না’গঞ্জে কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডব

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ শহর প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ফিল্মি স্টাইলে তান্ডব চালিয়েছে স্থানীয় কিশোর গ্যং। তুচ্ছ ঘটনায় আলমগীর হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির উপর হামলা করে পশুর মতো নির্যাতন করা হয়। রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৭/৮ জন সদস্য মিলে দুই দফায় তাকে বেধড়ক মারধর করে। তার জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু সড়কে প্রায় বিশ পঁচিশ মিনিট যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা।

মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাষাঢ়ার বিজয়স্তম্ভের নিকটবর্তী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রিপারেটরী স্কুলের মধ্যবর্তী বংগবন্ধু সড়কে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত আলমগীর সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি শহরের উত্তর চাষাঢ়া এলাকার রবিনের বাড়ির ভাড়াটে। নির্যাতনের শিকার আলমগীর হোসেন তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, সাড়ে ৮টার দিকে তিনি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছিলেন।

এসময় শহরের আমলাপাড়া মাছুয়াপাড়া এলাকার ইসলাম মিয়ার বখাটে ছেলে অনিক (১৭) ও তার এক বন্ধু মোটর সাইকেল বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় তার শরীরে ধাক্কা লাগে এবং তিনি ব্যথা পান। এতে আলমগীর প্রতিবাদ করলে অনিক তাকে চড় থাপ্পড় মারে। এতে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে অনিক ও তার বন্ধু বাহার নামে তাদের এলাকার কথিত বড় ভাইসহ কয়েকজনকে ফোন করলে মূহুর্তের মধ্যে তিনটি মোটর সাইকেলে চড়ে ছয় সাতজন ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। এরপর সবাই মিলে তাকে প্রায় পনের মিনিট এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পর ঘুষি লাথি মেরে আহত করে।

দুই তিনজন তাদের মাথার হেলমেট খুলে সেটি দিয়ে তার মাথায় একের পির এক আঘাত করে। তার জামা কাপড় টেনে হেঁচড়ে ছিড়ে ফেলে। এক পর্যায়ে তার শার্টের পকেটে রাখা সাড়ে ৮ হাজার টাকা ছিনতাই করে হুমকি দিয়ে চলে যায় হামলাকারিরা। এ ঘটনার পর আশপাশের লোকজন আহত আলমগীরকে উদ্ধার করে সদরের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরে সদর মডেল থানায় গিয়ে এ ব্যাপারে তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘটনায় সেখানে রাত এগারোটা পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে।

আহত আলমগীর হোসেনের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হামলাকারিরা আমার ভাইয়ের কানে বেশ কয়েকটি লাথি দিয়েছে। যার কারণে ভাই শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। কানে কিছুই শুনছেন না। ভাইয়ের উপর হামলাকারি কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার ও ন্যায় বিচার দাবি করেন তিনি। এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আমলাপাড়া মাছুয়াপাড়া এলাকার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, অনিক এর মা ফতেহ ও বাবা ইসলাম চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারা ইতিপূর্বে চাষাড়া হকার্স মার্কেটের পেছনে ঋষিপাড়ায় ভাড়া থাকতো।

ইয়াবা বিক্রির কারণে এলাকার পঞ্চায়েত কমিটি কয়েক মাস আগে বিচার সালিশ ডেকে তাদেরকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দেয়। এরপর থেকে তারা আমলাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকে। সেখানেও এই মহিলা, তার স্বামী ও ছেলে অনিক ইয়াবার ব্যবসা করছে। পাশাপাশি অনিক কিশোর গ্যাং তৈরি করে আমলাপাড়া, মাছুয়াপাড়া, মিশনপাড়া, ডনচেম্বার ও খানপুর এলাকায় ছিনতাই এবং ইয়াবা বিক্রির নের্তৃত্ব দিচ্ছে। তাদের এই কিশোর গ্যাংকে সেল্টার দিচ্ছে মাছুয়াপাড়া এলাকার বাহার নামে এক সন্ত্রাসী। অনিকের ফোন পেয়ে এই বাহারের নেতৃত্বে কিশোর বয়সের একটি গ্যাং তিনটি মোটর সাইকেলে চড়ে ঘটনাস্থলে এসে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও তান্ডব চালায়।

ঘটনাস্থলে যাওয়া সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক পরিমল বলেন, খবর পেয়ে আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের গ্রেফতার করতে মাছুয়াপাড়া ও আমলাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু কাউকে পাইনি। তবে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা তাদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, অনিকের ব্যাপারে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে খোঁজ খবর নিয়েছি। তার মা ইয়াবার ব্যবসা করে বলে পঞ্চায়েত কমিটি তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করায় বর্তমান ঠিকানা কেউ বলতে পারছে না।

তবে আমরা তাকে গ্রেফতার করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা এলাকার দায়িত্বে থাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদি ইমরান সিদ্দিকী বলেন, আমরা অভিযোগ গ্রহণ করে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাং নির্মূল করতে আমরা আন্তরিকভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পঞ্চায়েত কমিটির নের্তৃবৃন্দের সাথে আমরা বৈঠক করেছি।

তাদের মাধ্যমে বখাটে কিশোরদের বুঝিয়ে অপরাধমূলক কাজ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফ্রি কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থাও করেছি। তবে অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হওয়াসহ নিজ সন্তানদের চালচলন ও গতিবিধির দিকে নজর দেয়ার আহবান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২০ অক্টোবর রাত আটটার দিকে চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে মোবাইল চোর আখ্যা দিয়ে শান্ত নামে শনির আখড়া এলাকার এক যুবককে প্রকাশ্যে মার ধরসহ এমন ফিল্মি স্টাইলে তান্ডব চালায় স্থানীয় কিশোর গ্যাং। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here