সিদ্ধিরগঞ্জে শতকোটি টাকার ওয়াক্ফ সম্পদ বিক্রি,তদন্ত বিঘ্নিত চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ  সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : সিদ্ধিরগঞ্জে আজগর হাজী ওয়াক্ফ এস্টেট এর প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদ বিক্রিরর তদন্ত শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে ওয়াক্ফ পরিদর্শক মো: রেজাউল করিম সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। জমি আত্নসাতকারী চক্র তদন্ত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা
করলে উত্তেজনা ও হাতা হাতির ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে পরিদর্শকের উপস্থিতেই বিক্ষোভ মিছিল করে মসজিদ কমিটির লোকজন।

জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ ও জালকুড়ি মৌজার ২২ টি দাগে ৫৬২ শতাংশ জমি রয়েছে আজগর হাজী ওয়াক্ফ এস্টেটের। ১৯৩২ সালে আজগর হাজি এই জমি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করেন। পরে ১৯৯৬ সালে এই জমি ওয়াক্ফ কর্তৃপক্ষ এন্ডল করে নেয়। যার ওয়াক্ফ তালিকাভূঁক্ত স্বারক ইসি নম্বর-১৮২৫৪। বর্তমান বাজারে ওই জমির মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা বলে জানায় স্থানীয়রা। জমি দখলমুক্ত করতে এলাকার সাতটি মসজিদ কমিটির লোকজন একত্র হয়ে গত তিনমাস ধরে প্রতিবাদ সভাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বরনাপন্ন হয়েছেন।  অভিযোগ জানা গেছে, আজগর হাজীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগং সত্য গোপন করে ওয়াক্ফ জমি বিক্রি করে দেয়।

ওয়াক্ফ কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত মোতাওয়াল্লীর বিরুদ্ধেও রয়েছে জমি বিক্রির অভিযোগ। ওয়াক্ফ কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে মোতওয়াল্লীর সঙ্গে আতাঁত করে আজগর হাজির ওয়ারিশগং এই জমি বিক্রি করেছে বলে জানায় মিজমিজি দক্ষিণপাড়া বাইতুল সালাম জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো: আলি হোসেন ভূঁইয়া। একই এলাকার অন্য এক মসজিদ কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন জানান, আজগর হাজির বংশধর না হয়েও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জহিরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম মোতওয়াল্লী নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।

তারা মসজিদ উন্নয়নের নামে জমি বিক্রির জন্য আবেদন করলে ওয়াক্ফ অফিস অনুমতি দেন। কিন্তু বিষয়টি জানতে পেরে মসজিদ কমিটির তৎকালিন সভাপতি লিখিতভাবে আপত্তি জানালে জমি বিক্রির অনুমতির আদেশটি ২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি বাতিল করেন কর্তৃপক্ষ। আদেশ বাতিলের পর দুই মোতওয়াল্লী ২৫ শতাংশ জমি সাব কবলা দলিল মূলে বিক্রি করেন। যার কোন বৈধতা নেই। অথচ জমিতে গড়ে উঠেছে বসতি। ওয়াক্ফ জমি উদ্ধার করতে মিজমিজি দক্ষিণপাড়া বায়তুল মামুর জামে মসজিদের মোতওয়াল্লী আমিনুল হক ভূঁইয়া রাজু ওয়াক্ফ প্রশাশক কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে গত বছরের নভেম্বর মাসে লিখিত আবেদন করেন।

এরই প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বে থাকা ওয়াক্ফ পরিদর্শক মো:রেজাউল করিমকে চিঠির মাধ্যমে আদেশ দেন বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসক অফিস। তদন্ত চলার সময় পরিদর্শক রেজাউল করিমের উপস্থিতিতেই জমি বিক্রিকারী চক্রের আব্দুল মতিন ওরফে মতিন পাগলা কিছু লোকজন নিয়ে তদন্ত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করার চেষ্টা চালায়। এতে উত্তেজিত হয়ে উঠে মসজিদ কমিটির লোকজন। ঘটে হাতা হাতির ঘটনা। তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টির হীন তৎপরতার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয়রা।  এদিকে ওয়াক্ফ জমি কিনে বেকাদায় পড়েছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন বিভিন্ন ত্রেতারা। জমি হারানোর আশঙ্কায় দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। মো: কবির হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি জানতাম না যে এই জমি ওয়াক্ফ করা।

আলি হাজি ও তমু হাজির কাছ থেকে তিনি জমি কিনেছেন বলে জানান। একই কথা বলেন ক্রেতা নাসির উদ্দিন, আহম্মেদ হোসেন মজুমদার ও মোহাম্মদ আলি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আলি হাজি ও তমু হাজি হলেন মৃত আজগর হাজির নাতি।  জানতে চাইলে আলি হাজি বলেন, আমরা ওয়াক্ফ জমি বিক্রি বা ভোগ দখল করছিনা। যেহেতু তদন্ত চলছে সত্য প্রকাশ হবে। তবে মতিন পাগলা তার পরিচিত ও ঘনিষ্ট গণমাধ্যম কর্মী ব্যতিত অন্য কারো সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে সহকারি ওয়াক্ফ প্রশাসক মাসুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওয়াক্ফ জিমি বিক্রির বিষয় অবগত হয়ে স্থানীয় পরিদর্শক মো: রেজাউল করিমকে সরেজমিন পরিদর্শণ করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।  পরিদর্শক রেজাউল করিম বলেন, তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আমি দ্রুতই প্রতিবেদন দাখিল করব। ওয়াক্ফ জমি দখল মুক্ত করতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here