ঢাকা মেডিক্যালে দালালের শরীরে কর্মচারীর পোশাক

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গেলেই চোখে পড়বে রোগী নিয়ে টানাটানির দৃশ্য। দালালদের বাধা দিয়ে চিকিৎসকদের কাছে রোগীর পৌঁছানোই কঠিন। ট্রলিম্যান থেকে শুরু করে রোগী ভর্তি, সব ক্ষেত্রেই দালাল। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হলে আরেক দফা টানাটানি শুরু হয়। এবার টানাটানি ব্যবস্থাপত্রে লেখা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। দালালদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয় রোগীদের।

ঢামেক হাসপাতাল-১, ২ এবং বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকে সামনে দালালদের আনাগোনা বেশি। বিভিন্নহাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্ড, স্লিপ প্যাড ইত্যাদি নিয়ে ঢামেকের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ওটি, আইসিইউ, ওয়ার্ড এবং কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন দালাল চত্রের সদস্যরা। এই চিত্র প্রতিদিনের। দুই দিন আগে ঢামেক হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের ২৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরই দালালরা নতুন কৌশল নিয়েছে। হাসপাতালের স্টাফ না হয়েও তারা ঢামেকের পোশাক পড়ে সকাল থেকে গভির রাত পর্যন্ত ডিউটি করছে।

গত শুক্রবার সকাল ১০টায় জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে স্টাফদের অধিকাংশই ভুয়া। তারা স্টাফ সেজে হাসপাতালে ডিউটি করছে। এভাবে নানা কৌশলে রোগীদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র।জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ২৪ জন এবং শুক্রবার ৫ জন দালালকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওয়ার্ড মাস্টার কাজী আবু সাইদ বলেন, আমার ওয়ার্ড থেকে পরিচালক স্যারের নির্দেশে শুক্রবার ৫ জনকে আটক করে আনসার সদস্যরা। পরে তাদের শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরিচালক স্যারের নির্দেশে বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জরুরি বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পদবী সরদার) মোকলেস বলেন, সরকারি স্টাফদের পাশাপাশি ডেইলি বেসিকে নিয়োগ অস্থায়ী ট্রলিম্যানরা এখন থেকে কাজ করবে জরুরি বিভাগে। কোনো স্পেশাল লোক আর থাকবে না। অভিযানের বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, নাক কান গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দেবেশ চন্দ্র তালুকদার বলেন, দালাল খবর পেলে সংবাদ দিন আমরা ব্যবস্থা নিবো।এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এই অভিযান চলমান থাকা দরকার। এছাড়াও রোগীদের মোবাইল টাকা পয়সা সহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ঢামেক হাসপাতালে নিরীহ রোগী আসেন কম খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীই প্রতারিত হচ্ছে। রোগীদের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায় দালালরা। হাতেনাতে গ্রেফতারের পর তারা সবাই স্বীকার করেছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ঢামেক হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকার পরেও দালালরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে দ্রুত রিপোর্ট করিয়ে দেয়ার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে থাকে। এ জন্য আমরা ঠিক মত কাজ করতে পারি না।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, এতে করে হাসপাতালের কার্যক্রমের গতিশীলতা আরো বাড়বে। দালাল চক্রের সঙ্গে হাসপাতালের কোনো কর্মচারী কিংবা কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক ২৪ জন দালালকে ধরে সাজা দিয়েছেন র‌্যাব। হাসপাতালের পক্ষ থেকেও ৫ জন আটক করে শাহবাগ থানা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ ছিলো রোগীদের কাজ থেকে বিভিন্ন উপায়ে তারা টাকা নিতো। হাসপাতালে সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে, যদি কোনো রোগীর কাছ থেকে কোনো দালাল টাকা চাইলে তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরিয়ে দিন।

যেভাবে দালাল চেনা যাবে: ঢামেকের প্রধান ফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন হলুদ পোশাক পড়া দালাল সদস্যরা। জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্স থামলে ঘিরে ধরে তারা। এছাড়া ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে গেলেই সেখানে দালালদের দেখা পাওয়া যায়।গত শুক্রবার সকালে বনশ্রীতে আয়শা বেগমকে গাইনীর চিকিৎসা নিতে এসেছেন ঢামেক হাসপাতালে। রক্ত পরীক্ষা করতে দেন চিকিৎসকরা। রক্ত পরীক্ষার কাগজ নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক যুবক সামনে এসে বলেন ২০০ টাকা দেন আমি পরীক্ষা করিয়ে দিচ্ছি।

এতে তিনি রাজি হলে ওই দালাল নিজেই রোগীর শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করেন। একপর্যায়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওই দালাল র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।রোগী জানান, বুঝতে পারিনি ওই যুবক দালাল। পরে বুঝতে পারি আমি দালালের খপ্পরে পড়েছি। এখানে দালাল ছাড়া কোনো পথ নেই। সব ক্ষেত্রে দালাল। অপরদিকে, আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য মাকে ভর্তি করাতে এসে দালাল-কর্মচারীদের অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনার পর দালালদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান চালিয়েছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

দুপুরে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, মেডিসিন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় গ্রামের সহজ-সরল রোগীদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করা দালাল চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে পুলিশের এ তৎপরতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ফারুক আহমেদ বলেন, হাসপাতালের দালালদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here