প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ (২৮ সেপ্টেম্বর)। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

জীবনের অর্ধেক সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সভাপতির দায়িত্বভার বয়ে চলছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। অক্লান্ত এই পথচলার নিজের বয়স বাড়ার দিকটি তাই বারবার দলের নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও তার দক্ষ নেতৃত্ব দেশে-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন। তার নেতৃত্বাধীন সরকার এবং দল দক্ষতা, সততা, মানবিকতার নেতৃত্ব নিয়ে জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখার অগ্নিপরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়েছে বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম মধুমতি নদীবিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা পেতেন কখনো কখনো। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শেখ হাসিনা সবার বড়। তার অন্যান্য ভাইবোনরা হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের এক কলঙ্কিত রাতে মা-বাবাসহ ভাইদের সবাইকেই হারিয়েছেন শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানাই কেবল জীবিত রয়েছেন। ওই সময় স্বামীর কর্মস্থল জার্মানিতে অবস্থান করেছিলেন দুই বোন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন শেখ হাসিনা। তিনি সেখানকার ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে পূর্ববাংলায় এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-পিড়ন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর ও দুঃসহ দুঃখ-যন্ত্রণা।

এই ঝড়ের দিনগুলোতেই বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করলে আর দেশে ফিরতে পারেননি দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শুরু হয় তাদের প্রবাস জীবন। তবে ১৯৮১ সালে ঢাকার ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের এক ঐতিহাসিক কাউন্সিলে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তৎকালীন সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম আন্দোলন করে দিকহারা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি।

পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় পায় বিএনপি-জামায়াত জোট। এ সময় আবার সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চরম দমন-নিপীড়ন শুরু হয়। ২০০৪ সালে ২১ শে আগস্ট তদানীন্তন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে চালানো হয় পরিকল্পিত নারকীয় গ্রেনেড হামলা। ওই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করলে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে তার শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেদিনের হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন।

২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনের অবসান হলেও সংবিধান লঙ্ঘন করে বিএনপির রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করেন। শুরু হয় নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি। শেখ হাসিনা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে শুরু হয় গণআন্দোলন। বাতিল হয় পাতানো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ইয়াজউদ্দিন। আসে জরুরি অবস্থার ঘোষণা। ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এরপর আবার নতুন ষড়যন্ত্র। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে হাজির করেন ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’।

কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে ফিরে আসেন দেশে। এরপর মাত্র দু’মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাকে বন্দি করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক ষড়ন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। এমনকি কারাগারেও তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশে আওয়াজ ওঠে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন নয়। তাই রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। তার নেতৃত্বাধীন সরকার আজ সফলতার সঙ্গে টানা তৃতীয় মেয়াদে চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনা করছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ে শেখ হাসিনার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।

এবার জন্মদিনের সময় দেশে থাকছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক গেছেন তিনি। তার অনুপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে জন্মদিনের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নানান রঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। সেখানে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্জন তুলে ধরা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ। বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, তেজগাঁও জকমালা রাণীর গির্জা এবং ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

একই দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব শাখার নেতাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে নেত্রীর জন্মদিন পালনের অনুরোধ জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here