নারায়ণগঞ্জ আদমজী ইপিজেডে আতংক, কে এই ভাগ্নে মামুন

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আদমজী এলাকার মামুন (৩৪)। পিতার নাম মৃত আতাউর মাস্টার। তবে ভাগ্নে মামুন হিসেবেই তার পরিচয়। বাবার মৃত্যুর কয়েক বছর পর পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা নেমে আসে। অল্প লেখা-পড়ার কারণে কোথাও চাকরী করার সুযোগ পায়নি মামুন। বখাটে যুবকের মতো বিচরন ছিল এলাকায়। কিন্তু এখন সে কোটিপতি। পুরনো বাড়ি কয়েক লাখ টাকা খরচ করে আলিসান বানিয়েছে। রাতারাতি ব্যক্তিগত দুটি গাড়ি, মোটর বাইক, প্রচুর অর্থের মালিক বনে গেছে সে। আদমজী ইপিজেডেও অফিসারদের আনা-নেয়ার কাজে রয়েছে তার কয়েকটি গাড়ি।

শুধু তাই নয়, গার্মেন্টসের মালিকও হয়েছেন। কিন্তু কিভাবে এতো অল্প সময়ে মামুন অর্থ-বিত্তের মালিক হলো তা নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা। নানা প্রশ্ন। তবে অনুন্ধানে জানা গেছে এর নেপথ্যে কাউন্সিলর মামা। মামার আর্শিবাদে আদমজী ইপিজেড এর ভেতর সে স্বঘোষিত কিং বনে গেছে। তার মুভমেন্ট অনেক ফ্যাক্টরী মালিককে আতঙ্কিত করে তুলেছে। ভীতসন্তস্ত অনেক সাধারণ ব্যবসায়ি।

তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের তৎপরতাও ভয়ঙ্করা। মামার শেল্টারে ইপিজেডের অনেক ব্যবসা তার দখলে। এমনকি মামার নাম ব্যবহার করে অল্প টাকায় টেন্ডার (দরপত্র) হাতিয়ে নেয় সে। আবার টেন্ডারেরর অতিরিক্ত মূলবান মালামাল পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্বে। একাধিক মামলার আসামী এই মামুনের টিকিটিও ছুঁতে সাহস পায় না স্থানীয় প্রশাসন। কারণ মামা ছাড়াও তার পেছনে বিশেষ একটি গ্রুপের শেল্টার রয়েছে। মামা আর ওই গ্রুপটির কারণে বেপরোয়া মামুন কাউকে পরোয়া করে না।

অনেকটা জিম্মি ইপিজেডের ফ্যাক্টরী মালিক ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মামুনের বিরুদ্ধে জমি দখল, নারী শ্লীলতাহানিসহ আরো নানা অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মামুন আদমজী বিহারী কলোনীর একটি বড় পুকুর দখল করে মাছ চাষ করছে কয়েক বছর ধরে। মামুনের বাসা গোদনাইল এসওরোডের তেলের ডিপো সংলগ্ন বড় মসজিদের সাথে। মামুনের নানা অপকর্ম নিয়ে জাতীয় দৈনিক কালেরকন্ঠসহ স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল।

তাই এই মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ পিপিএম, বিপিএম (বার) এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ইপিজেডের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আদমজী ইপিজেডে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে রপ্তানীযোগ্য পণ্য বের করার। বিভিন্ন সময় ট্রাকের উপর গার্মেন্টের কাটা কাপড় রেখে অভিনব কৌশলে ওইসব মালামাল পাচারের। বেশকিছু দিন আগে আদমজী ইপিজেড থেকে তিনটি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্টো-ট-১৪-০৯৯২, ঢাকা মেট্টো-ট-১৪-৪১৮৫ ও ঢাকা মেট্টো-ট-১৪-৪৪৪৮) আদমজী ইপিজেডস্থ কাস্টমস গেইটে আসে।

ট্রাকগুলোর উপরে ছিল ঝুটের বস্তা। একই সময় ওই স্থানে আরো ২টি ট্রাক আসে যার একটিতে প্ল্যাস্টিকের ড্রাম ও অন্যটিতে পিতলের বোতাম বোঝাই। নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির মেসার্স মতিউর রহমান ট্টেডার্সের নামে ৫টি ট্রাকে মালামালগুলো ইপিজেডের ইয়েষ্টান ফ্যাক্টরী থেকে থেকে বের করে আনা হয়।

ঝুট ভর্তি ট্রাকগুলো দেখে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে তারা এগুলো তল্লাশী করে ঝুটের নামে বের করে আনা থান কাপড়, ফুলপ্যান্ট খুঁজে পায়। একই সময় অপর দুই ট্রাকে ভ্যাট পরিশোধ করার চেয়েও বেশী মালামাল পায় কাস্টমস কর্মকর্তারা। পরে তারা ট্রাকগুলো না ছেড়ে আটকে দেয়। পরে ওই ট্রাকগুলো ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তল্লাশী করে ঝুটের আড়ালে ৪০ বস্তা থান কাপড়, ৭ হাজার ৯০০ পিছ ফুল প্যান্ট খুঁজে পায়।

