বৃষ্টিতে নাকাল গরুর হাট পাইকারদের চরম ভোগান্তি।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ পীর আবদুল মান্নান: কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এই ২৩টির বাইরে রাজধানীর স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতেও এবার প্রচুর দেশীয় গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাটগুলো। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সাথে হাটে আসা ক্রেতারাও পড়েছেন ভোগান্তিতে। কোনো কোনো হাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। হাঁটু পানিতে রাখা হয়েছে গরু। ক্রেতাদের হাটে ঘুরতে হচ্ছে কাদা পেরিয়ে। সব মিলে বৃষ্টিতে নাকাল গরুর হাট।

ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া খারাপের কারণে ক্রেতা সমাগম কম। যারা হাটে আসছেন তারা দাম জানতে চেয়ে চলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি। বিক্রেতাদের আশা আবহাওয়া ভালো হলে জমে ওঠবে পশু বেচাকেনা। দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর হাটে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু, ছাগল, মহিষ নিয়ে ব্যবসায়ীরা হাটে এসেছেন। ক্রয়ের উদ্দেশে ক্রেতা না থাকলেও অনেককে দাম-দর করতে দেখা যায়। তবে বিক্রির আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষায় আছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ক্রেতা কম থাকলেও দু-একটি গরু বিক্রিও হচ্ছে।

বৃষ্টির কারণে কমলাপুর হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বৃষ্টির পানি থেকে গরুগুলোকে রক্ষার জন্য বেপারীদের আপ্রাণ চেষ্টা। কেউ ত্রিপল দিয়ে, কেউ মোটা কাপড়-পলিথিন দিয়ে বৃষ্টিকে মানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারপরেও কেউই রক্ষা পায়নি। বিক্রেতা, ক্রেতা-দর্শনার্থী সবাই ভিজেছেন। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আফতাবনগর হাটে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে গরুর জ্বরের ওষুধ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। কমলাপুর হাটে কুষ্টিয়া মেহেরপুর থেকে আসা নজরুল ইসলাম খামারির রাখাল রিপনের বলেন, ৮টি গরু এনেছি। গড়ে দাম ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। তবে এখনো বিক্রি করার মতো দাম-দর কোনো ক্রেতা করেননি।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার খামারি রফিকুল আলম বলেন, আমার নিজের ঘরে পালিত তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। এবার কোরবানি ও ১৫ আগস্ট পাশাপাশি। কোরবানিতে পশু তো বিক্রি হবেই। সাথে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে অনেক গরু জবাই হয়। সে জন্য এবার বাজার (দাম) পাওয়ার আশা থাকছে। তবে বর্ডারের (ভারতীয়) গরু বড় ফ্যাক্টর। বর্ডারের গরু না এলে লাভের আশা বেশি থাকে।

গাবতলী হাটে ৯০ হাজারে একটি মাঝারি সাইজের গরু কিনে পাইকপাড়ার বাসিন্দা সাইদুর রহমান ঘরে ফিরছিলেন। কত দামে কিনেছেন তা জানতেই অনেকের ভিড়। তিনি বলেন, আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকব বলে আগেভাগেই গরুটি কেনা। শনিরআখড়া হাট বসেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপরে। হাটের সীমানা ছাপিয়ে গরু চলে গেছে দনিয়া এলাকার ভিতরে। সেখানে রাস্তায় পানি জমে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই ভিজছে গরুগুলো। গরুর হাটের কারণে এলাকার দোকানগুলো প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ। এ কারণে পাইকারদের বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ও কম।

গরু রেখে আবার বেশিদুর যাওয়াও ঝুঁকি। দুপুরে অঝোর বৃষ্টিতে অনেক ব্যবসায়ীকে ভিজতে দেখা গেছে। জব্বার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আগের রাতে (বুধবার) গরু বৃষ্টিতে ভিজেছে। প্রচন্ড গরমে সেটা ছিল আরামের। কিন্তু এখন বৃষ্টিতে ভেজা মানেই জ্বর আসতে পারে, ঠান্ডা লাগতে পারে। সে কারণে চিন্তাই আছি। কেরানীগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে শনিরআখড়া হাটে আসা নায়েব আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি অনেক বেড়েছে। আগামী কয়দিন কি হয় আল্লাহ জানেন। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে ওপরের শেড কিংবা ত্রিপল কোনো কাজে আসছে না। গরুও ভিজছে, মানুষও ভিজছে। এভাবে চলতে থাকলে গরু নিয়ে আরও তিনদিন (ঈদের আগের দিন পর্যন্ত) কাটানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাতে দাম যে পড়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এদিকে, বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় পশুর হাটের অনেক জায়গাতেই পানি জমে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটুপানির সঙ্গে পশুর মল-মূত্র মিশে যাওয়ায় হাটে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। একই সঙ্গে, গত দুই দিনে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। একদিকে বৃষ্টির বাগড়া, সঙ্গে মশার উপদ্রব। সাথে ডেঙ্গুর আতঙ্কতো আছেই। তবে, হাট কমিটি আশ্বস্ত করেছেন বিক্রেতাদের। তাদের মতে, অনেকের অফিস এখনও ছুটি হয়নি। তাছাড়া বৃষ্টির কারণেই বের হচ্ছেন না অনেকে। আজ শুক্রবার থেকে বেচা কেনা জমে উঠবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here