সিদ্ধিরগঞ্জে শামীম ওসমানের উপস্থিতিতে ডিএনডির পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জে গত কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় ডুবে আছেন ডিএনডি এলাকার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা। পানিবন্দি হয়ে এই সাময়িক দূর্ভোগের কারণে জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে জলাবদ্ধতা কবলিত বিভিন্ন এলাকাসহ সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ ডিএনডি পাম্প হাউস পরিদর্শন করার সময় এই আশ্বাস দেন তিনি। এসময় শামীম ওসমানের উপস্থিতিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি পাম্প চালু করে পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করে প্রকল্পটির দায়িত্বে থাকা সেনা সদস্যরা।

জানা গেছে, গত কয়েক দিনের বর্ষণে নিদারুন দুর্ভোগে পরেন ডিএনডির অভ্যন্তরে থাকা প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা। শুক্রবার বিষয়টি সরজমিনে তদারকি করতে এসে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান গণমাধ্যমকে জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই জলাবদ্ধতা নিরসন করতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় এবং ডিএনডি উন্নয়ন পকল্পের দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন তিনি।

শামীম ওসমান জানান, প্রকল্পটি শেষ করতে আরও প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকার প্রয়োজন। আর্থিক বরাদ্দের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও তিনি আলোচনাও করেছেন। বরাদ্দের ব্যবস্থা হয়ে গেলে সেনাবাহিনী এই প্রকল্পটিকে হাতিরঝিলের চেয়েও মনোমুগ্ধকর অবস্থায় পরিনত করবে। এতে ডিএনডির বিশ লাখ বাসিন্দা স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শামীম ওসমান আরও বলেন, ডিএনডির ভেতর ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে অসহনীয় কস্ট ভোগ করছেন। এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। বাংলাদেশে করোনা এসেছে। এই করোনার কারণে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় যে কাজ শুরু করেছিলেন আমাদের দেশপ্রমিক সেনাবাহিনীর মাধ্যমে, সেই কাজটি গত তিন মাস ধরে স্থগিত অবস্থায় থাকার কারণে এই পুরো এলাকা এখন পানির নিচে চলে গেছে।

আমি বৃহস্পতিার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর যারা ডিএনডির জলাবন্ধতা নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার রাত থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এসময় শ্রমিক পাওয়া মুশকিল, সেই ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করছেন।

যেই পাম্প প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর চালু হওয়ার কথা, বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহদাকার সেই পাম্প আজ চালু হয়েছে। আশাকরি এই দুটি পাম্প চালু থাকলে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিএনডির ভেতর জমে থাকা পানি নিস্কাশন হয়ে যাবে।

এসময় ডিএনডি উন্নয়নের প্রকল্প পরিচালক ১৯ ইসিবি’র লে. কর্ণেল মাশফিকুল আলম জানান, যে দুটি নতুন পাম্প বসানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে পারি নিষ্কাশনের জন্য, এই মুহুর্তে জলাবদ্ধতা দূর করতে এগুলো ম্যানুয়ালি চালানোর উপযোগী করা হয়েছে।

পুরোনা পাম্প হাউজ থেকে বাইপাস লাইন করে পুরো ডিএনডির জলাবদ্ধতায় থাকা অতিরিক্ত পানি নিস্কাশিত করা হবে। তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা মেগা প্রজেক্টে অর্ধশত খাল সংস্কার করেছিলাম। এছাড়া বেশ কিছু খালের কাজ আটকে আছে উচ্চ আদালতে দখলকারীদের মামলার কারণে।

এই সময়ের মধ্যেই গত কয়েক মাসে সেই খাল গুলোতে ময়লা আবর্জনা ফেলে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে গেছেন এলাকাবাসী। ফলে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। যদি খালগুলো বহমান থাকতো তবে এই জলাবদ্ধতা হতো না। আমরা আশা করছি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিএনডিবাসী সুফল পাবেন।

এর আগে করোনা দূর্যোগকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্বকপালনরত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সংবাদ কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এমপি শামীম ওসমান পিপিইসহ বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দেন সিনিয়র সাংবাদিকদের হাতে। ডিএনডির জলাবদ্ধতার লাঘব করার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের প্রচেষ্টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

এ প্রকল্প ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর শুরু করা হয়। এ প্রকল্পটি ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমে ছিল। তখন এটি তড়িগড়ি করে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এ প্রকল্পের ভেতরে অবৈধ স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, বিদ্যুত ও পানির লাইন রয়েছে। এ গুলো সরাতে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে। এখন এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩’শ কোটি লাগবে।

তবে বর্তমানে অন্তত আরো ৫০০ কোটি টাকা হলে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অর্থ বরাদ্দ না হলে ডিএনডিবাসীকে জলাবদ্ধ হয়েই অনেকদিন ভুগতে বলে উল্লেখ করেন তারা।

উল্লেখ্য, ১৯৬২-৬৮ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। যার মধ্যে নারায়গঞ্জ-৪, ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা এলাকা রয়েছে।

১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সনের বন্যায়ও ডিএনডিতে পানি প্রবেশ না করায় মানুষ ডিএনডিতে বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে থাকে। এতে করে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে থাকে ডিএনডিতে। ইতিপূর্বেও একাধিকবার ডিএনডিতে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছিলো। চলতি সালের এপ্রিল মাস থেকে ফের ডিএনডিতে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। যা এখন ভয়াবহস রূপ ধারণ করেছে।

এদিকে ডিএনডির অনেকস্থানে প্রভাবশালীরা মাছ চাষের জন্য বিভিন্নস্থানে পানি আটকে রেখেছে। এতে ডিএনডিবাসীর দূর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন এলাকাবাসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here