মিলন আছেন,অপ্রত্যাশিত ভাবে মনোনয়ন পাওয়া মোশাররফ কই ???

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে কয়টি আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক, সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছিল, তার একটি হলো চাঁদপুর-১ আসন। দলের অতি পরিচিত ও ত্যাগী মুখকে বাদ দিয়ে যাকে সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল সেই মোশাররফ হোসেনকে নির্বাচনের পর আর এলাকায় দেখা যায়নি। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত এহছানুল হক মিলন আছেন রাজনীতির মাঠে সরবে।

শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী থাকাবস্থায় নকল বন্ধে নানা তৎপরতা চালিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন। দল ক্ষমতা হারানোর পর তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুরে একাধিক মামলা হয়। এসব মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন তিনি। পরে মুক্তি পেয়ে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিদেশে পাড়ি জমান মিলন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে ফিরলেও আবার কারাগারে যেতে হয় মিলনকে। নির্বাচনের আগে চাঁদপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। দলের মনোনয়ন তারই পাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। আলোচনায় না থেকেও সবাইকে বিস্মিত করে সেখান থেকে মনোনয়ন পান মালয়েশিয়া প্রবাসী মো. মোশাররফ হোসেন। এ নিয়ে বেশ তোলপাড় হয় বিএনপির ভেতরে-বাইরে। বিক্ষোভ করেন মিলনের কর্মী-সমর্থকরা।

নির্বাচনের সময় গুঞ্জন ছিল, খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীর সুপারিশে মোশাররফ হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে মোশাররফ হোসেন পরাজিত হন। গড়ে তুলতে পারেননি কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নির্বাচন শেষে তিনি আবার দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়।

অন্যদিকে মনোনয়নবঞ্চিত হলেও নিয়মিত রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন এহছানুল হক মিলন। নিয়মিত চাঁদপুরের আদালতে নিজের মামলার হাজিরা দেয়ার পাশাপাশি দলের ঘরোয়া কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি। নেতাকর্মীদেরও সময় দিচ্ছেন। টেলিভিশন টকশোতে দলের পক্ষে সরব সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

জানা গেছে, ২০১১ সালে কয়েকটি মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইতে গিয়ে মিলন গ্রেপ্তার হন। প্রায় দুই বছর জেল খেটে পরে জামিনে মুক্ত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বিদেশে পাড়ি দেন তিনি। প্রায় ৫ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। গত নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামে এক বন্ধুর বাসা থেকে মিলনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর গত বছরের ২৮ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি।

জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে চাঁদপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২৮টি মামলা চলমান। এসব মামলা ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। অধিকাংশ মামলা গাড়ি ভাঙচুর, হোন্ডা চুরি, ভ্যানিটি ব্যাগ, মানি ব্যাগ চুরিসহ অন্যান্য মামলা।

২০০৭ সালের এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। পরে তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান এবং জাফিয়া রহমানকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় চিকিৎসার জন্য যান। পরে আর দেশে ফেরেননি। মালয়েশিয়াতে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কোকো। ২৯ জানুয়ারি স্বামীর মরদেহের সঙ্গে দুই মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী শর্মিলা রহমান দেশে এসেছিলেন। কোকোর মরদেহ দাফনের পর ৩ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের নিয়ে ফিরে যান মালয়েশিয়ায়। সেই থেকে সেখানেই আছেন।

মিলনের আসনের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এহছানুল হক মিলনের জায়গায় মনোনয়ন পাওয়া মোশাররফ হোসেনকে এলাকায় কেউ চেনেন না। সব সময় তিনি মালয়েশিয়ায় থাকেন। তবে দেশের বাইরে থাকাবস্থায়ও এহছানুল হক মিলন নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।

বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করলে এহছানুল হক মিলনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন তিনি। গত ২ মার্চ ১৮ মামলায় হাজিরা দিতে চাঁদপুর আদালতে গেলে অসুস্থতা বেড়ে যায়। পরে রাজধানীর ইউনির্ভাসেল মেডিকেলে চিকিৎসা নেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here