সেরামের টিকার ছাড়পত্র দিল সরকার

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে বেক্সিমকোর আমদানি করা করোনার ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় ছাড়পত্র দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আজ মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ডের ৫০ লাখ করোনার টিকার চালান এসে পৌঁছায়। টিকা আসার পর সেটি সরাসরি বেক্সিমকোর টঙ্গী গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সরকারের চাহিদা অনুসারে বিতরণ করা হবে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, বেক্সিমকো বণিজ্যিকভাবে কোনো ভ্যাকসিন আনছে না। শুধু সরকারি তালিকায় ওষুধ কোম্পানির নাম না থাকায় শুধু তাদের জন্যই ১০ লাখ ডোজ আনা হচ্ছে। এর বাইরে কেবল বিজেএমইকে দেওয়া হতে পারে। তাছাড়া বাইরে বাণিজ্যিকভাবে এই টিকা বিক্রি হবে না।
তিনি আরো বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে ৬৪ জেলায় সরবারহ করবে বেক্সিমকো। কোথাও কোল্ড চেইন ব্রেক হয়নি সেটিও নিশ্চিত করবেন তারা। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, প্রতিবারে ৫০ লাখ করে ৬ দফায় ঢাকায় আসবে অক্সফোর্ডের এ টিকা। এই টিকা সারাদেশে বিতরণের আগে সরকারি ওষুধ পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে ছাড়পত্র নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
প্রথম দফায় স্বেচ্ছায় টিকা নিতে আগ্রহী ২৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই স্বাস্থ্যকর্মী। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব- তারা নিজেরা কবে টিকা নেবেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন অনেক ভিআইপি টিকা নেওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু আমরা দিচ্ছি না। আমরা আগে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের দেব, তারপর আমরা সবাই নেব। আমিও নেব।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, প্রথম দিনে ২৪ জনের পর, দ্বিতীয় দিনে ৪শ’ থেকে ৫শ’ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) করোনার টিকার জন্য করা রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ আইসিটি মন্ত্রণালয় হস্তান্তর করবে বলেও জানান তিনি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিনের ভারতীয় সংস্করণ ‘কোভিশিল্ড’ চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া পর এটির তিন কোটি ডোজ সংগ্রহের জন্য গত ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে সরকার।
সরকার, সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এই টিকা কেনা হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এই টিকা কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে সেরাম। দেশে এই টিকা সরবরাহ করছে বেক্সিমকো। দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে নতুন করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেছে সরকার।
তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এসব টিকা দেওয়া হবে, যেখানে প্রাধান্য পাবে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ। আর এজন্য প্রয়োজন হবে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ১৬ ডোজ টিকা (একজনকে দুই ডোজ করে)।
সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ডের টিকা কেনার পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স এর আওতায় আরও আড়াই কোটি ডোজ টিকা আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশ পাবে বলে সরকার আশা করছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত প্রতি ডোজ টিকার ক্রয়মূল্য হবে ৪ ডলার। সব খরচ মিলিয়ে দাম পড়বে ৫ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে ৪২৫ টাকার মত। প্রত্যেককে অক্সফোর্ডের টিকার দুটো করে ডোজ নিতে হবে। দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান থাকবে ২৮ দিন
অক্সফোর্ডের টিকা রেফ্রিজারেটরের সাধারণ তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করা যায়; ফলে যে কোনো জায়গায় এই টিকা পৌঁছানো তুলনামূলক সহজ। এ কারণে অনেক দেশেরই এ টিকা নিয়ে আগ্রহ বেশি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here