ভয়াবহ হয়ে উঠছে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ নদী : দিশেহারা মানুষ।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নদীবহুল বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, দুধকুমারসহ গভীরতা হারানো নদনদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহই এবার হয়ে উঠেছে ভয়াবহ। একটু ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলের কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে চার হাজারের বেশি চর-দীপচরে বসবাসকারি প্রায় ১৬ লাখ মানুষ।

সকালে স্বাভাবিকভাবে স্কুলে গেলেও ফেরার বেলায় বুক পানিতে সাঁতরে ফিরতে হয় গঙ্গাচড়ার বিনবিনার চরের শিশুদের। আর কোলের শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তা কখন ডুবে মরে বা ভেসে যায় ঢলের তোড়ে। বর্ষা শুরু হতে না হতেই পাহাড়ি শ্রোতধারায় প্রবাহিত তিস্তা পাড়ের মানুষের নৈমিত্তিক জীবন হয়ে উঠেছে এমনই। একই অবস্থা অন্যান্য নদ-নদীর ক্ষেত্রে।

জানা গেছে, লালমনিরহাটে ধরলা পানি কমলেও বেড়েছে ভাঙনের প্রকোপ। গত দুদিনে (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) এ নদীর ভাঙনে অন্তত ১৩টি ঘরবাড়ি বিলিন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরো ৩৪ থেকে ৪০টি ঘরবাড়ি। গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধরলার পানি বাড়লেও গতকাল শুক্রবার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এদিকে পানি কমার সাথে সাথে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা। পানির তীব্র স্রোতে ধরলায় বিলিন হয়েছে ১৩টি বসতবাড়ি।

নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। ভাঙনের শিকার ওসমান আলী জানান, চারবার নদী ভাঙার পর ১০ বছর থেকে এই বাধে বসবাস করে আসছিলেন কিন্তু আকস্মিক বন্যায় ঘরবাড়ি বিলিন হওয়ায় তিনি এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।

জেলার সদর উপজেলার মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী গত দুদিনে ১৩টি বসতবাড়ি ভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভাঙনকবলিতদের মাঝে এখনও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। তারা ধরলার বাধে আশ্রয় নিয়ে আছে। এছাড়াও তার ইউনিয়নের আরো ৩০/৪০টি বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে বলেও তিনি জানান।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ধরলার ডানতীর বাধে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ১২/১৩টি বাড়ি ভেঙে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। তবে ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।] এদিকে ধরলার পানির স্রোতে বুধবার সন্ধায় কুলাঘাট ইউপির ওয়াপদা বাজার এলাকার ১৩০ ফিট পাকা সড়ক নদীগর্ভে চলে গেলেও সড়ক বিভাগ দুদিনেও সড়কটি মেরামতের তেমন অগ্রগতি দেখাতে পারেননি।

সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় চারটি গ্রামের প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলো হলো চর শিবের কুঠি, ধর্মপাল ও বোয়ালমারী, চর খারুয়া। সড়কটি দিয়ে এই চারটি গ্রামের মানুষ কুলাঘাট বাজার, লালমনিরহাট জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো। এ ব্যাপারে সওজের লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী নুরায়েন বলেন, সড়কটি মেরামতে অনেক শ্রমিক প্রয়োজন। কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কাজে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়াও এ কাজ করতে কয়েক দিন সময় লাগবে।

এদিকে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা বজায় থাকলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় বৃহস্পতির জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও।

কুড়িগ্রামের চর সারডোব গ্রামের ধরলা পাড়ের বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, গত দুই দিন থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দা চরযাত্রাপুরের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়বে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার জানান, জেলার সবচেয়ে বড় নদ ব্রহ্মপুত্রে যেহেতু পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে সেহেতু বন্যা হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা সূত্র জানায়, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। যার কারণে নিচু এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে বিপাকে পড়ে চরাঞ্চলবাসী। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নিচু এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা অনেকটা কমে গেছে। তবে হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের কিছু-কিছু এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি গ্রামের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত হতে উজান থেকে পানি ধেঁয়ে আসছে। সে কারণেই বিভিন্ন চর প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারছে না চরাঞ্চলবাসী। যে হারে পানি বেড়েই চলছে তাতে করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোটা চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক পরিবার তাদের গৃহপালিত পশুপাখি, ধান, চাল, আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, তার ইউনিয়নের আটটি ওয়ার্ড পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এখনো পানিবন্দি পরিবারগুলো চরেই বসবাস করছে। পানি বেড়ে গেলে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী জানান, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পানি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি জেনেছি। সকলকে সর্তক থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here