ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয়।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ঘটনাবহুল সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে তিন শতাধিক আসনে এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স-এনডিএ। বৃহত্তম দল হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি। হিন্দি ভাষাভাষি বলয়ে ভাল ফল করেছে বিজেপি। গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলোতে নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে তারা। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষ্যা ও উত্তর-পূর্বেও ভালো ফল অর্জন করেছে বিজেপি।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৫৪২ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। নিরাপত্তজনিত কারণে ভোট অনুষ্ঠিত হয়নি ভেলরে। সরকার গড়তে দল বা জোটের প্রয়োজন ছিলো ২৭২ আসন। সেখানে সর্বশেষ তথ্যমতে, ৩৪৯ আসনে বিজয়ী হয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতাসীন বিজেপি জোট। যার মধ্যে বিজেপি এককভাবে অর্জন করেছে ৩০০টির বেশি আসন।

সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি—এক বিশেষ গণমাধ্যম পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট পেয়েছিল ৩৩৬টি আসন। আর ২০১৯ সালে তারা পেয়েছে ৩৪৯টি আসন। অপরদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সার্বিক বিবেচনায় ফল খারাপ করলেও ২০১৪ সালের তুলনায় ফল ভালো করেছে। ২০১৪ সালের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে তারা পেয়েছিলো ৫৯টি আসন আর এবার তাদের অর্জন ৯১টি। ২০১৪ সালে বিজেপি এককভাবে অর্জন করেছিল ২৮২টি আসন। সদ্য নির্বাচনে তারা পেয়েছে ৩০১টি আসন। যা গতবারের চেয়ে ১৯টি আসন বেশি।

গত ২০ মে লোকসভা নির্বাচনের ৭ দফার ভোটের শেষ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন জরিপ সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছিলো, আবারও দিল্লির মসনদে বসতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি জোট। তারা আসন পেতে পারে তিনশ’রও বেশি। প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের ঘরে আসতে পারে দেড়শ’র কিছু বেশি আসন। আর পশ্চিমবঙ্গে এগিয়ে থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সেখানে নিজেদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধির নজির গড়তে পারে বিজেপি জোট। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দুর্গে হানা দিয়েছে গেরুয়া সেনারা। সর্বশেষ তথ্যানুসারে বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২৪টি আসন। বিজেপি দখলে নিয়েছে ১৮টি আসন।

একটি আন্তর্জাতিক ও তিনটি স্থানীয় সংস্থা এই বুথ ফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী তিনশ’র বেশি আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। আর প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট দেড়শ’রও বেশি আসন পেতে পারে বলে যে ধারণা করা হয়েছিলো, নির্বাচনি ফলাফলে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।

এবার ভোট হয়েছে ১১, ১৮, ২৩ ও ২৯ এপ্রিল এবং ৬, ১২ ও ১৯ মে। ভারতের প্রথম নির্বাচন হয়েছিলো ১৯৫১-৫২ সালে এবং সেটি শেষ করতে সময় লেগেছিলো তিন মাস। ১৯৬২ থেকে ৮৯ সালের মধ্যকার নির্বাচনগুলোতে সময় লেগেছিলো ৪-১০দিন। সবচেয়ে কম চারদিন সময় লেগেছিলো ১৯৮০ সালের নির্বাচনে।

বৃহস্পতিবার ভোট গণনায় দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস পরিবারের প্রতিনিধি অভিজাত রাহুল গান্ধীর পরিবর্তে ‘চৌকিদার’ মোদীতেই ভরসা খুঁজেছেন ভারতের প্রায় ৯০ কোটি ভোটার। এরইমধ্যে হার মেনে নিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। বললেন জনতার রায় শিরোধার্য, মোদী ও বিজেপিকে অভিনন্দন। কংগ্রেসের একনিষ্ট যে কর্মীরা ভোটের সময় দলের জন্য প্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন, তাদের শুভেচ্ছা জানাই। আম জনতা স্পস্ট মতামত জানিয়েছে, সেই রায়কে স্বাগত।

প্রাপ্ত শেষ খবরে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে ২৪ আসনে পেয়েছে মমতার তৃণমূল। আর বিজেপি পেয়েছে ১৮ আসন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির আসন ছিল মাত্র দুইটি। সেখানে এবারের নির্বাচনে বাংলায় রীতিমতো গেরুয়া বিপ্লব ঘটেছে। এ রাজ্যে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাম দল একটি আসনও পায়নি। অর্থাৎ পুরোপুরি বাম শূন্য হতে চলেছে এ রাজ্যটি।

এবারের নির্বাচনে বিরোধীদের কাছে কার্যত তুরুপের তাস ছিল উত্তরপ্রদেশ। কারণ আসন সংখ্যার নিরিখে ভারতের সবচেয়ে বড় এই রাজ্যে দীর্ঘ দিন বাদে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি বহুজন সমাজ পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি এক হয়ে ভোটে লড়েছিল। সঙ্গে ছিল অজিত সিংহের আরএলডি-ও। কিন্তু তাতেও ফল আশানুরূপ হয়নি। থামানো যায়নি গেরুয়া ঝড়। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি ৭১টি পেয়েছিল। এবার তারা পেয়েছে ৫০টি আসন।

বিরোধী মহাজোটের নেতৃত্ব দেয়া চন্দ্রবাবু নাইডু নিজের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশেই রীতিমত ধরাশায়ী। ভোটের ফলের প্রবণতায় রাজ্যের ২৫ আসনের মধ্যে ২০টিরও বেশি আসনে পাচ্ছে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস। প্রতিবেশী রাজ্য তেলঙ্গানাতেও ভাল ফল করেছে বিজেপি।

মাত্র কয়েক মাস আগেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগড়ের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসেছে কংগ্রেস। ধারণা করা হচ্ছিলো বিধানসভা ভোটের প্রভাব থাকবে লোকসভাতেও। বিরোধী শিবিরের আশা ছিল, এই তিন রাজ্যে বিজেপির ফল ব্যাপক খারাপ হবে। কিন্তু তিন রাজ্যে কার্যত ২০১৪ সালের ফলের চেয়ে খুব একটা হেরফের হয়নি।

দেশের ইতিহাসে মোদীই হতে চলেছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হলেন। অর্থাৎ কোনও জোট বা শরিক দলের সাহায্য ছাড়াই সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে গেল কোনও দল। এর আগে জওহরলাল নেহরু পর পর তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের হয়ে। ১৯৬৭ এবং ১৯৭২ সালে পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এই দু’বারও একাই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here