না’গঞ্জ বন্দরের ভয়ংকর সন্ত্রাসী বল্টু আমজাদ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাবাসী

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ  নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বন্দরে স্ত্রীকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় শাহীন মিয়া (৪০) নামে রঙমিস্ত্রীকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে আবারো আলোচনায় এসেছেন বন্দরের আলোচিত ভয়ংকর আওয়ামী সন্ত্রাসী আমজাদ ওরফে বল্টু আমজাদ ও তার বাহিনী। মামলার আসামী হয়ে তিনি এখন পলাতক। তবে এ আমজাদ একদিনে বেড়ে উঠেনি। বরং ধীরে ধীরে সরকারী দলের নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠে দুর্ধর্ষ হিসেবে। ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকেন তিনি। প্রভাববিস্তারের জন্য তিনি ব্যবহার করেন এমপি ও আ’লীগ নেত্রী মেয়রের ছবি। অথচ বন্দর থানা পুলিশের তালিকায় সে ৬ নাম্বার আসামী। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে উঠেছিল ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি সহ নানা অভিযোগ। আমজাদের এ বাজে চরিত্রের কারণে নিজ স্ত্রীও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পুলিশকে মারধর করে একবার পালিয়ে গেলেও ছিলেন অধরা।

যদিও ২০১৭ সালের মে মাসে আমজাদ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ওই সময়ে ওই সময়কার বন্দর থানার ওসি আবুল কালাম জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসী আমজাদ হোসেন এলাহী বল্টু আমজাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র রাখার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১২টি মামলা রয়েছে। সে বন্দর থানার সন্ত্রাসী তালিকার ছয় নম্বর আসামি।
তিনি জানান, দেউলী বটতলা এলাকার ভাড়াটিয়া এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে আমজাদ। ওই তরুণীর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাকে ধরে ডিবি পুলিশে খবর দেয়। ডিবি পুলিশ এসে তাকে আটক করে বন্দর থানায় সোপর্দ করে।

সবশেষ গত ২৮ জুন বন্দরে তার নেতৃত্বে শাহীন নামের একজন রং মিস্ত্রীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। সেটাও হয়েছে প্রকাশ্যে। আহত শাহীন সাংবাদিকদের জানান, হামলাকারীরা এর আগেও একাধিকবার তার স্ত্রী ববিকে ইভটিজিং ও শারীরিক ভাবে হেনস্তা করেছে। এ ব্যাপারে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। এর জের ধরেই শুক্রবার সকালে শাহীনের সামনে স্ত্রীকে আপত্তিকর মন্তব্য ও গালমন্দ করে সস্ত্রাসী আমজাদ হোসেন। এতে প্রতিবাদ করে শাহীন। পরে আমজাদ তার সহযোগিদের নিয়ে ২৮ জুন শুক্রবার দুপুরে হামলা চালিয়ে প্রথমে মারধর পরে দেশী অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে স্থানীয়রা এসে বাধা দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, পূর্ব বিরোধের জের ধরে সকালে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। পরে প্রতিপক্ষের লোকজন শাহীনের উপর হামলা চালায়। এতে শাহীনের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সে সুস্থ আছে। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় শাহীনের স্ত্রী ববি আক্তার বাদী হয়ে ৫জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলো, আওয়ামী ভয়ংকর সন্ত্রাসী বল্টু আমজাদ (৪৭), মনির (৫২), আপন (১৮), আকাশ (২৫) ও কিশোর ওরফে শফিক (৩৫)। ঘটনার পর থেকে অপরাধীরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে ২ জুলাই দুর্ধর্ষ আমজাদ সহ সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে মামলার বাদী ববি আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, বক্তারকান্দি এলাকার মূর্তমান আতংকের নাম বল্টু আমজাদ। এমন কোন অপকর্ম নেই আমজাদ করেনি। তার বিরুদ্ধে প্রায় ডজন খানেক মামলা রয়েছে। যুবতী মেয়ে দেখলেই এই শীর্ষ সন্ত্রাসী কু-প্রস্তাব দিয়ে থাকে। আর রাজি না হলে জোরপূর্বক তার সতীত্ব কেড়ে নেয়। তার লালসার ঘৃন্য চোখ থেকে আপন ভাতিজি, ভাগ্নি, ভাগ্নে বউ, উকিল মেয়েও ছাড় পায়নি। আমজাদের ছেলে পেশাদার মাদক বিক্রেতা হৃদয় ও আপন তার ভাই টুন্ডা মনিরসহ পরিবারের সকলেই অবৈধ বালু ড্রেজার ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।

