একাধিক শিল্পপতির কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিতর্কিত “এসপি হারুন” প্রত্যাহার।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের বিতর্কিত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে  সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ-সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাঁকে পুলিশ সদর দপ্তরে (ট্রেনিং রিজার্ভ) সংযুক্ত করা হয়েছে। হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চাঁদার জন্য তিনি একাধিক শিল্পপতিকে তুলে নিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ভয় দেখিয়েছেন।

প্রত্যাহারের ব্যাপারে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, সরকার মনে করেছে তাই সরিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কারণ নিশ্চয় আছে, তাই সরানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হারুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠলেও প্রভাবের কারণে কেউ কিছু বলতে পারেননি। বরং অভিযোগ থাকার পরও সব সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন।

হারুনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ করেন পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেমের ছেলে ও আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ (রাসেল)। তিনি বলেন, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। পরে তাঁরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।

ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে শওকত আজিজ বলেন, চাঁদা নিয়ে হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁর পুরোনো বিরোধ ছিল। সম্প্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নতুন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। সেখানেও হারুন বাগড়া দিচ্ছিলেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে একটি পার্টিতে নামিয়ে ঢাকা ক্লাবে আসেন। ক্লাব থেকে বেরিয়ে দেখেন তাঁর গাড়িটি নেই।

পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গাড়ি আছে নারায়ণগঞ্জে। পরদিন রাতে তাঁর অনুপস্থিতিতে হারুন একদল পুলিশ নিয়ে তাঁর গুলশানের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যান। এ বিষয়ে নিকটস্থ গুলশান থানাকে কিছু জানায়নি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরদিন তাঁর খোয়া যাওয়া গাড়িতে ইয়াবা, মদ ও গুলি উদ্ধারের ঘটনা সাজিয়ে তাঁর ও তাঁর গাড়িচালকের নামে মামলা করেন। গুলশানের বাসা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও শওকত তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করেন।

তবে শওকত আজিজের স্ত্রী-পুত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর গত শনিবার নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিন্ন একটি গল্প শোনান হারুন। তিনি দাবি করেন, শওকত আজিজের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, ১ হাজার ২০০ ইয়াবা বড়ি, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় গাড়িতে শওকতের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও সন্তান আনাব আজিজ ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছিল। পরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এম এ হাসেম সহযোগিতা করবেন বলে মুচলেকা দেওয়ায় তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

শওকত আজিজ বলেন, হারুনের চাঁদাবাজি নিয়ে ২০১৬ সালের ৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের আদেশে গাজীপুর থেকে প্রত্যাহারের পর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তাঁর কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। তাঁর পক্ষে উপপরিদর্শক আজহারুল ইসলাম আম্বার ডেনিমের স্টোর ম্যানেজার ইয়াহিয়া বাবুকে ফোন করে টাকা দাবি করেন।

এর আগেও গুলশান ক্লাবের লামডা হলে ও গুলশানের কাবাব ফ্যাক্টরি রেস্তোরাঁয় হারুন তাঁকে ডেকে নিয়ে ৫ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঠিকানায় পাঠাতে বলেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আম্বার ডেনিমের ৪৫ জন শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গাজীপুর থানায় ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়।

শুধু শওকত আজিজই নন, গত ২৭ অক্টোবর রাতে হারুনের লোকেরা আরও একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও তাঁর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে গুলশান থেকে তুলে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আটকে রাখেন। পরে জার্মানপ্রবাসী একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এবং পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুরোধে শিল্পপতিকে ছেড়ে দিলেও প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখনো ওই কর্মকর্তা কারাগারে আছেন।

ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিজিএমইএর এক ব্যবসায়ী নেতা জানান, ওই রাতে ওই শিল্পপতি নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর গাড়িটি গুলশানের ১১৩ নম্বর সড়কের মুখে এলে সাদাপোশাকের একদল পুলিশ গাড়িটির গতি রোধ করে। চালককে জোর করে নামিয়ে দিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর শিল্পপতি ও তাঁর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে চলে যান। এ ঘটনা পরে ব্যবসায়ী মহলে জানাজানি হলেও হারুনের ভয়ে শিল্পপতি কোনো অভিযোগ দিতে চাননি। অভিযোগ আছে, হারুন ওই শিল্পপতির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছিলেন।

জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আবদুল কাইয়ুম বলেন, অপহরণ, গুম, চাঁদাবাজি সন্ত্রাসীর কাজ, পুলিশের নয়। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি সেটা করে তাহলে অবশ্যই তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। আর এ ধরনের সদস্য বাহিনীতে থাকলে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে। সমাজেও ভীতির পরিবেশ তৈরি হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here