একই সময় ভ্যাট পরিশোধ করার চেয়েও বেশী প্ল্যাস্টিকের ড্রাম, পিতলের বোতাম পায় কাস্টমস ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষ। মালামালগুলো আটক করার পর পরই কাস্টমস অফিসে জড়ো হয় তার সহযোগী ভাগ্নে মামুন বাহিনী। এসময় তারা কাস্টমস ও আদমজী ইপিজেডের নিরাপত্তা প্রহরীদের সাথে অসাদাচারণ করে মালামালগুলো নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় বলে নিরাপত্তাপ্রহরীরা উল্লেখ করে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রাকগুলো ছাড়েনি। ওই মালগুলো প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যমানের বলে জানাগেছে।

এর আগেও আদমজী ইপিজেডের ইপিক গার্মেন্ট থেকে ভাগ্নে মামুন শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে রপ্তানীযোগ্য পণ্য (স্টক লট) বের করার সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইপিজেড ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ইপিজেডের এক ট্রাক ঝুট বিক্রি হয় ২০-৩০ হাজার টাকা। সন্ত্রাসীরা তা কিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে। মাসে অন্তত ৫০ গাড়ি ঝুট বিক্রি হয় এখান থেকে। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা আয়। বছরে আয় ৮কোটির বেশি।

ইপিজেডের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধ আর চাঁদাবাজির কারণে আদমজীতে বাণিজ্যিক স্থবিরতা চলছে। ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রিতে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। আয় কমেছে প্রায় অর্ধেক। মামুন ও তাঁর ভাই রহুল ইপিজেডের ভেতরেস মামার শেল্টারে রাজত্ব কায়েম করেছে। এছাড়া ভাগ্নে মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদেশে রয়েছে অর্থ পাচারের অভিযোগ। বিভিন্ন সময় বিদেশ যাত্রাকালে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সে অর্থ পাচারের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তার ঘন ঘন বিদেশ সফর এবং তদন্ত করলে এ সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে ইপিজেডের একাধিক ব্যবসায়ি।

তাছাড়া গেল কয়েক বছরে মামুনের সম্পত্তির পরিমান এতটাই বেড়েছে যে এসও সুমিলপাড়া এলাকায় মতিউর রহমান ট্রেডাস অফিসের পেছনে তিনি গড়ে তুলেছেন অ্যাজওয়া নামে বিশাল গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে পুকুর দখলের অভিযোগ। সিদ্ধিরগঞ্জের শিমুলপাড়ার আদমজী বিহারি ক্যাম্পের পাশেই বিশাল দীঘি। প্রায় দেড়শ’ বিঘা জমির ওপর পুকুরটিতে এক সময় স্থানীয় বাসিন্দারা গোসল করা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজ করতেন।

প্রাকৃতিকভাবে যা মাছ হতো তা তারা ধরেও নিতেন। সেই পুকুরটি গত এক বছর ধরে মতির নিয়ন্ত্রণে। কোনো টেন্ডার ছাড়াই মতির ভাগ্নে মামুন মিয়ার মাধ্যমে দখলে নিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিহারি ক্যাম্পের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘এলাকার মানুষ যে পুকুরটি ব্যবহার করত সেটিই মতির ভাগ্নে জোর করে দখলে নেয়।

পুকুরটির পাশেই অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করে প্রতিটি দোকান ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় পজিশন বিক্রি করা হয়েছে।  সিদ্ধিরগঞ্জ পুল ও মিজমিজি এলাকার একাধিক ব্যবসায়ি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইপিজেড এর অনেক ফ্যাক্টরী মালিক ও ঠিকাদাররা মামুন বাহিনীর কাছে জিম্মি। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, এসওরোড এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এই মামুনের পরিবার কোনোভাবে দিন এনে দিন খেয়ে চলতো। মামা এলাকার নেতা হওয়ার সুবাধে বদলে গেছে তাঁর জীবনধারা।খুব সহজেই বিভিন্ন সেক্টর অবৈধ ভাবে দখল করে বনে গেছে কোটি কোটি টাকার মালিক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি সঠিকভাবে অনুসন্ধান করে তাহলে মামুনের সম্পত্তির পরিমান কোথায় কি, দেশ থেকে কত টাকা পাচার করেছে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

এদিকে নানা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যার পর মামুনের ব্যক্তিগত নাম্বারে ফোন দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তিনি বলেন আমি ফোনে কোন কথা বলবো না।তখন তাকে বলা হয় আপনার বিরুদ্ধে আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, পুকুর দখল করে মাছ চাষসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে চাই। তখন তিনি বলেন, আমি ফোনে কথা বলবো না। প্রয়োজন থাকলে আমার অফিসে এসে কথা বলতে হবে। এ কথা বলেই তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here