আমার স্বামী শাহীন মিয়াকে নৃশংসভাবে কুপিয়েছে এ নরপশু। আমি একজন অসহায় নারী হয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বক্তারকান্দি এলাকার দাগী সন্ত্রাসী লম্পট বল্টু আমজাদ, টুন্ডা মনির, হৃদয়, আপনসহ সকল অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। এলাকাবাসী জানায়, এর আগেও গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন বল্টু আমজাদ। বন্দর উপজেলার দেউলী চৌরাপড়া বক্তারকান্দী এলাকায় সাবেক ইউপি মেম্বার মো: আলী বাচ্চুর বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাংচুর চালানোর অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ওই সময়ে বাচ্চু মেম্বারের বাড়ি ভাংচুর ও বাড়ির মেইন গেইট ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ভেঙ্গে ভেতরে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বাচ্চু মেম্বারকে হত্যার উদ্দেশ্যে যায়।

পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আমজাদ ও তার বাহিনীর ক্যাডার মনির হোসেন, গুলজার হোসেন, আপন, হৃদয়সহ আরো ২০/২৫ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী সটকে পরে। ওই সময়ে বাচ্চু মেম্বার জানান, আমজাদ বাহিনী শুধু আজকেই নয় দীর্ঘদিন ধরে আমাদের উপর পাশবিক ও শারীরীক নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। আমাদের জমি জমা ও বাড়িঘর জোরপূর্বক দখল করার জন্য একাধীকবার আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এছাড়া বল্টু আমজাদ কর্তৃক নারীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টার ঘটনাও ঘটে। অপমান সহ্য করতে না পেরে প্রহৃত স্ত্রী আত্মহত্যার জন্য ৬০ টি ঘুমের বড়ি ও ইঁদুর মারার ওষুধ সেবন করে। পরে আমজাদ তার স্ত্রী সন্ধ্যাকে তরিঘরি করে শহরের খানপুর ৩ শত শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি নিয়ে যায়।

এলাকাবাসী আরো জানায়, নারারায়ণগঞ্জ সিটির বন্দরের বক্তারকান্দি এলাকার বাসিন্দা মৃত লাল মিয়া সরদারের পুত্র আমজাদ ওরুফে বল্টু আমজাদ দীর্ঘনি ধরে উক্ত এলাকার উঠতি বয়সের মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত সহ ধর্ষণ করে আসছিল। এরকম শত ঘটনা ঘটালেও কেউই নেইনি কোন আইনগত ব্যবস্থা। এর আগেও সিটি কর্পোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের দেউলি চৌরাপাড়া এলাকায় অপরিকল্পত ড্রেজিংয়ের কারণে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌছে যার পেছনে ছিল আমজাদ। গত বছর মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বন্দর থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হত্যা ও ধর্ষণসহ প্রায় ডজন খানেক মামলার আসামী আমজাদ ওরফে বল্টু আমজাদের পোস্টার সাঁটানো নিয়ে বন্দরের সর্বত্রই আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে।

প্রকৃতপক্ষে দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসী সরকার দলীয় কোন পদ-পদবী না থাকলেও স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান ও প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের ছবি এবং বন্দর থানা আ’লীগের নাম ব্যবহার করে বন্দরের সর্বত্রই রঙিন পোষ্টারে সাঁটিয়ে দেয় বল্টু আমজাদ। একই সাথে পোস্টারের নিচে সন্ত্রাসী বল্টু আমজাদের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছার সৌজন্য হিসেবে বন্দর থানা আওয়ামীলীগের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকাশ থাকে যে এর আগে সন্ত্রাসী আমজাদ জেলা যুবলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদিরের নাম ব্যবহার করে পোস্টারিং করে এর কিছুদিন পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ছবি ব্যবহার করে অনুরূপভাবে পোস্টারিং করে বন্দরের বিভিন্ন স্থানে সাঁটে।

উল্লেখ্য, গত বছর পুলিশকে মারধর পালিয়েছে যায় আমজাদ ওরফে বল্টু আমজাদ। গত বছরের ২২ জুলাই থানার দেউলি চৌরাপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। ওই সময়ে বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে হানা দেয়। আমজাদ স্থানীয় মসজিদের সামনে পুলিশকে দেখে দ্রুত পালানোর চেষ্টাকালে পুলিশ তাকে হাতে নাতে আটক করে। এ সময় আমজাদ দারোগা মোখলেছুর রহমান ও কনষ্টেবল হাবিবকে মারধর করে পালাতে সক্ষম হয়। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here