প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ডেস্ক নিউজ: প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৮ পৃষ্ঠার প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ কথা বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১০ জানুয়ারি এ রায় দিয়েছিলেন।গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজের রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক বিবেচনা করেছি এবং রেকর্ডটি পর্যবেক্ষণ করেছি। মামলার নথি থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বিচারিক আদালত সিডিটি দেখেছে এবং অভিযুক্ত আবেদনকারীর সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে এই মামলায়। তদুপরি, মামলাটি তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব সৃষ্টি না করে এখনো তদন্তাধীন থাকায় আমরা বলতে পারি যে, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং ওই বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অভিযোগগুলো সত্যিই অত্যন্ত গুরুতর।
প্রধান বিচারপতি প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। তাই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমরা মনে করি।রায়ে বলা হয়েছে, আসামিপক্ষের আইনজীবী দাবি করেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে অনেক দূরে ছিলেন। কিন্তু বরেন্দ্র কুমার ঘোষ এবং অন্যান্য মামলায় (প্রিভি কাউন্সিল, ২৩ অক্টোবর ১৯৪২) যা পোস্ট অফিস কেস নামে পরিচিত) সিদ্ধান্ত যে একজন ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দেওয়ার কারণে দণ্ডবিধির ৩৪ ধারার অধীনে দায়বদ্ধ হতে পারে।
এমনকি সেই প্ররোচনা দূরবর্তী স্থান থেকে হলেও। মেজর মো. বজলুল হুদা (আর্টিলারি) এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র মামলার ক্ষেত্রেও একই দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল। আমরা মনে করি যে, একজন ব্যক্তি তার অনুসারীদের অনেক দূর থেকে আদেশ দিতে পারেন।রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আবেদনকারী (মির্জা ফখরুল) দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করছেন, যাকে তিনি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন দাবি করে আসছেন।
দুর্ভাগ্যবশত, বিগত কয়েক মাসে দেখা গেছে যে, কথিত ওই ভোটাধিকারের দাবি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে যুক্ত হয়েছে। যাতে প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকারী সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন, পুলিশের গাড়িতে হামলার মতো ঘটনা রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, কথিত আন্দোলনকারীরাই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আমরা এসব অযৌক্তিক ও ধ্বংসাত্মক ঘটনা বিবেচনায় নিয়েছি, যেগুলো দৃশ্যত দেশে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বস্তুত দেশ ও দেশের জনগণকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গত ৩ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তার আগে ২২ নভেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন নামঞ্জুর করেন নিম্ন আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের এই আদেশ দেন। ২ নভেম্বর একই আদালতে জামিন আবেদন দাখিল করেন মির্জা ফখরুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলায় মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ৫৯ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।এই মামলায় ফখরুল-আব্বাস ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আহমেদ খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ভিপি জয়নাল, মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।