মূলধন ঘাটতি ১০টি ব্যাংকের ১৮,৩৮৮ কোটি টাকা ।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ খেলাপি ঋণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০টি। এর মধ্যে সরকারি ও বিশেষায়িত খাতের ৬টি, বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংক ও বিদেশি একটি ব্যাংক রয়েছে। আর এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের প্রভাবে মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে ১০টি ব্যাংক।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাওয়াকে ব্যাংকের খাতের অব্যাহত দুরবস্থা বলে মনে করেন পিআরআই-র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে সরকার দুর্বল ব্যাংকগুলোতে একীভূত করার উদ্যোগ নিতে পারে। সরকার ব্যাংকগুলোকে বলতে পারে, হয় মূলধন ঘাটতি দূর কর, না হয় অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হও।

এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ কাজে লাগতে পারে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লুটপাটের কারণে দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই মূলধন ঘাটতি বাড়ে। ১০টি ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের মূলধন ঘাটতি থাকলেও কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাখতে সক্ষম হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো খাতে ১১ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। আগের বছর ঘাটতি ছিল ৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও অ্যানটেক্স গ্রুপ জালিয়াতির অকুস্থল জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এর আগে ডিসেম্বর শেষে ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।

হলমার্কসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে নাম আসা সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি গত ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩২০ কোটি টাকা হলেও এবারে তাদের ঘাটতি কাটিয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। ব্যাংকটির বর্তমান ঘাটতি ২৩৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। তবে রূপালী ব্যাংকের গত ডিসেম্বর শেষে ২০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকলেও মার্চে এসে ঘাটতি রয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঘাটতি বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল  ৮৮৩ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ৭৩৪ কোটি।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৬৯ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৩৪ কোটি, এবি ব্যাংকের ৩৭৬ কোটি ও বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডার বা মালিকদের জোগান দেওয়া অর্থই মূলধন হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি হলেও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কিছুটা কমেছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের ১৮ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত বছর ২৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here