প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মাদকের ভয়াল ছোবল দেশের যুব সমাজকেই শুধু নয়, ধ্বংস করে দিচ্ছে ছিন্নমূল শিশুদেরও। এইসব শিশুদের অনেকেই পরিবারের ঠিকানা জানে না। অনেকেই বাবার মুখ দেখেনি। অনেকেই মাকেও হারিয়েছে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে স্বাভাবিক ও সুস্থ-সুন্দর জীবন গড়ার পথ ওরা খুঁজে পায় না। পৃথিবীর আলো তাদের স্পষ্ট করে না। ফলে কুড়িতেই ঝরে যায় তারা। ধীরে ধীরে মরণ নেশার দিকে ধাবিত হয়।
এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকা শহরে তিন লাখেরও বেশি পথশিশু মাদকে আসক্ত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদক এইসব শিশুদের জীবনীশক্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এক তথ্যে জানিয়েছে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশ কোনও না কোনও ভাবে মাদক সেবনের সঙ্গে যুক্ত। যাদের ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে। রাজধানী ঢাকার অন্তত ২২৯টি স্পটে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী এসব ভাসমান শিশুদের বাস।
রাজধানী ঢাকার বুকে চোখ রাখলে দেখা যায়, অলিতে গলিতে মোড়ে মোড়ে পথশিশুদের বসবাস। এখানেই তাদের ঘর ও ঘুমোনোর জায়গা। প্রতিদিনই বাড়ছে এইসব পথশিশুদের সংখ্যা। এদের অধিকাংশই জুতার গাম কিংবা আঠা দিয়ে বিশেষ কায়দার তৈরি ‘ড্যান্ডি’র নেশায় বুদ। সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় দিনরাত প্রকাশ্যেই চলে এদের মাদক সেবন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এদের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন নয়। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই এইসব ছিন্নমূল শিশুরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।
ভাসমান এসব শিশুদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের বাড়ির ঠিকানা জানে না। কারোর হয়তো বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে মাকে ফেলে চলে গেছে, কারওবা বাবা মারা যাওয়ার পর মা অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে গেছে, কেউ কেউ আবার জন্মের পর বাবা-মাকে ঠিকভাবে দেখতেই পারেনি। এদের অনেকেই জন্ম থেকেই পিতৃমাতৃহীন। ফলে রাস্তার ধারে কোনও না কোনোভাবে এরা বেঁচে আছে, বেড়ে উঠছে। ছিন্নমূল এসব শিশুদের অনেকেরই বয়স ১২-১৪ বছর কিংবা তারও বেশি। তাদের জীবনে দুঃখ-কষ্টের অন্ত নেই। কথা হলে জানা যায়, তারা যে কয় টাকা দিনে রোজগার করে তার প্রায় পুরোটাই নেশার পেছনে খরচ করে। এক বেলা ভাত না খেয়ে হলেও তারা নেশার টাকা ঠিকই জোগায়।
রাজধানীর সদরঘাট, কমলাপুর, গুলিস্তান, পল্টন, সচিবালয়ের ফুটপাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ এলাকা, রমনা পার্ক, পলাশী মোড়, দোয়েল চত্বর, চানখাঁরপুল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর, ফার্মগেট, তেজগাঁও রেলস্টেশন, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, বিমানবন্দর এলাকা, মিরপুর স্টেডিয়ামের আশপাশ এবং বিভিন্ন বস্তি, ফুটওভার ব্রিজ কিংবা বাস টার্মিনাল এলাকায় বছরের পুরোটা সময়ই এসব পথশিশুদের দেখা মেলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় হাজার হাজার পথশিশু মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ায় এদের একদিকে যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, অপরদিকে এইসব শিশুদের ব্যবহার করে বড় বড় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করানো হচ্ছে। শিশু বয়স থেকেই এদের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকতা দেখা দিচ্ছে। শরীর ও মনে কুপ্রভাব পড়ছে। ধীরে ধীরে এদের মেধাশক্তি বিনষ্ট হচ্ছে। বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কখনও কখনও শৈশবের এদের অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
এ ব্যাপারে সর্বস্তরে গণসচেতনা তৈরি করতে না পারলে কোমলমতি এসব শিশুদের জীবন ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে যাবে অকালে। পাশাপাশি এদের দ্বারা সংঘটিত হবে নানা অপরাধ ও অসামাজিক কার্যকলাপ। এখনই এর লাগাম টেনে ধরা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।