না.গঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জে ঝুট ব্যবসায়ি,ভূমিদস্যু থাকবে,না হয় ওসি থাকবে : পুলিশ সুপার

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম (পিপিএম) (বার) বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেছি। প্রায় ৮ মাস। এই আটমাসে কাউকে ছাড় দেই নাই। আগামীতেও দিবো না। কেউ পেশি শক্তি দেখাবে। আইনশৃংখলার অবনতি ঘটাবে। তা মেনে নিবো না। আমি আইনের মধ্যে থেকেই সব করছি। আইনের মধ্যেই আছি। বাকী দিন আইনের মধ্যেই থাকবো। এতে আমার কাজে কেউ খুশি-বেজার হলে, আমার কিছু যায় আসে না।

তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে কোন ঝুট সন্ত্রাসী থাকবে না। ঝুট সন্ত্রাসী অবশ্যই ঝুট ব্যবসায়ী না। ঝুট নিয়ে মারামারি হয়। এরা খারাপ ব্যবসায়ি। সিদ্ধিরগঞ্জে হয় ঝুট ব্যবসায়ি ও ভূমিদস্যু থাকবে না হয় ওসি থাকবে। চয়েজ ওসির।আমি ওসিকে চয়েজ দিয়ে গেলাম। সিদ্ধিরগঞ্জে ঝুট ব্যবসায়ি থাকবে না হয় সে (ওসি) থাকবে। এটা যদি সে করতে না পারে তাহলে আগামী সাপ্তাহে তার মিটিংয়ে থাকার দরকার নাই।

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, জিডি, পুলিশ ভেরিফিকেশন, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন, মামলা করতে যদি পুলিশ টাকা নেয় তাহলে আমাকে জানাবেন, সেই পুলিশ সদস্য এই থানায় থাকবে না। গত এক বছরে ১৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা বদলী হয়েছে এখান থেকে। সবগুলোই কোন না কোন কারণে বদলী হয়েছে। প্রশাসনিক কারণে কেউ কেউ। এক বছরের আগে কেউ বদলী হয় না। যদি এক বছরের না হতেই বদলী হয় তা হলে বুঝতে হবে তার সমস্যা আছে। তার মানে পুলিশে শুদ্ধি অভিযান চলছে।

তিনি আরও বলেন, যে পুলিশ সদস্য জণগনের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে সেই পুলিশ সদস্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় থাকবে না। কোন ছিচকে চোরের সাথেও খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না, সেখানে মা-বোন তো দূরের কথা। কারণ, কোন ছিচকে চোরের টেক্স এ হয়তো আমার বেতন হয়। খারাপ ব্যবহার করার জন্য সরকার আমাকে এখানে পাঠায় নাই। সংবিধান, সরকার, আইন আমাকে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করার অনুমতি দেয় নাই। আমি থানার ডিউটি অফিসারের রুমে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি। কেউ যেন পুলিশের সহযোগিতা চাইতে এসে হয়রানী না হয়। এবং সহযোগিতা পেতে দীর্ঘ সময় যাতে বসে থাকতে না হয়। কখনও ডিউটি অফিসারের রুমে কোন জটলা বা সমস্যা দেখলে আমি ওসিকে ফোন করে বলি দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। এই ব্যবস্থা আমি গত সাপ্তাহ থেকে শুরু করেছি।

মাদক প্রসঙ্গে এসপি জায়েদুল বলেন, কতজনকে ধরলে মাদক নির্মূল হবে বলতে পারবেন?। প্রতিটি মহল্লায়-পাড়ায় মাদক বিক্রেতা-সেবী রয়েছে। ঘরে ঘরে মাদক বিক্রেতা-মাদক সেবী। আজ হয়তো কোন বিক্রেতাকে ধরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হলো, পরবর্তীতে এক দুই সাপ্তাহের মধ্যে সে জামিনে এসে আবার ব্যবসা শুরু করবে। তার পেছনে তো গডফাদার আছে। যারা ওর পেছনে টাকা খরচ করে। তাই আমিরা ধরবো আর তারা জামিনে চলে আসবে এভাবে হবে না। এরজন্য মাদকমুক্ত করতে হলে সমাজ ও পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার বলেন, বাবা-মা’কে তাদের সস্তানের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তারা কোথায় যায়, কার সাথে মিশে। কার সাথে আড্ডা দেয়। খোঁজ রাখতে হবে। আপনি আপনার সন্তানকে কেন বাটন মোবাইল কিনে না দিয়ে টাচ মোবাইল কিনে দিচ্ছেন। প্রতিটি জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলরদের বলেছি, আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি করেন। আমাকে ডাকেন, আমি আসবো। আপনার ওয়ার্ডে আপনি সিসি ক্যামেরা বসান। কারণ একশ সিকিউরিটি গার্ড ১টি সিসিক্যামেরার সমান। সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করলে অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব। এবং অপরাধ কমে যাবে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, জিডি-মামলা করতে টাকার প্রয়োজন নাই। এ বিষয়ে কিংবা অন্য বিষয়ে অভিযোগ ওসিকে জানাবেন। তিনি কল না ধরলে আমি মনে করি তার এখানে থাকার প্রয়োজন নাই, কারণ অনেকে ওসি হওয়ার জন্য বসে আছে। আমার কাছে ওসিকে কল দেওয়ার পর কোন ব্যবস্থা না নিলে আমাকে কল দিয়ে জানাবেন। সিদ্ধিরগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় ডিবি’র সোর্স পরিচয়ে অনৈতিক কাজ হয়, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসপি জায়েদুল আলম বলেন, পুলিশের এবং ডিবি’র কারো কোন সোর্স থাকবে না। এমন পরিচয় কেউ দিয়ে খারাপকাজে লিপ্ত হলে তাকে পুলিশে দিবেন, তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হবে। এর আগের মিটিংয়েও আমি শুনেছিলাম পুলিশের সোর্স।

এ মিটিংয়েও আমাকে শুনতে হলো, দুঃখজনক। পুলিশের সোর্স এ এলাকার সকল মানুষ। আলাদা কোন সোর্স পুলিশের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজনে সোর্স লাগবে যে পুলিশের তাকে সিদ্ধিরগঞ্জে রাখা হবে না। প্রয়োজনে সিদ্ধিরগঞ্জের সকল পুলিশ চলে যাবে। সভাপতির বক্তব্যে ওসি কামরুল ফারুক বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা শিল্পাঞ্চল এলাকা। এখানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মানুষ বসবাস করে। এ এলাকায় ক্রাইম হয় ভিন্ন ধরনের। বর্তমান এসপি’র সময়ে তার নির্দেশনায় পূর্বের তুলনায় সকল খারাপ কাজ অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। আগে যেখানে ২০-২৫ টি ছিনতাই, ১১০-১২০ টি মাদক মামলা, ৮-১০ টি মার্ডার হতো, গত ৩-৪ মাসে মাত্র ২টি খুন হয়েছে।

বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি-মামলা, পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে টাকা লাগে না,পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে টাকা লাগে না। যদি এরকম অভিযোগ পান আমার কাছে এবং এসপি সাহেবের নিকট জানাবেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এসপি সাহেবের নিকট জানাবেন।

এসময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক তাজিম বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক নসিক ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান, নাসিকের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূইয়া রাজু প্রমূখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here