জমে উঠেছে ছাত্রদলের নির্বাচিনী ভোটের লড়াই

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ পীর আবদুল মান্নান: দীর্ঘ  ২৭ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে যাচ্ছে বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব। এবারের কাউন্সিলে ভোট হচ্ছে শীর্ষ দুই পদে। কাউন্সিলররা ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরই মধ্যে ছাত্রদলে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন ১৯ জন। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হওয়ায় তফসিল ঘোষণার পর থেকেই কাউন্সিলরদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন প্রার্থীরা।

অনেকে দলীয় কার্যালয় কিংবা প্রার্থীদের বাড়ি বাড়িও যাচ্ছেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরের বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাত করছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এদিকে কেন্দ্রীয় প্রার্থীদের কাছে পেয়ে উজ্জ্বীবিত তৃণমূলের নেতারাও। প্রার্থীদের বিগত দিনের কর্মকান্ড নিয়ে মুল্যায়ন করা শুরু করেছেন কাউন্সিলররা। দলের দুর্দিনে আন্দোলন সংগ্রামে কোন প্রার্থী রাজপথে কী ভূমিকা রেখেছেন তা বিবেচনা করছেন তারা।

সারা দেশের ১১৭টি ইউনিটে কাউন্সিলর রয়েছেন ৫৮০ জন। এরমধ্যে উত্তরাঞ্চলেই কাউন্সিলর ১০৮ জন। এ কারণে প্রার্থীদের কাছে উত্তরাঞ্চল সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এই অঞ্চলে রয়েছে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ। এরমধ্যে রংপুরে রয়েছেন ৫৬ জন আর রাজশাহীতে ৫২ জন কাউন্সিলর। যদিও এই অঞ্চল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে কোন প্রার্থী নেই। আসন্ন কাউন্সিলে প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন।

সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বৃত্তি ও ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭টি মামলা রয়েছে রওনক শ্রাবণের বিরুদ্ধে। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। সভাপতি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন হাফিজুর রহমানও। বাগেরহাটের ছেলে হাফিজ ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সদস্য হন। ১/১১ তে মাঠে বারবার মামলা হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি এসএম সাজিদ হাসান বাবুও রাজপথে সক্রিয় ভূমিকার কারণে আলোচনায় রয়েছেন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী স্লোগান মাষ্টার খ্যাত সাইফ মাহমুদ জুয়েল দলের দুর্দিনে হাইকমান্ডের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে তৃণমুলের আস্থার জায়গায় রয়েছেন। ওয়ার্ড ছাত্রদল থেকে উঠে আসা এ নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে ৬টির বেশি মামলা। সাতক্ষীরার সন্তান আমিনুর রহমান কাজ করছেন নীরবে। ১/১১ থেকে এ পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রামে বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ইকবাল হাসান শ্যামলের রাজনীতিতে বিরতি থাকলেও গ্রুপ রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন।

নির্যাতিত ছাত্র নেতা তানজিল হাসান বিগত দিনে আন্দোলনে তার সক্রিয়তা নিয়ে কাউন্সিলরদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। নোয়াখালীর আঞ্চলিক নেতাদের পছন্দের তালিকা থেকে প্রার্থী হয়েছেন শাহনাওয়াজ। তবে একই অঞ্চলের আরেক নেতা মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম) একই পদে নির্বাচন করায় ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে। আবার তানজিল হাসান, আমিনুর রহমান, ইকবাল হাসান শ্যামল, শাহনাওয়াজ আর মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম) একই বলয়ের নেতা হওয়ার কারণে ভোটের হিসেব পাল্টে যেতে পারে।

সভাপতি প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলকে ঘিরে আমি বিভিন্ন জেলা সফর করছি। কাউন্সিলরদের কাছে গিয়ে ভোট চাচ্ছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করছেন। আরেক প্রার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, আমি ইতিমধ্যে দেশের প্রায় সবকটি বিভাগ সফর করেছি। কাউন্সিলরদের সঙ্গে দেখা করেছি। সবার কাছ থেকে খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি সেরা সাফল্যটাই পাব।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, জেলার প্রতিটি ইউনিটে আমি যাচ্ছি। কাউন্সিলররা প্রার্থীদের পেয়ে মনে জমানো ক্ষোভের কথা জানান। অপর সাধারন সম্পাদক প্রার্থী আমিনুর রহমান বলেন, আমিও উত্তরাঞ্চল সফরে আছি। যে ইউনিটের কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলছি, তারা আমাকে ভোট দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আর মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মশিউর রহমান রনীর প্রতি রয়েছে সারা দেশের তৃনমূল ছাত্রনেতাদের অন্য রকম একটা আবেগ অনুভূতি কাজ করলে হয়তো সব হিসাব নিকার পাল্টে যাবে বলে সূত্রে জানাযায়।

এদিকে, তফসিল অনুযায়ী ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটে অংশ নেবেন সংগঠনটির সারা দেশের ১১৭টি ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলর। আপিল কমিটি ঘোষিত কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সভাপতি পদে রয়েছেন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মামুন খান, হাফিজুর রহমান, মো. ফজলুর রহমান খোকন, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, মো. এরশাদ খান, এস এম সাজিদ হাসান বাবু, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, এবিএম মাহমুদ আলম সরদার।

সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন, মো. আমিনুর রহমান আমিন, মো. জুয়েল হাওলাদার (সাইফ মাহমুদ জুয়েল), মো. ইকবাল হোসেন শ্যামল, শাহ নাওয়াজ, মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম), শেখ আবু তাহের, মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির, মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, সাদিকুর রহমান, কে এম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মো. হাসান (তানজিল হাসান), মুন্সি আনিসুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মো. মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা, কাজী মাজহারুল ইসলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here