রফিক-উল হকের মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতির শোক প্রকাশ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রবীণ এ আইনজীবী।

এ প্রথিতযশা আইনজীবীর সততা ও নিষ্ঠার কথা স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে তিনি আদালতকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যারিস্টার রফিক-উল হক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। আইনের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য।

তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন তিনি।গত ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় তাকে আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর কিছুটা সুস্থবোধ করলে গত ১৭ অক্টোবর সকালে পল্টনের বাসায় ফিরে যান তিনি। তবে ওই দিনই দুপুরের পর তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টার পর তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ১৯ অক্টোবর তার করোনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তখন থেকে অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল এ প্রবীণ আইনজীবীর।

আদ-দ্বীন হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাহিদ ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক স্যার লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। স্যারের অবস্থা মঙ্গলবার রাত থেকে খারাপের দিকে যায়। অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি সেখানে আছেন। পরে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিল।

জানা গেছে, রক্তশূণ্যতা, ইউরিন সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন ব্যারিস্টার রফিক। তিনি ডাক্তার রিচমন্ড রোল্যান্ড গোমেজের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। তার বাল্যকাল কেটেছে কলকাতার চেতলায়। ১৯৬২সালে যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফৌজদারী আইনে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।

সফলতার অনেক গল্পই আছে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনি লড়াই বিপুল পরিচিতি এনে দেয় তাকে। ওয়ান ইলেভেনের সময় রাজনীতিবিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তাদের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেননি তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা লগ্নে আইন প্রণয়নে তারও ভূমিকা ছিল। ১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রফিক-উল হক। কিন্তু কোনো সম্মানী নেননি তিনি।পেশাগত জীবনে সফল এই মানুষটি অর্থ, বিত্তবৈভবের প্রতি মোহ ছিল না মোটেই। বিলিয়েছেন অর্থ মানুষের সেবায়। গড়েছেন হাসপাতাল। যুক্ত ছিলেন অসংখ্য সেবামূলক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

উজ্জ্বল ব্যতিক্রমের উদাহরন রেখে চলে গেলেন তিনি। তবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার যে মশাল জ্বালিয়ে গেলেন তা আলো দেবে আগামীর মানুষকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here