না.গঞ্জ শহরে দেওভোগে নির্মানাধিন শেখ রাসেল নগর পার্ক নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ রাজধানী হাতিরঝিলের আদলে তৈরি করা নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে শেখ রাসেল নগর পার্ক নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবী এ জমি তাদের। এ নিয়ে তারা পৃথক দুটি মামলাও ঠুকেছেন। আর সবশেষ ১২ অক্টোবর তাদের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এসে দেখে গেছেন পুরো প্রকল্প। অপরদিকে রেল মন্ত্রীও সংসদীয় কমিটির সভাতে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তবে বিপরীতে সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সম্প্রতি এ স্থানে পার্ক নির্মাণ নিয়ে অতীত সংগ্রাম তুলে দরেন।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নাসিকের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকা। ২০১৬ সালের ৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওই প্রকল্পের কার্যাদেশ দিলেও প্রকল্পের ৪ মাস পর ওই কাজ শুরু করেছে প্রকল্পের টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠান। গত ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যা এখনও চলমান আছে। সম্প্রতি এখানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রেলওয়ের কোয়ার্টার ভেঙ্গে ফেলা হয়। এ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ও ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় আসামী করা হয়েছে নাসিকের সার্ভেয়ার কালাম মোল্লা, আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার, পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আলমগীর হিরণসহ অজ্ঞাত ৫০/৬০জনকে। মামলায় বলা হয়, অবৈধভাবে দখলের সময় রেলওয়ের জিআরপি পুলিশ, রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহনীর (আরএনবি) লোকজন ও রেলের বিভাগীয় উর্দ্ধতন কর্মকর্তা কর্মচারীগণ বাধা প্রদান করলেও বহিরাগত স্থানীয় লোকজনের কারণে তারা টিকতে পারেনি।

এদিকে ১২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ রেলওয়ের দখলকৃত জায়গা পরিদর্শন করতে এসে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেলের কর্মকর্তারা। এসময় তারা রেলওয়ের জায়গা দখল করে গড়ে উঠা শেখ রাসেল নগর পার্ক ও জিমখানা এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ৩২টি রেলওয়ে কোয়াটার ভাংচুরের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন শনিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের জায়গা আমাদের দখলে রাখতে যা ব্যবস্থা করার দরকার আমরা করবো। পার্ক করতে হলে সেটা সঠিক প্রসেস মোতাবেক করতে হবে, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব জায়গায় আছে সেখানে করুক, রেলওয়ের জায়গায় কেন?। জোর করে করবে নাকি?।

জিমখানায় আমাদের স্টাফ কোয়ার্টারের ভাংচুর ও দখলের ঘটনায় আমরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২টি মামলা করেছি। রেলের জায়গা রেলের নিয়ন্ত্রনেই থাকবে, নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ের এক ইঞ্চি জায়গাও আমরা হাতছাড়া করবো না। গণমাধ্যমকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, বারবার এ স্থানটি খেলার মাঠ হিসেবে পাওয়ার জন্য বরাদ্দ দিতে দরখাস্ত দেয়ার পরও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকার সাড়া না পাওয়ায় জনস্বার্থে এ জমিটি দখল করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে আমরা আইনীভাবে এর মোকাবেলা করবো। এ জমিটিতে একটি খেলার মাঠ করা হবে।

এছাড়া উক্ত স্থানের কোন প্রকার রাজস্ব সরকার পেতো না। এসব কোয়ার্টারে নেশাখোরদের আড্ডা হতো ও নিয়মিত নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। বাসার কোন ভাড়াই সরকার পেতো না। যা আমরা অনেক তদন্ত করে দেখেছি। আইভী বলেন, এটি একটি বস্তি এলাকা ছিল। নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদকের আখড়া ছিল এই জায়গা। এবং যে অগোছালো ছিল সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। সবকিছু মিলিয়ে আমি চেয়েছি এখানে চারুকলা থাকুক, উন্মুক্ত মঞ্চ হোক। আমি ৪০টি চিঠি দিয়েছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বিএনপি সরকার, আওয়ামী লীগ এই তিন সরকারের কাছে। কেউ কথা রাখেনি কেউ সাড়া দেয়নি। যোগাযোগ মন্ত্রী নাজমুল হুদা আসলেন। আমার সকলে মিলে অনুরোধ করলাম।

যে এই জায়গাটা দিতে হবে চারুকলাকে। পাঁচজন এমপি ছিলেন আমি নিজেও স্টেজে বসে ছিলাম। আমি তখন বিরোধী দল অর্থাৎ আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান বাকিরা সবাই ছিল বিএনপির। মঞ্চে উঠে আমি চারুকলার স্বার্থে কথা বলেছি। আমার কথায় খুশী হয়ে তৎকালীন মন্ত্রী বললেন আমি সমস্ত জায়গা দিয়ে দিব পৌরসভার চেয়ারম্যানকে। বক্তব্যে আইভী আরো বলেন, ওয়ন ইলেভেনের সময় যে উপদেষ্টা ছিলেন আমি তার কাছে গেলাম। তিনি ডিজিকে ডাকলেন ডিজি তাকে ভয় দেখালো যে জমি দিলে জেলে যেতে হবে। আমি সেখানেই তাকে বললাম এটা জনগনের স্বার্থের কাজ। কিন্তু আপনি ভয় দেখাচ্ছেন। মনে রাখবেন আমি জীবিত থাকতে এই জায়গা কেউ নিতে পারবে না।

এই কথা বলে আমি বেরিয়ে আসি। তারপর আওয়ামী লীগ সরকারের আরো দুই মন্ত্রী আসলেন আমি তাদের কাছে গেলাম। তাদের কেউ আমলারা কি বুঝালো যে তারাও আমাকে দিল না। কিন্তু রেল মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি বেশিদিন থাকলেন না। যে কারণে আমরা পেলাম না। প্রসঙ্গ টেনে আইভী আরো বলেন, এরপর বস্তি উচ্ছেদ করলাম। আমি বারবার বলেছি আমি তোমাদের জায়গা দিব। কিন্তু বস্তিবাসী আমার কথা শুনে নাই। আমার কথা না শুনে আরেক জনের কথা শুনছে। কিন্তু আমি এখানকার বস্তি উচ্ছেদ করে কোনো অমানবিকত কাজ করি নাই। কারণ এখানে যারাই ছিল সবাই একজন মাসলম্যানকে টাকা দিত। বস্তিবাসীকে যারা নিয়ন্ত্রণ করত তারা ভাড়া নিত।

কেউ ফ্রি থাকে নাই। মাদকের রাজত্ব ছিল। এবং যারা এখানে ছিল গরিবের নাম করে অনেকের এখানে ঘর ছিল ১০/১৫টা করে। আমার কাছে লিস্ট আছে। আমি মন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। তার পরেই আমি এটা ভেঙ্গেছি। কারণ, যদি এখানে ভাড়া দিয়েই থাকে তাহলে অন্য জায়গায় থাকো। যারা আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে আমি তাদেরকে প্রোভাইট করার চেষ্টা করেছি। পাইকপাড়া, ১নং ২নং বাবুরাইল, দেওভোগবাসীর মাধ্যমে মাত্র একদিনের মধ্যে কোনো পুলিশ, র‌্যাব ছাড়াই এই মাদকের আস্তানা আমি উচ্ছেদ করেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here