নারায়ণগঞ্জের দেশীয় সুতা ও বস্ত্র খাত হুমকির মুখে

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সুতা ও কাপড়ের অপব্যবহারে বিপর্যয়ের মুখে ধাবিত হচ্ছে দেশীয় সুতা ও বস্ত্র উৎপাদন খাত। দেশের সুতা ব্যবসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জের টানবাজার, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজারের কয়েক হাজার তাঁত মালিক, পাওয়ার লুম ও স্পিনিং মিল মালিকরা চরম মন্দায় দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা বিদেশী তুলা ও সুতার আগ্রাসী থাবায় স্পিনিং শিল্পে বিপর্যয়ের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে।

গত এক বছর ধরে অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়ে আসছে দেশের স্পিনিং মিল শিল্প। স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোতে সুতা উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে তিন ডলারেরও ওপরে আর প্রতি কেজি সুতা বিক্রিতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রায় এক ডলার লোকসান দিতে হচ্ছে। আর ভারতীয় সুতা বিক্রি হচ্ছে তিন ডলারের নীচে।

উদ্যোক্তরা মনে করেন, কার্যকর তদারকি জোরদার করলেই বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব। এছাড়া স্থানীয় বাজারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশি অভিযান চালানো, সীমান্ত হাটের ওপর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং শুল্ক কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির কথা বলেছেন তারা। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের একটি অংশ বন্ড লাইসেন্সের বিপরীতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সুতা ও কাপড় আমদানি করে সেগুলো স্থানীয় বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও তাদের বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করেও আমদানি চলছে। আমদানিকৃত সুতা ও কাপড় বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। এতে সংশ্লিষ্ট বন্ড লাইসেন্সধারী রফতানিকারক এবং শুল্ক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী।

যদিও এ বিষয়ে বিজিএমইএ সূত্র বলছে, এরকম কোনো ফাঁকির সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ছয় মাসে বাণিজ্যিক সুতা এবং কাপড় আমদানি বলতে গেলে হয়নি। অথচ বিদেশি সুতা-কাপড়ে দেশীয় বাজার সয়লাব। হাত বাড়ালেই বিদেশি কাপড় এবং সুতা পাওয়া যাচ্ছে। দামে সস্তা হওয়ায় বিদেশি কাপড়ের প্রতি পাইকারি ক্রেতাদের ঝোঁক। কারণ তুলা আমদানি করে দেশে উৎপাদিত সুতা কিংবা সুতা আমদানি করে উৎপাদিত কাপড়ের দাম সঙ্গত কারণেই একটু বেশি। এতে দেশি সুতা-কাপড় বেচা-বিক্রি একরকম বন্ধ প্রায়।

হাজী আবুল হাশেম স্পিনিং মিলের সত্ত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এস এম সোলায়মান জানান, বেশি দামে আমদানিকৃত তুলা দিয়ে সুতা ও কাপড় তৈরি করে মিল মালিকরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। এভাবে মাসের পর মাস লোকসান দিয়ে এবং ব্যাংকের ঋণ ও সুদ গুণতে গিয়েই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমন অবস্থায় বন্ডের সুতা ও কাপড় স্থানীয় বাজারে চলে আসায় মরার উপর খারা ঘা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারী সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা জানান, আমাদের সাথে এনবিআর এর চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন বন্ডের সুবিধায় সুতা ও কাপড় এনে যারা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে তাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ভূমিকা নেয়া হবে। পাট শিল্প ধীরে ধীরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল, তেমনি বস্ত্র খাতকে রক্ষা করতে হলে সরকার তথা এনবিআর এর একটি শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করা উচিত।

সুতা ব্যবসায়ীদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা জানিয়েছেন, শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার অপব্যবহারের কারণে দেশে এক লাখের মতো তাঁতের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ এখন বন্ধ। রফতানিমুখী সুতা এবং কাপড় উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত মিলগুলোও চোরাই পথে আমদানি করা সুতার কারসাজিতে বিপদে পড়েছে। এসব কারণে উৎপাদন ক্ষমতার ৬০ শতাংশ কমিয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট মিলগুলো।

তিনি জানান, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ। অথচ তাদের বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করেও আমদানি চলছে। শুল্কমুক্ত আমদানির অপব্যবহার না ঠেকালে ও দেশীয় বস্ত্রশিল্প রক্ষায় সরকার কঠোর না হলে বিদেশি বস্ত্রের বাজারে পরিণত হবে দেশ। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হবে। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here