকা দেখেছেন, সেই চিকা ঘোরাঘুরি করতো, স্যাঁতসেতে একটা ঘরের মধ্যে তাঁকে প্রায় দুই বছর আটক করে রাখা হয়েছিলো। এরপরে তাঁকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিলো সেখানে তাঁকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এর ফলে তাঁর ভেতরে যে রোগের সূত্রপাত হয়েছিলো, আজকে অনেকের মধ্যে

এই প্রশ্ন উঠেছে যে, সেদিন কী বেগম খালেদা জিয়াকে সেøা পয়জনিংয়ের কোনো ব্যবস্থা করা হয়েছিলো আমরা এটা জানতে চাই। এদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। যারা জোর করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে থাকতে পারে এবং যারা অবলীলায় ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে পারে, যারা অবলীলায় গণতন্ত্রকামী কর্মী-নেতাদের ওপরে গুলি করে হত্যা করতে পারে এবং তাদেরকে পঙ্গু করতে পারে, যারা অবলীলায় আমাদের নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ ৫শ নেতা-কর্মীকে গুম করে দিতে পারে তাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।

দুর্নীতি সর্বত্র বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পত্রিকায় কয়েকদিন আগে গুরুত্বপূর্ণ খবর বেরিয়েছে যে, বাংলাদেশে যে বিভিন্ন খাত আছে, স্বাস্থ্য খাত, সড়ক খাত, যোগাযোগ খাত, প্রতিরক্ষা খাত, প্রশাসন খাত সবগুলোতেই এখন দুর্নীতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বলা হচ্ছে যে, এখন অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আছে। আজকে গোটা বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নাই যেখানে দুর্নীতি নাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য লক্ষ লক্ষ পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে এবং সেই পুলিশ নিয়োগ করা হয় দলীয় ভিত্তিতে। তাদেরকে কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা একজন কনস্টেবল নিয়োগ পাওয়ার জন্য ঘুষ দিতে হয়। এটা কী আমি ভুল বলছি? এখন সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরমভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ।

এখন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত যারা আছেন, আওয়ামী লীগের কমিশনার আছেন, ওদের নেতা যারা আছেন, অঙ্গসংগঠনের নেতা আছেন তারা পরস্পরকে গুলি করে হত্যা করছে। কুমিল্লায় কমিশনারকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়েছে। আমি গতকালও বলেছি, এটা অত্যন্ত অশনি সংকেত। কারণ আমরা ৭২-৭৫ সালে দেখেছি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একই কায়দায় দেখেছি ঈদের ময়দানে ব্রাশ ফায়ার করে লোক মারা হয়েছে, আমরা দেখেছি, রাস্তার ধারে লোক মারা হয়েছে। সমাবেশে যুবদলের সুশৃঙ্খল সমাবেশ অনুষ্ঠানের জন্য সংগঠনের নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, আজকের এই সুশৃঙ্খল একটি সমাবেশ এটা আমাদের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দকে এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত। আমাদের গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন তারা গত পরশু বলেছিলেন যে, এই বিষয়টা যদি সুশৃঙ্খল হয় তাহলে আমরা আপনারদের নিউজগুলো কাভার করতে পারি সুন্দর করে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনারা এই অবস্থাটা তৈরি করেছেন।

জাতীয়তাবাদী য্বুদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসানের পরিচালায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সহ-সভাপতি আলী আকরব চুন্নু, মোনায়েম মুন্না, গোলাম রাব্বানী, তরিকুল ইসলাম বনি, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকির হোসেন সিদ্দিকী প্রমুখ।

বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে মুন্সীগঞ্জ যুবদলের সমাবেশ: দলের কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে সমাবেশ করেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় মুন্সীগঞ্জের চৌধুরী রোডে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়।

যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন─ জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সহ সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদ, সহ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আসরাফ হেসেন ঝন্টু, সহ সম্পাদক মনির হোসেন পিন্টু, জেলা যুবদলের সদস্য আরিফ খান রুগ্যান, নাসির আহমেদ, আমিন হোসেন, যুবদল নেতা বাবুসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা সোহেল আহমেদ রানা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি তার সাংবিধানিক অধিকার। দেশনেত্রী সুচিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর পথযাত্রী। তার কোন প্রকার দুর্ঘটনা হলে এর দায় দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিতে হবে। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বেই এই নব্য বাকশালের পতন হবে ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here