ময়মনসিংহে ছাত্রদলের কমিটি গঠণে অনৈতিকভাবে টাকা-পয়সার লেনদেন অভিযোগ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃময়মনসিংহ সংবাদদাতা: বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন হলো এর ছাত্রসংগঠন। ছাত্রদলের শক্তিমত্তায় ভর করেই বিএনপি বরাবর প্রতিরোধ কর্মসূচি দিয়ে এসেছে। দেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বিএনপির ভ্যানগার্ড সংগঠনটি এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই অবস্থার জন্য মূলত দলটির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের সুবিধাবাদী নেতাদের ব্যর্থতাই দায়ী হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হয়। এই কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল।জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে সরাসরি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর নির্দেশে সারা দেশে ছাত্রদলের যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের খুঁজে বের করতে ১০টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে তৃনমুল পর্যায়ে পুর্ণগঠন ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কেন্দ্র থেকে গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাজেদুল ইসলাম রুমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ন সম্পাদক ও মারুফ এলাহী রনি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের অন্যতম নেতা রাশেদ ইকবাল খান ময়মনসিংহের দায়িত্বে রয়েছেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের তৃণমূল পুনর্গঠন নিয়ে ময়মনসিংহে চলছে হযবরল অবস্থা।পদ দেয়ার বিনিময়ে ‘অনৈতিক লেনদেন ও পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বিরুদ্ধে। যে কারণে ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা অনেক জায়গায় পদ পাচ্ছেন না। এ নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।

ময়মনসিংহের বিভিন্ন ইউনিটের তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানায়, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখার ভালুকা, ত্রিশাল, গফরগাঁওয়ের পাগলা ও মুক্তাগাছা থানা ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনে ‘টাকা উড়ছে’ বলে অভিযোগ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার ৪ টি থানার কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণপদ গুলোতে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মাইম্যান খ্যাত লোকদের কমিটিতে আনতে আর্থিক লেন-দেনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বিভাগীয় টিমের সদস্যরাও বলে কেন্দ্রে অভিযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহে ছাত্রদলের মাঠ পর্যায়ের কমিটি গঠনে এমনই চালচিত্র উঠে এসেছে।

ময়মনসিংহের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি থানার বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে পদ দেওয়ার বিনিময়ে ‘অনৈতিক লেনদেন ও পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ও বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বিরুদ্ধে। এ কারণে অনেক ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন না। এ নিয়ে ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের তৃণমূলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে।

এ ক্ষেত্রে তৃনমুল ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দাবি, দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় টিম অনৈতিকভাবে টাকা-পয়সার লেনদেন করে ত্যাগী, পরীক্ষিত ও সংগঠনে সক্রিয় কর্মীদের কমিটিতে জায়গা না দিয়ে মাদকাসক্ত, অছাত্র, বিবাহিতদের পদায়ণ করছে। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সখ্য রেখে চলেন। এতে সংগঠনে পরীক্ষিত কর্মীরা কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন না। কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় কোনো সমন্বয় নেই। কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা মানা হচ্ছে না। জেলা কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পাশ কাটিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে সংগঠনের অভ্যন্তরে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, তৃনমুল পর্যায়ে ছাত্রদলকে সুসংহত করতে গঠিত বিভাগীয় টিমের কাজ হচ্ছে জেলা ও উপজেলায় গিয়ে খুঁজে খুঁজে যোগ্য নেতৃত্ব বের করে কেন্দ্রে সুপারিশ করা। কেন্দ্রের কাজ হচ্ছে উপজেলার ক্ষেত্রে জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি অনুমোদন করা। জেলার ক্ষেত্রে বিভাগীয় টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি ঘোষণা করবে কেন্দ্র।

কিন্তু জেলার দায়িত্বে থাকা নেতাদের সাথে কোন সমন্বয় না করেই থানা শাখার স্হানীয় বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে উপঢৌকন ও অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্য, নিস্ক্রীয়, বিবাহিত, অছাত্রদের দিয়ে শুধুমাত্র জেলা ও থানা শাখার বিএনপি নেতাদের মাইম্যান খ্যাত লোকদের দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠণকে কেন্দ্র করে তৃনমুলে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষোভের সঞ্চার।

ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্র থেকে গঠিত বিভাগীয় টিমের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নানাভাবে প্রভাবিত হয়ে কমিটি গঠণে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে অযোগ্যদের নেতৃত্বে আনার জন্য মোটা অংকের অনৈতিক লেনদেনের বিনিময়ে কমিটি গঠণের পায়ঁতারা চলছে। যা তৃনমুল কর্মীদের হতাশ করছে। অযোগ্যদের দিয়ে জেলা শাখার থানাগুলোর কমিটি গঠিত হলে দলের প্রতি অনাস্থা দেখা দিবে।

ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির দায়িত্বে থাকা ও থানা বিএনপির স্হানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের পছন্দের লোকদের কমিটিতে আনতে উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সুপরিকল্পিত ভাবে জেলার দায়িত্বে থাকা নেতাদের মাইনাস করে কেন্দ্র ও বিভাগীয় টিমের সদস্যরা কমিটি গঠণের কাজে লিপ্ত রয়েছে।

জানা গেছে, সব টিমের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন তারেক রহমান। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের এই সুযোগকে অনেক নেতা টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালি, নিজের লোককে প্রতিষ্ঠিত করা, অর্থ লেনদেনের মতো ঘটনা অহরহ ঘটাচ্ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাঁদের দেখে অন্য নেতারাও আশকারা পেয়েছেন বলে দাবী করছে তৃনমুল নেতাকর্মীরা।

অভিযোগের এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিম লিডার ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাজেদুর রহমান রুমনের সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি বার বার কেটে দেন। বিভাগীয় টিমের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ন সম্পাদক মারুফ এলাহী রনির সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

তবে, ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের অন্যতম নেতৃত্ব রাশেদ ইকবাল খানের সঙ্গে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিএনপির ভ্যানগার্ড জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে তৃনমুল পর্যায়ে পূর্ণগঠণ ও সুসংহত করতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যোগ্য, অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠণের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা জেলার নেতাদের সাথে কয়েকদফা মিটিং করেছি ও সমন্বয় করেই ত্যাগীদের দিয়েই কমিটি গঠণের কাজ করছি।

কমিটিতে কারা যোগ্য, অযোগ্য কারা নিস্ক্রীয় আমরা তা দেখছি। কোন ধরনের পক্ষপাতিত্ব করছি না, কমিটি গঠণের ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেনের বিষয়ে বিভাগীয় টিমের এ নেতা বলেন, কারো কাছ থেকে কোন আর্থিক লেনদেনের সুবিধা নেয়ার প্রশ্নই আসে না, ছাত্রদলের কমিটিতে আসার জন্য যারা যোগ্য, যারা আন্দোলন, সংগ্রামে রাজপথে ছিলো তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠণ করা হবে বলে তিনি দাবী করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here